পুরস্কার এনে দেওয়া ‘মানিক’ এখন হামিদার বোঝা

কোরবানির গরু
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়নের ভেঙ্গুলিয়া গ্রামের হামিদা ‘মানিককে’ বড় করে তুলেছেন ভালো দামের আশায়। ছবি: স্টার

প্রায় ৬ বছর ধরে পরম যত্নে লালনপালন করা 'মানিককে' নিয়ে কলেজছাত্রী হামিদার দুশ্চিন্তার শেষ নেই। টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়নের ভেঙ্গুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা হামিদা 'মানিককে' বড় করে তুলেছেন ভালো দাম পাওয়ার আশায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেড় টনের বিশালাকৃতির এই গরুটির ক্রেতা পাওয়া যায়নি।

এ অবস্থায় মানিকের জন্য প্রতিদিনের খাবার জোটাতেই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন হামিদা।

হামিদার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভালো মুনাফার আশায় তিনি একইসঙ্গে দুটি ক্রস জাতের গরু লালনপালন করতে শুরু করেন। এর মধ্যে গত কোরবানির ঈদে রতন নামের গরুটিকে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন। সে দফায় মানিকের জন্য কোনো ক্রেতা পাওয়া যায়নি।

হামিদা বলেন, 'গতবার অনেক খরচাপাতি কইরা ঢাকার হাটে গরু দুইডা উঠাইছিলাম। একটারে পানির দামে বেইচা সেই ট্যাকা দিয়া আরেকটারে পালতেসি।'

হামিদার ভাষ্য, মানিকের খাবার ও লালনপালনের পেছনে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার টাকার মতো খরচ হয়। এই খরচ জোটানো তার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছে না।

বিশালাকৃতির এই গরুটি দেখতে প্রতিদিন এলাকার বাইরে থেকেও অনেক মানুষ হামিদার বাড়িতে আসে। তার দাবি মানিকের ওজন ২ টন অর্থাৎ ২ হাজার কেজির কাছাকাছি। তবে উপজেলা কর্মকর্তাদের ধারণা, গরুটির ওজন দেড় টনের মতো।

এ বিষয়ে দেলদুয়ার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বাহাউদ্দিন সরোয়ার রেজভী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওজন যাই হোক, গরুটি সত্যিই বিশাল আকারের। আমরা এ বছরও প্রাণিসম্পদ মেলায় গরুটির জন্য উদ্যোক্তা হামিদাকে প্রথম পুরস্কার দিয়েছি।'

কোরবানির গরু
অনেক যত্নে লালন-পালন করা ‘মানিক’কে নিয়ে বিপাকে হামিদা। ছবি: স্টার

এই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরও বলেন, 'বিভিন্ন দিক বিবেচনায় আমরা সাধারণত গরু এত বড় করার ব্যাপারে উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দেই না। হামিদাকে আমি ২ বছর আগেই গরুটি বিক্রি করে দিতে বলেছিলাম।'

এ ব্যাপারে হামিদার ভাষ্য, 'পানির দামে তো আর বেইচা দিতে পারি না। ম্যালা টাকা খরচ করছি ওর পেছনে। আশা ছিল ২টা গরু বেইচা সেই ট্যাকা দিয়া একটা গাই গরুর ফার্ম করুম। কিন্তু মাইনষে তো দামই দিতে চায় না।'

অবশ্য উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন, তারাও হামিদার গরুটির জন্য ক্রেতা খুঁজছেন। গত বছর গরুটি বেঙ্গল মিট কোম্পানির কোছে কেজি দরে বিক্রির পরামর্শও দিয়েছিলেন তারা। কিন্তু হামিদা তাতে রাজি হননি।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রেজভী বলেন, 'জেলায় এত বড় গরুর ক্রেতা নেই। এটাকে আবার ঢাকার কোরবানির হাটে উঠিয়ে দেখতে হবে। দাম যাই পাওয়া যাক বিক্রি করে দিতে হবে।'

তবে গত বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে এবার আর ঢাকার হাটে যেতে যাচ্ছেন না হামিদা। বলছেন, 'এইবার আর মানিকরে রাখার উপায় নাই। আমি ফতুর হইয়া গেছি। গরুডা বেচনই লাগবো। যারা দয়া কইরা নিবো, তাগো বাড়িতে আমার মানিকরে আমি পৌঁছাইয়া দিয়া আসমু।'

Comments

The Daily Star  | English
International Crimes Tribunal 2 formed

Govt issues gazette notification allowing ICT to try political parties

The new provisions, published in the Bangladesh Gazette, introduce key definitions and enforcement measures that could reshape judicial proceedings under the tribunals

2h ago