রাজশাহী সিটি নির্বাচন

টাকাওয়ালা প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে: সুজন

টাকাওয়ালা প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে: সুজন

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ উপার্জনকারী হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। ২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় তার বাৎসরিক আয় ছিল ১ কোটি টাকার নিচে। কিন্তু, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লিটনের গত ৫ বছরে বাৎসরিক আয় ৬ কোটি টাকার বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
  
তবে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সম্পদ অর্জনে লিটনকে ছাড়িয়ে গেছেন ২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী। এবারের নির্বাচনে শাহাদাত আলী শাহু ও রজব আলী সর্বোচ্চ সম্পদশালী প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম।
 
গত শনিবার রাজশাহীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই বিশ্লেষণ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার।

বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২১ জুনের নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় লিটন তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৬ কোটি ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। এ সময় তার সম্পদ দেখিয়েছেন, ৭ কোটি ৯০ লাখ ৪৪ হাজার ৮৯ টাকা মূল্যমানের। 

২০১৮ সালে তার বার্ষিক আয় ছিল ৭৮ লাখ ৩২ হাজার ২০৮ টাকা।

অন্যদিকে বর্তমান কাউন্সিলর প্রার্থী শাহাদাত আলী শাহু বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ১ কোটি ১৮ লাখ ২৮ হাজার ৬৯৯ টাকা। তিনি এ সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮ কোটি ৬৪ লাখ ২৬ হাজার ৪১২ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন।

অপর কাউন্সিলর প্রার্থী রজব আলী বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৭৪৫ টাকা এবং তিনি ৮ কোটি ৫৩ লাখ ৪ হাজার ২৯৮ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় লিটন, শাহু ও রজবসহ কোনো প্রার্থীরই বার্ষিক আয় ১ কোটি টাকার বেশি ছিল না।

অন্যান্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুর্শিদ আলম বার্ষিক আয় দেখান ১২ লাখ টাকা, যা লিটনের আয়ের প্রায় ৬৬ গুণ কম। 

জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম স্বপন ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং জাকের পার্টির লতিফ আনোয়ার ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন।

বিশ্লেষণে আক্তারুজ্জামান, জানে আলম খান, শরিফুল ইসলাম বাবুসহ বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীর ৬ অংকের আয়ের কথাও উল্লেখ করা হয়।

৬ অংকের বেশি উপার্জনকারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনের প্রার্থীরাও আছেন। তাদের মধ্যে শামসুন্নাহার, বিলকিস বানু, ফেরদৌসী, সিরিন আরা খাতুন ও মমতাজ মহল অন্যতম।

সম্পদশালী কাউন্সিলর প্রার্থীদের তালিকায় আবু বক্কর কিনু, আব্বাস আলী সরদার ও নাজমা খাতুনের নাম রয়েছে।

প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মোট ১৬২ জন প্রার্থীর মধ্যে ১২৪ জনের বার্ষিক আয় ৫ লাখ টাকার কম। ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় স্বল্পআয়ের প্রার্থীর হার কমেছে। ২০১৮ সালে এই হার  ৮২ দশমিক ০২ শতাংশ ছিল, এটি এখন ৭৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
 
সুজনের বিশ্লেষণে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, টাকাওয়ালা প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অর্থের প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ উত্থাপন করে।

তবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সম্পদ ঘোষণার প্রক্রিয়াটি ত্রুটিপূর্ণ এবং প্রার্থীদের প্রকৃত সম্পদ তাদের হলফনামায় যা দেখানো হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশ্লেষণ দেখা যায়, ঋণের বোঝায় জর্জরিত প্রার্থীদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।

মেয়র প্রার্থী লিটনের ঋণ ছিল ২০ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং সংরক্ষিত নারী আসনসহ বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থীর ঋণ আছে ১ কোটি টাকার ওপরে।

আগের নির্বাচনের তুলনায় এবারে ফৌজদারি মামলার অভিযুক্ত প্রার্থীর সংখ্যা কমেছে। বর্তমানে ২৭ শতাংশ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে, যা ২০১৮ সালে ছিল ৩১ শতাংশ।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৬২ জন প্রার্থীর মধ্যে অন্তত ৪৪  জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। উল্লেখ্য, ৪ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে শুধু লিটনের ইতোপূর্বে ফৌজদারি মামলা ছিল, যা পরবর্তীতে রাষ্ট্রপক্ষ প্রত্যাহার করে নেয়।

বিশ্লেষণটি প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতাও উল্লখ করেছে। উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীর সংখ্যা ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। তবে এসএসসি এবং এর চেয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের হার ১৬২ জনের মধ্যে ৮৫ জনের।

মাধ্যমিক স্কুল শেষ না করা প্রার্থীর সংখ্যা ৫৬ জন এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী প্রার্থী রয়েছেন ৪৮ জন।

সংবাদ সম্মেলনে সুজনের সমন্বয়ক দিলীপ কুমার রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Agri budget not enough to ensure food security: experts

The government has proposed a 3.55 percent rise in the budget allocation for agriculture, food, livestock and fisheries in the next fiscal year, setting aside Tk 39,620 crore..But agro-economists say the increase is far from sufficient to ensure the country’s long-term food security..<p

19m ago