আর্থিক-প্রশাসনিক স্বাধীনতা হারালো পিপিপি কর্তৃপক্ষ

সংসদ
জাতীয় সংসদ ভবন। স্টার ফাইল ফটো

আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগসহ কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা হারিয়েছে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) কর্তৃপক্ষ। 

এমনকি পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষমতাও সরকারের হাতে নেওয়া হয়েছে।

এসব সংশোধনী এনে আজ বুধবার জাতীয় সংসদে 'বাংলাদেশ সরকারি–বেসরকারি অংশীদারিত্ব (সংশোধন) বিল–২০২৩' পাস হয়েছে। 

বিরোধী দলের একাধিক সংসদ সদস্য পিপিপি কর্তৃপক্ষের স্বাধীনতা খর্বের সমালোচনা করেন।

সংসদীয় কাজে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন।

বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, 'এই আইন সংশোধন করে পিপিপি কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা খর্ব করা হলো। পিপিপির গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী। তারপরও হঠাৎ কেন এটা সরকারের কাছে নিতে হচ্ছে?'

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, 'পিপিপিতে সাধারণ ব্যবসায়ীরা কেউ ঢুকতে পারেননি। যারা ঢুকেছেন সবাই বড় ব্যবসায়ী।'

এখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এই আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বড় শিল্প স্থাপিত হয় না।'

আস্থাভাজন ছাড়া কেউ কি কোনো বড় প্রকল্প পায় এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, 'পিপিপি কর্তৃপক্ষের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো হয়েছে। এতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আরও বাড়বে।'

গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, 'পিপিপি কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা খর্ব করে সরকারের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। এখন তাদের আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনুমতি নিতে হবে। পিপিপি কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনের একটি ইউনিট, তাহলে কেন এখানে সরকারের অনুমোদন নিতে হবে?'

'এভাবে সংশোধন করা হলে বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হবেন' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'পিপিপিতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে বিদ্যুৎখাতে। এখানে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে। তাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ইনডেমনিটির মতো আইন করা হয়েছে।'

সমালোচনার জবাবে মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, 'একটা কর্তৃপক্ষ স্বাধীন হতে পারে না।'

কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা কমে যাওয়ার বিষয়টি সমর্থন করে মন্ত্রী বলেন, 'আমরা আশা করেছিলাম বিরোধী দল এ বিষয়টির প্রশংসা করবে যে সরকারের কাছে ক্ষমতা, কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমতা নয়।  সেটা না করে তারা বলছেন কর্তৃপক্ষকেই ক্ষমতাবান করতে হবে এবং সরকারকে ক্ষমতাহীন করতে হবে। এটা পার্লামেন্টারি সিস্টেমে হয় না। 

'সরকার চলে রুলস অফ বিজনেস অনুযায়ী। সরকারকে এড়িয়ে কোনো কর্তৃপক্ষকে চূড়ান্ত ক্ষমতা বা স্বাধীনতা দেওয়া যায় না বলেই এ সংশোধনী আনা হয়েছে। এটি অত্যন্ত সময় উপযোগী,' যোগ করেন তিনি।

বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।

আইনের ৪ নম্বর ধারার ৩ উপধারায় এতদিন বলা ছিল, আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রয়োগ ও কার্যাবলি সম্পাদনের ক্ষেত্রে পিপিপি কর্তৃপক্ষ নিরপেক্ষ ও স্বাধীন হবে। এখানে সংশোধনী এনে 'স্বাধীন' শব্দটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।

এতদিন আইনে পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষমতা বোর্ড অব গভর্নরসের হাতে ছিল। এখানে সংশোধন করে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ করবে সরকার।

বিদ্যমান আইনে পিপিপি কর্তৃপক্ষের সাংগঠনিক কাঠামো অনুমোদনের ক্ষমতা বোর্ড অব গভর্নরসের হাতে ছিল। এটি পরিবর্তন করে এই ক্ষমতা সরকারের হাতে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে বিলে।

Comments

The Daily Star  | English

Made with US cotton? Pay less at US customs

Bangladesh is likely to benefit from reduced US tariffs on garment exports under a new clause that incentivises the use of American materials, potentially enhancing the country’s competitiveness in the US market.

29m ago