‘আমার টপিকটা এখানেই শেষ করে দেন’

Tamim Iqbal
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণায় আবেগাক্রান্ত তামিম ইকবাল। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

তামিম ইকবালের কাজীর দেউড়ির পৈত্রিক নিবাস থেকে হাঁটা দূরত্বে হোটেল টাওয়ার ইন। দুপুর দেড়টায় সময় নির্ধারণ করলেও তার প্রায় মিনিট বিশেক আগে দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে নিয়ে কালো টি-শার্ট পরে তিনি সেখানে হাজির। অসংখ্য ক্যামেরা আর গণমাধ্যম কর্মীদের ভিড় ঠেলে চেয়ারে বসে দৃষ্টি যেন তার শূন্যে। চোখ ছলছল, আবেগের স্রোত তখনই টের পাওয়া যাচ্ছিল। আঁচ পাওয়া যাচ্ছিল বড় ঘোষণাই আসতে যাচ্ছে। সেই বড় ঘোষণার দিতে গিয়ে গলা ধরে এলো তার বারবার, কান্না লুকাতে পারলে না। চোখ মুছে ধরা গলাতেই বলে দিলেন বিদায়। বললেন বেশ কিছু কথা, জানালেন আরও অনেক কিছু বলার থাকলেও সেসব বলার অবস্থায় নেই তিনি। 

তামিম অবসরের ঘোষণা দিতে গিয়ে ফিরে গেলেন তার শৈশবে। তার প্রয়াত বাবা প্রয়াত ইকবাল খান স্বপ্নের কথা বলতে গিয়েই আবেগ কাবু করে ফেলল তাকে। বিপুল মানুষে ভরপুর হলরুম তখন নিস্তব্ধ।

তামিম লিখিত কোন বিবৃতি পড়েননি, লিখিত একটা বিবৃতি তৈরিও ছিল হয়ত। কিন্তু নিজের ভেতরের আবেগ আনুষ্ঠানিক বার্তা বোঝানো কঠিন। তামিমের বক্তব্যের পুরোটা থাকল দ্য ডেইলি স্টারের পাঠকের জন্য,

'আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালের ম্যাচটিই আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়। অনেক দিন ধরেই আমি ভাবছিলাম। ভিন্ন ভিন্ন কারণ আছে, আমার মনে হয় না বলার দরকার আছে। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছি এটা নিয়ে। আমার মনে হয়েছে এটাই ঠিক সময়। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি। আমি সবাইকে ধন্যবাদ দিব।'

'আমি সব সময় একটা কথা বলেছি যে আমি খেলেছি... (কান্নার পর থেমে গেলেন)। আমি  ক্রিকেট খেলি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য (আবার কান্না)... (আরও কিছুক্ষণ থেমে)  কাজেই আমি নিশ্চিত না আমি তাকে কতটা গর্বিত করতে পেরেছি পুরো ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। আরও অনেকেই আছে যাদের ধন্যবাদ দিতে হবে। আমার সবচেয়ে ছোট চাচা যিনি ইন্তেকাল করেছেন, আকবর খান, উনার হাত ধরেই আসলে আমার প্রথম ক্রিকেট বলের টুর্নামেন্ট খেলা। আমি তাকে ধন্যবাদ দেই।'

Tamim Iqbal
ছবি: স্টার

'এই এমএ আজিজে তপন দা নামে একজন কোচ আছেন যার কাছে আমি ছোটবেলা থেকে... (আবার আবেগে ভেঙে পড়ে নীরব।)। যার কাছে ছোটবেলা থেকে আমি অনুশীলন করেছি। তাকে ধন্যবাদ দেই।'

'আমি ক্যারিয়ারে যত খেলোয়াড়ের সঙ্গে খেলেছি সবাইকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। যাদের সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৩, ১৭ বা নাইনটিন, এইটেন,প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় দল যাদের সঙ্গে খেলেছি সবাইকে ধন্যবাদ দেই। বিশেষ করে জাতীয় দলে যারা আমার সতীর্থ ছিলেন তাদের সবাইকে।'

'ক্রিকেট বোর্ড অবশ্যই (ধন্যবাদ পাবে)। তারা আমাকে সুযোগ দিয়েছেন দেশকে লম্বা সময় প্রতিনিধিত্ব করার। এবং সব অধিনায়কদের বাংলাদেশের। আসলে আমার খুব বেশি কিছু বলার নেই। একটা জিনিস বলব আমি আমার সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করেছি, আমি সেরাটা দিত চেয়েছে (আবার গলা ধরে এলো)। আমি হয়ত নট গুড এনাফ, অথবা গুড এনাফ। কিন্তু যখনই মাঠে ছিলাম আমি শতভাগ দিতে চেয়েছি। আমি অনেক কিছু বলতে চাই আসলে। আপনারা দেখছেন আমি একদম কথা বলার অবস্থায় নেই। কিন্তু আমি আশা করি আপনারা পরিস্থিতিকে সম্মান করবেন। (আবার কান্না)। এটা কথা বলার মতন সহজ পরিস্থিতি না। আমি এত বছর ধরে খেলেছি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর সহজ না। এত অল্প সময়ের নোটিসে আপনাদের ডাকা হইছে। আমি মিডিয়ার সবাইকে ধন্যবাদ দিচ্ছি।'

'আমি একটা অনুরোধ করব, যারা সামনে ক্রিকেট খেলবে যাদের কথা আপনারা ভালো লিখবেন, খারাপ লিখবেন যাইহোক। ক্রিকেটে যেন থাকেন। সীমার বাইরে যাবেন না। ভালো লিখলে ভাল লিখবেন, খারাপ খেললে সমালোচনা করবেন। আপনারা সবাই বুঝতে পারেন যা মাঝে মাঝে সীমা অতিক্রম হয়ে যায়। যারা ক্রিকেট খেলছে এখন এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বছর বিশ্বকাপের জন্য। আমি আশা করি আপনারা দলের সদস্যের মত থাকবেন, সমর্থন দিবেন।'

'আমি আবারও বলি ক্রিকেট খেলা শুরু করেছি বাবার স্বপ্ন  পূরণের জন্য। কতটা করতে পেরেছি জানি না। হয়ত আরও অনেককে ধন্যবাদ দেয়ার ছিল, যদি নাম ভুলে গেলে ক্ষমা চাই। আমার মা, তাকে ভুলব কি করে!  আমার ভাই, আমার স্ত্রী, আমার দুই সন্তান। আমার এই ভ্রমণে তারা অনেক ভুগেছে, আবার আনন্দের সময়ও ছিল। আমি তাদের ধন্যবাদ দেই। এরচেয়ে বেশি কিছু বলার নাই। একটাই বলব আমার টপিকটা এখানেই শেষ করে দেন। ইটস এ দ্য এন্ড অন্তত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য। এটাকে নিয়ে আর বেশি গুঁতাগুঁতি (ঘাটাঘাটি) কইরেন না। আমি সব সময় বলেছি দল সব সময় যেকোনো ব্যক্তির চেয়ে বড়। দুই ম্যাচ আছে এই সিরিজের আশা করি দল জিতবে। সবাইকে ধন্যবাদ।'

Comments

The Daily Star  | English

How the US has shifted military jets and ships in the Middle East

As America’s national security leaders discuss the next steps, the Pentagon has moved to ensure that its troops and bases in the region are protected.

31m ago