তামিমের অবসর নিয়ে নাজমুল আবেদিন ফাহিম

‘একদিক থেকে তামিমের জন্য রিলিফ, ও নিজেকে রক্ষা করল’

nazmul abedin fahim with tamim iqbal

ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে আগের দিনও যদি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সিরিজের মাঝপথে তিনি আচমকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই ছেড়ে দিলেন। বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের মতো এটা ধাক্কা হয়ে এসেছে সংশ্লিষ্ট সবার কাছেই। তবে অপ্রত্যাশিত এই সিদ্ধান্তেও একটা ভালো দিক দেখছেন কোচ ও বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদিন ফাহিম।

বুধবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডের দিক থেকেই তামিমকে নিয়ে হাওয়া ছিল উত্তপ্ত। শতভাগ ফিট না থেকেও খেলা নিয়ে তার মন্তব্যের জেরে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের প্রতিক্রিয়া চাউর হলে ম্যাচ জুড়েই নজর ছিল তার দিকে।

বাংলাদেশ বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচ হেরে যাওয়া ও ব্যাট হাতে তামিমের ব্যর্থতা মিলিয়ে পরিস্থিতি হয়ে যায় আরও নাজুক। মধ্যরাতেই সাংবাদিকদের বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করার কথা জানান তিনি। সেই সংবাদ সম্মেলনেই আসে তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা।

তামিম যদিও বলছেন, সরে যাওয়ার কথা কয়েকদিন ধরেই ভাবছিলেন তিনি। তবে তাকে কাছ থেকে চেনা ফাহিম একদম সরলভাবে দেখতে পারছেন না এই পরিস্থিতি,  'এটা তো সবার কাছেই অপ্রত্যাশিত। ও অধিনায়ক, একটা সিরিজ খেলছে। এটা ধরে নেওয়া স্বাভাবিক যদি সে নিজে থেকে অবসরের একটা চিন্তা ভাবনা করত এটা সিরিজ শেষ হলেই হতো। ওটাই স্বাভাবিক হতো। কিন্তু একটা ম্যাচের পরে ঘোষণা দেওয়া। সে যে খুশি হয়ে এটা করেছে এমনটা মনে করার কারণ নেই। ও যখন এতটা আবেগী হয়ে পড়ল এই জায়গায়। একটা তো সমাপ্তি। এই কারণেই খুব দুঃখজনক। এত উজ্জ্বল একটা ক্যারিয়ার। এতদিন বাংলাদেশ ক্রিকেটকে সেবা দেওয়ার পরে হাসিমুখে বিদায় নিতে না পারা দুঃখজনক।'

দেশের অভিজ্ঞ এই ক্রিকেট কোচের মতে খেলোয়াড় ও সংগঠকদের মধ্যে যেমন পারষ্পারিক সম্মানের সম্পর্ক থাকা উচিত, সেটা নেই। এই কারণেই তারকাদের মধুর সমাপ্তি হচ্ছে না,  'আমার মনে হয় যদি গভীরে গিয়ে চিন্তা করি যারা খেলে এবং খেলা পরিচালনা করার দায়িত্বে থাকে এদের পারষ্পরিক সম্পর্কটা খুব রেসপেক্টফুল না। যখন ভালো খেলে সবাই খুশি থাকে এটা ঠিক। যখন ফর্ম খারাপ হয়, পারফরম্যান্স খারাপ হয় তখন বোধহয় সবার আসল ফিলিংসগুলো বা আসল দৃষ্টিভঙ্গি দেখি। এটা অনেক খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে দেখেছি। অনেককে আমরা এক সময় মাথায় তুলে রেখেছি, তাদেরই একটু সময় লাগেনি সমালোচনা করতে। অনেক উদাহরণ আছে। এটা সাংস্কৃতিক ব্যাপার আমাদের। খেলোয়াড়দের সঙ্গে ম্যানেজমেন্ট বা স্টেক হোল্ডারদের যে রেসপেক্টফুল সম্পর্ক থাকা উচিত ওটা আসলে বোধহয় নেই।'

ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপে যাওয়া অনেকটা নিশ্চিতই মনে  ছিল তামিমের। বিশ্বকাপের দলও গুছিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। তবে নিজের ব্যাটে রান খরা, ফিটনেসের ঘাটতি কয়েকদিন ধরেই তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছিল। চারপাশে ছড়িয়ে পড়া তেতো কথাও হয়ত শুনতে পাচ্ছিলেন তিনি। ফাহিম মনে করেন কোণঠাসা হয়ে পড়া তামিম সরে গিয়ে বরং নিজেকে রক্ষা করেছেন,  'আশেপাশের কথা, বিশেষ করে ঘরের মানুষের কথা ইট ওয়াজ টু মাচ ফর হিম। তাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। সব মিলিয়ে সে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। এটা একদিক থেকে তার জন্য ভালো হয়েছে। কারণ এটার মধ্য দিয়ে যদি সে আর কিছুদিন যেত সেটা ওর জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর হতো। একদিক থেকে তার জন্য রিলিফ। ও নিজেকে রক্ষা করল এরমধ্যে দিয়ে।'

তবে বিশ্বকাপের তিন মাস আগে নিয়মিত অধিনায়ক সরে দাঁড়ালেও এর প্রভাব খুব বেশি পড়বে বলে মনে করেন না ফাহিম,  'আমরা তো আর অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মত না। আমরা হুট করে এদিক দিয়ে ওদিক দিয়ে যেকোনো জিনিস করে ফেলি। আমাদের দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার অভ্যাসও নাই, সেই কালচারও নাই। আমরা হঠাৎ হঠাৎ করে অনেক কিছু করে ফেলতে পারি। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। আলোচনা হবে, কেউ একজন অধিনায়ক হবে। তার একটা চিন্তা থাকবে। সেটা নিয়েই আমরা কাজ শুরু করে দেব। তিন মাসের মধ্যে যা হয় সেটা নিয়েই আমরা বিশ্বকাপে ঝাঁপিয়ে পড়ব। আমার মনে হয় না এটা নিয়ে কেউ দুশ্চিন্তা করবে বা করছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Shutdown is another economic peril

Vowing to continue an indefinite work stoppage and stage a protest march on tax offices, the NBR Reform Unity Council has intensified its demands

7h ago