বিদেশে উচ্চশিক্ষা: অর্থ সাশ্রয়ের ১০ উপায়

বিদেশে উচ্চশিক্ষা: অর্থ সাশ্রয়ের ১০ উপায়
ছবি: সংগৃহীত

উচ্চশিক্ষা অর্জনের স্বপ্ন পূরণে বিদেশে পাড়ি জমানোর ইচ্ছা হয় অনেকের, কিন্তু অর্থের কথা চিন্তা করলেই রাজ্যের চিন্তা ভর করে মাথায়। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীরা যেখানে টিউশন ফি'র খরচ জোগাতে হিমশিম খান, সেখানে খাবার, বাসস্থান, ভ্রমণ, বিনোদনের ব্যয় বহন করা বেশ কঠিন হয়ে যায়। 

তবে বেশ কিছু টিপস জানা থাকলে বিদেশে পড়াকালীন অর্থ সাশ্রয় করা যাবে। 

অফ-ক্যাম্পাসে থাকা এবং রুম শেয়ার করা 

টিউশন ফি'র পরে ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি খরচ হয় বাসস্থানে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশিরভাগ শহরাঞ্চলে হওয়ায় সেখানে বাড়ি ভাড়াও বেশি হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে অফ ক্যাম্পাস বা ক্যাম্পাসের বাইরে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি কোথাও থাকার ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো হয়। এ ছাড়া এক বা দুজন রুমমেট পেলে খরচ শেয়ারের সুবিধা হয়। সবচেয়ে ভালো হয়, যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডর্ম বা হোস্টেলে থাকা যায়। এ ছাড়া বিদেশে পড়ার ক্ষেত্রে কিছু এজেন্সি বাজেটের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বাসস্থান খুঁজে পেতে সহায়তা করে, তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যেতে পারে। 

বুঝেশুনে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা 

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা বেশ সুবিধার মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। সত্যি বলতে, এখন পণ্য কিনে পরে পরিশোধ করার বিষয়টিই অনেকটা ফাঁদে পড়ার মতো। কেন না এতে অতিরিক্ত ব্যয় যেমন হয়, তেমনি ভবিষ্যতে ঋণের পরিমাণও বেড়ে যায়। এ জন্য ক্রেডিট কার্ড জরুরি অবস্থায় ব্যবহার করা উচিত। 

তবে জরিমানা এবং সুদের চার্জ এড়াতে অর্থ যথাসময়ে ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। বিমান ভাড়ার মতো যেসব ক্ষেত্রে পয়েন্ট পাওয়া যায়, সেসব ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা যেতে পারে। পণ্য ক্রয়ের সময় জমে থাকা পয়েন্ট রিডিম করলে অর্থ সাশ্রয় হবে। 

স্টুডেন্ট ডিসকাউন্টের সুবিধা নেওয়া 

ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট আইডি কার্ড থাকলে  ভর্তি কার্যক্রম, মেট্রো পরিষেবা, জাদুঘর পরিদর্শন করা, কেনাকাটা করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে আগে থেকে জেনে নিলে কোন ক্ষেত্রে কী পরিমাণ অর্থ বাঁচবে তা ধারণা করা সহজ হবে। এ ছাড়া স্টুডেন্ট আইডি কার্ড বিমা পরিশোধে ডিসকাউন্ট পেতে সাহায্য করতে পারে। ডিসকাউন্ট সুবিধা সর্বোত্তম ব্যবহার করতে দ্বিধা না করাই শ্রেয়।  

রান্না শেখা 

নিজের খাবার রান্না করতে পারা জীবনের প্রয়োজনীয় দক্ষতার মধ্যে অন্যতম। বিদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে না নিতে পারলে বা খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে অভ্যস্ত না হলে রান্না না শিখে উপায় নেই। শুধু তাই নয়, রান্না করলে কর্মব্যস্তময় দিনশেষে মানসিক প্রশান্তিও আসবে। তা ছাড়া নিজের খাবার রান্না করলে শারীরিক সুস্থতা এবং ফিটনেসের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে কোন বেলায় কী খাবেন তার আগাম পরিকল্পনা করে ডিসকাউন্টে বাজার করতে পারলে সুবিধা হবে। এতে অর্থ সাশ্রয়ও হবে। 

বিনামূল্যে বিনোদন 

বিদেশে পড়তে গেলে নতুন নতুন জায়গা ঘুরে দেখার ইচ্ছা হওয়াটা স্বাভাবিক। বেশ কয়েকটি দেশ এ জন্যই পর্যটন খাতকে ঢেলে সাজিয়েছে। কিন্তু পড়াশোনার ব্যয় সামলে বিনোদনের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ নাও থাকতে পারে। তাই বলে কি ইচ্ছা পূরণ হবে না? বিদেশের বড় শহরগুলোতে বিনামূল্যে বিনোদনের অফুরন্ত সুযোগ রয়েছে। যেখানে অর্থ খরচ না করেই জাদুঘর, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং স্থানীয় পার্কে অবসর সময় কাটানো যায়।

বাৎসরিক ছাড়ে কেনাকাটা

নতুন জায়গায় গেলে বিভিন্ন জিনিসের প্রয়োজন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডের জিনিসপত্র কেনার চেয়ে সস্তায় স্থানীয় বাজার থেকে পণ্য কিনলে অর্থ বাঁচবে। বিভিন্ন সময় পণ্য না কিনে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে বক্সিং ডে, ব্ল্যাক ফ্রাইডে এবং সাইবার মানডে ইত্যাদি মৌসুমী সেলে কেনাকাটা করলে অর্ধেক দামে পণ্য পাওয়া যাবে। তাই পকেটের অর্থ সাশ্রয় করতে প্রয়োজন অনুসারে তালিকা করে একবারে কিনতে হবে। 

লাইব্রেরিতে পড়াশোনা করা

বিদেশে পড়াশোনার খরচ কমাতে মিতব্যয়ী না হলেই নয়। এ জন্য ছোটবড় সব ক্ষেত্রেই কীভাবে অর্থ কম ব্যয় করে চলা যায় তা মাথায় রাখতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, বিদেশে পড়াশোনায় ভালো ফল করতে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটাতে হয় লেখাপড়ায়। এ জন্য বাড়িতে বিদ্যুৎ খরচও বেশি হয়। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি কিংবা পাবলিক স্পেসে পড়াশোনা করলে খরচ কিছুটা কম হবে। বিদেশে যেহেতু পাবলিক স্পেসেও ইন্টারনেট ব্যবহার এবং ব্যক্তিগত সময় কাটানোর সুযোগ পাওয়া যায়, তাহলে পড়াশোনার জন্য তা কাজে লাগাতে ক্ষতি কি! 

বইপত্র ধার করে পড়া

বিদেশে পড়াশোনার ধরন খানিকটা ভিন্ন প্রকৃতির। যেমন বেশিরভাগ বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার পরিবর্তে অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যাচাই করা হয়। এ জন্য ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে নানা ধরনের বই বা স্টাডি ম্যাটারিয়াল প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে সবকিছু কিনে পড়া সম্ভব নয়। সিনিয়রদের কাছ থেকে কিংবা লাইব্রেরি থেকে বই ধার করে এবং অনলাইন থেকে স্টাডি ম্যাটেরিয়াল ডাউনলোড করে পড়াশোনা করলে অর্থ সাশ্রয় করা সহজ হবে। 

পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করা

ক্যাম্পাসের বাইরে থাকলে প্রতিদিন ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়ার জন্য আলাদা বাজেট করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ক্যাব বা গাড়ি ব্যবহার না করে লোকাল বাস বা ট্রেনে যাতায়াত করার অভ্যাস করতে হবে। বিদেশের যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় যানজটের ঝামেলা নেই। অনেক সময় স্টুডেন্ট পাস থাকলে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারে ছাড় পাওয়া যায়। 

বাসায় জিম করা

শরীর ফিট রাখতে অনেকে দেশে থাকাকালীন জিমে যাওয়ার অভ্যাস করে ফেলে। ফলে বিদেশে যাওয়ার পর অনেকে বেশ অসুবিধায় ভোগে। এ জন্য জিমনেশিয়ামের ব্যয়বহুল খরচ এড়িয়েও সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে বাড়িতে তৈরি খাবার খাওয়া এবং ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়াম করার অভ্যাস করতে হবে। 

 

তথ্যসূত্র: অ্যাপ্লাই অ্যাব্রোড, হিন্দুস্তান টাইমস, ওভারসিজ

Comments

The Daily Star  | English

How Chattogram built its economic legacy

Picture a crowded harbour where the salty seabreeze carries whispers of far-off lands, where merchants of all creed and caste haggle over silks and spices, and where towering ships of all varieties – Chinese junks, Arab dhows, and Portuguese carracks – sway gently in the waters of the Bay of Bengal.

13h ago