আইইএলটিএস ব্যান্ড স্কোর যেভাবে হিসাব করা হয়

আইইএলটিএসের ব্যান্ড স্কোর কিংবা এর মূল্যায়ন কীভাবে করা হয় তা নিয়ে অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে।
আইইএলটিএস ব্যান্ড স্কোর যেভাবে হিসাব করা হয়
ছবি: সংগৃহীত

উচ্চশিক্ষা কিংবা বিদেশ যাওয়ার পূর্বে অনেকেই আইইএলটিএস পরীক্ষা দেওয়ার কথা ভাবেন। ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম বা আইইএলটিএসের মাধ্যমে যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি নয়, তাদের ভাষা দক্ষতা যাচাই করা হয়। 

তবে আইইএলটিএসের ব্যান্ড স্কোর কিংবা এর মূল্যায়ন কীভাবে করা হয় তা নিয়ে অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। তাই দেখে নেওয়া যাক, আইইএলটিএস-এর ব্যান্ড স্কোরগুলো কীভাবে গণনা করা হয় সে সম্পর্কে। 

আইইএলটিএসের ব্যান্ড স্কোর গণনা

আইইএলটিএসের স্কোরিং ০ থেকে ৯ এর মধ্যে হয়ে থাকে। যেখানে আপনি পূর্ণসংখ্যার স্কোরের পাশাপাশি ০ দশমিক ৫ সম্বলিত স্কোর, যেমন: ৬ দশমিক ৫, ৭ দশমিক ৫ কিংবা ৮ দশমিক ৫ এরকম স্কোরও পেতে পারেন। 

প্রতিটি দক্ষতা অর্থাৎ, লিসেনিং (শোনা), রিডিং (পড়া), রাইটিং (লেখা) এবং স্পিকিং (বলা)-এর জন্য আপনি আলাদা আলাদা ব্যান্ড স্কোর পাবেন। তারপর এগুলোকে গড় করে সামগ্রিক একটি ব্যান্ড স্কোর দেওয়া হয়। 

তবে সামগ্রিক ব্যান্ডে আপনি কখনোই ৭ দশমিক ১ কিংবা ৬ দশমিক ৯ এই ধরনের স্কোর পাবেন না। এর কারণ, আইইএলটিএস সামগ্রিক পরীক্ষার ফলাফলগুলোকে নিকটতম অর্ধসংখ্যা (দশমিক ৫) কিংবা নিকটতম পূর্ণসংখ্যার স্কোরে রূপান্তর করে। বিষয়টির উদাহরণ দিলে আরও পরিষ্কার হবে।  

ধরুন, আপনার সামগ্রিক গড় স্কোর আসলো ৬ দশমিক ৮৫। এ ক্ষেত্রে, ৬ দশমিক ৮৫-এর সবচেয়ে নিকটতম পূর্ণ সংখ্যা হচ্ছে ৭। তখন আপনার স্কোরটি ৭-এ উঠিয়ে হিসেব করা হবে। আবার ধরুন, আপনার স্কোর যদি ৬ দশমিক ৬৫ আসে, সে ক্ষেত্রে ৭ এর তুলনায় ৬ দশমিক ৫ এই স্কোরটির সবচেয়ে কাছে। তাই তখন আপনার স্কোর ৬ দশমিক ৫-এ নামিয়ে হিসেব করা হবে। অর্থাৎ, আপনার গড় স্কোরের নিকটতম অর্ধ কিংবা পূর্ণ সংখ্যায় সামগ্রিক স্কোরটি উঠিয়ে কিংবা নামিয়ে হিসেব করা হবে। 

আর যদি আপনার সামগ্রিক স্কোরের গড় ৬ দশমিক ২৫ হয়, সেক্ষেত্রে তাহলে কী হবে? এরকম হলে আপনার স্কোর ৬ দশমিক ৫-এ উন্নীত করা হবে। যদিও ৬ দশমিক ২৫ স্কোরটি আসলে ব্যান্ড ৬ এবং ৬ দশমিক ৫-এর মাঝামাঝি, তবে আইইএলটিএস কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে এটিকে এর নিকটতম স্কোরে উন্নীত করে, যা এখানে ৬ দশমিক ৫। একইভাবে, ৬ দশমিক ৭৫-এর ক্ষেত্রেও এটিকে বাড়িয়ে ৭-এ উন্নীত করা হবে। 

প্রতিটি দক্ষতা আলাদা আলাদাভাবে হিসাব করার প্রক্রিয়াও রয়েছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক সেগুলো সম্পর্কে।

লিসেনিং এবং রিডিং ব্যান্ড স্কোর

আপনার লিসেনিং এবং রিডিংয়ের ব্যান্ড স্কোর মোট ৪০-এর মধ্যে গণনা করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে, রিডিংয়ে ২টি ভাগ রয়েছে। আইইএলটিএস পরীক্ষাটি মানুষ সাধারণত একাডেমিক ক্ষেত্র যেমন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের জন্য দিয়ে থাকেন। 

তবে, অনেকে মাইগ্রেশনের উদ্দেশ্যেও এই পরীক্ষায় বসেন। যারা একাডেমিক ক্ষেত্রে যাওয়ার জন্যে দিবেন, তাদের জন্যে একাডেমিক রিডিং স্কোর ব্যান্ডে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হবে। আর যারা মাইগ্রেশনের উদ্দেশ্যে দিয়ে থাকেন তাদের রিডিং ব্যান্ড স্কোর এ ক্ষেত্রে জেনারেল ট্রেইনিংয়ের অধীনে করা হবে।

নিচে রিডিং এবং রাইটিংয়ের ব্যান্ড স্কোর গণনার হিসেবটি দেখা যাক। 

লিসেনিং স্কোর

রিডিং একাডেমিক স্কোর

রিডিং জেনারেল ট্রেইনিং

রাইটিং ব্যান্ড স্কোর

আইইএলটিএস-এ রাইটিংয়ের ২টি ভাগ রয়েছে। একটি হচ্ছে রাইটিং টাস্ক ১ এবং রাইটিং টাস্ক ২। এ ক্ষেত্রে এই ২টি কাজকে ৪টি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে মূল্যায়ন করা হয়। সেগুলো হল-

  • টাস্ক অ্যাচিভমেন্ট: উত্তরগুলো কত সুন্দরভাবে করা হয়েছে তা দেখা হয় এখানে। অর্থাৎ, পরীক্ষক আপনার তথ্য, ওভারভিউ, ব্যাখ্যা এবং সঠিকতা যাচাই করবেন।
  • কোহেরেনস অ্যান্ড কোহেশন: আপনার তথ্যগুলো কীভাবে সাজিয়েছেন, আপনার অনুচ্ছেদ এবং কিভাবে একটি তথ্যের সঙ্গে আরেকটি সংযুক্ত করেছেন সেগুলো এখানে চিহ্নিত করা হবে। অর্থাৎ, আপনি লেখাটি কতটা সুন্দরভাবে গঠন করতে পেরেছেন তা এখানে দেখা হবে। 
  • লেক্সিকাল রিসোর্সেস: আপনার শব্দভাণ্ডার বা ভোক্যাবুলারির ব্যবহার এবং বানান এখানে দেখা হবে। 
  • গ্রামাটিক্যাল রেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাকুরেসি: আপনার বাক্যের গঠন, টেন্সের ব্যবহার, ব্যাকরণের উপর নিয়ন্ত্রণ অর্থাৎ আপনার ব্যাকরণ কতটা সঠিক হয়েছে তা এখানে যাচাই করা হবে।

রাইটিং টাস্ক ১ এবং ২-এর জন্য উপরের সবগুলো মানদণ্ডে আলাদা ব্যান্ড স্কোর দেওয়া হবে এবং সবগুলোর একটি মোট গড় স্কোর করা হবে। 

উদাহরণস্বরূপ রাইটিং টাস্ক-১ এর ক্ষেত্রে যদি, টাস্ক অ্যাচিভমেন্ট: ব্যান্ড ০৭; কোহেরেনস অ্যান্ড কোহেশন: ব্যান্ড ৮, লেক্সিকাল রিসোর্সেস: ৭; গ্রামাটিক্যাল রেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাকুরেসি: ৬ হয়। তাহলে আপনার রাইটিং টাস্ক ১ এর ক্ষেত্রে গড় ব্যান্ড স্কোর হবে, (৭+৮+৭+৬)÷৪ = ২৮÷৪ = ৭।

স্পিকিং ব্যান্ড স্কোর

স্পিকিংয়ের অংশটি ৩ ভাগে বিভক্ত, এগুলো হলো আইএলটিএস স্পিকিং পার্ট ১, ২ এবং ৩। পরীক্ষাটি ৩টি ভিন্ন অংশ মিলিয়ে মোট ১১-১৪ মিনিট পর্যন্ত নেওয়া হয়। রাইটিংয়ের মতো স্পিকিংয়ের ক্ষেত্রেও মোট ৪টি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে স্কোর দেওয়া হয়। এগুলো হচ্ছে-

  • ফ্লুয়েন্সি অ্যান্ড কোহেরেন্স: আপনি কোনো জড়তা কিংবা নিজেকে সংশোধন করা ছাড়াই কতটা সাবলীলভাবে কথা বলতে পারছেন তা এখানে দেখা হয়। এ ছাড়া, আপনার কথা বোঝা যাচ্ছে কি না এবং একটি কথার সঙ্গে আরেকটি কথার সংযোগ বা সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে পারছেন কি না তাও দেখা হয়।
  • লেক্সিকাল রিসোর্সেস: একটি কথা আপনি কতভাবে বলতে পারেন অর্থাৎ, আপনার শব্দভান্ডার কতটা উন্নত এখানে তা দেখা হয়।
  • প্রোনানসিয়েশন: আপনার উচ্চারণ শুদ্ধ কি না, আপনার বাচনভঙ্গির কারণে কথা বুঝতে সমস্যা হয় কি না, ইত্যাদি এখানে দেখা হয়। 
  • গ্রামাটিক্যাল রেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাকুরেসি: কথা বলার সময় আপনি ব্যাকরণ মেনে চলছেন কিনা সেটি এখানে দেখা হয়।

এরপর রাইটিংয়ের মতোই প্রতিটি আলাদা মানদণ্ডের জন্য আলাদা করে ব্যান্ড স্কোর দেওয়া হবে এবং ৪টির গড় করা হবে। উদাহরণস্বরূপ, ফ্লুয়েন্সি অ্যান্ড কোহেরেন্স: ৭; লেক্সিকাল রিসোর্সেস: ৬.৫; প্রোনানসিয়েশন: ৭.৫; গ্রামাটিক্যাল রেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাকুরেসি: ৭। 

তাহলে মোট স্কোর, (৭+৬.৫+৭.৫+৭)÷৪ = ৭।

আইইএলটিএস-এর ব্যান্ড স্কোর বা মার্কিং কীভাবে করা হয় সে সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকলে স্বাভাবিকভাবেই আপনার প্রস্তুতির ভিত্তি আরও শক্ত হবে। কেন না, আপনি বুঝতে পারবেন কীভাবে কী করলে আপনার নম্বর কাটা যেতে পারে এবং কীসের উপর ভিত্তি করে আসলে মার্কিংগুলো করা হয়। এতে করে আপনি আপনার দুর্বল দিকগুলো খুঁজে বের করার পাশাপাশি আপনার সবল দিকগুলোকেও আরও ভালোভাবে চিহ্নিত করে ঝালাই করে নিতে পারবেন।

তথ্যসূত্র: ব্রিটিশ কাউন্সিল, আইইএলটিএসলিজ 

 

Comments