যেভাবে শুরু হলো সাদা পরচুলার ব্যবহার

যেভাবে শুরু হলো সাদা পরচুলার ব্যবহার
ছবি: সংগৃহীত

ব্রিটিশ বা আমেরিকান গণ্যমান্য ব্যক্তি বা বিচারকদের পুরোনো দিনের ছবিতে অবধারিতভাবে দেখা মেলে সে সময়ের কিছু ফ্যাশন অনুষঙ্গ। হাঁটু থেকে পা পর্যন্ত উল বা রেশমের স্টকিং, লম্বা ফ্রক কোট ও মাথায় লাগানো পরচুলা। 

এখন যেমনই লাগুক, সে সময় পরচুলা ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। এটি ব্যবহারের মতো সামর্থ্যও সবার ছিল না।  

বহু প্রাচীনকাল থেকেই পরচুলার ব্যবহার ছিল গ্রিক ও রোমানদের মাঝেও। কয়েক শতাব্দী ধরে এর জনপ্রিয়তা কখনো কমেছে, কখনো বেড়েছে। তবে ১৬ শতকের মাঝামাঝি থেকে রাজাদের মধ্যে এর প্রচলন হয়। 

এ জন্য রাজা চতুর্দশ লুইয়ের ছিল বিশেষ ভূমিকা। 'ড্যান্সিং সান কিং' বলে পরিচিত চতুর্দশ লুইয়ের ছিল যৌবনে অনেক দীর্ঘ চুল। বয়সের সঙ্গে সেসব পড়ে যেতে থাকায় তিনি উইগ বা পরচুলা ব্যবহার করতে শুরু করেন। একদম নিঁখুত ও খাপেখাপ পরচুলো বানানোর জন্য তার ছিল অভিজাত পরচুলা তৈরিকারী ও ব্যক্তিগত নাপিতদের দুটি দল। 

শিগগিরই এই পরচুলা হয়ে উঠে রাজাদের আভিজাত্যের প্রতীক। ইউরোপের বিচারালয়গুলোতেও প্রচলন ঘটলো এর। বিচারকদের মাথায় শোভা পেল পরচুলা। পূর্ব উপকূলে নতুন নতুন উপনিবেশ স্থাপনের সঙ্গে আমেরিকাতেও পৌঁছে গেল এই পরচুলা। 

১৭ শতকে পরচুলা ছিল সম্পদ, মর্যাদা, কর্তৃত্ব ও পেশাগত আভিজাত্যের প্রতীক। যার পরচুলা যত উন্নত সে তত ঐশ্বর্যমণ্ডিত। 

বৈভবসম্পন্নদের পরচুলা ছিল মানুষের চুল দিয়েই তৈরি। তবে বাজেটে টান পড়লে ঘোড়া, এমনকি ভেড়া বা বুনো ছাগলের লোম দিয়েও পরচুলা বানানো হতো। 

তবে ফ্যাশনের বাইরেও কথা আছে। ষোল শতকে ইউরোপে তীব্রমাত্রায় ছড়িয়েছিলো সিফিলিস।  এর ফলে চামড়ায় ঘা, ফুসকুড়ি ও কোষের মৃত্যুর ফলে চুল পড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছিল। সিফিলিস আক্রান্ত হওয়াটা সামাজিকভাবে ট্যাবুর মতো ব্যাপার ছিল। তাই সিফিলিসের ফলে জায়গায় জায়গায় হওয়া টাকগুলো ঢাকতে পরচুলার ব্যবহার শুরু হয়। চতুর্দশ লুইয়ের কাজিন রাজা দ্বিতীয় চার্লস এমনিভাবে পরচুলা ব্যবহার করতে শুরু করেছিলেন। 

সচেতনভাবে না হলেও দুর্ঘটনাক্রমে সতেরো শতকের আরেকটি সমস্যার সমাধান করে পরচুলা। অনেকেরই মাথায় ছিল উকুনের চমৎকার আবাস। ঘটতো টাইফাসের মতো সংক্রমণ। কিন্তু পরচুলা ব্যবহার করতে গিয়ে সাধারণত মাথা কামিয়ে ফেলতো হতো, তাই মাথা থেকে উকুনেরাও নিলো বিদায়। 

তবে রাজা চতুর্দশ লুইয়ের মতো নিজস্ব 'উইগরুম' বা পরচুলার বিশাল সমাহার সবার ছিল না। তাই বারংবার ব্যবহারে পরচুলা থেকে বেরোতে দুর্গন্ধ। ধুয়ে নেওয়ার উপায়ও ছিল না। তাই কারিগররা নতুন এক উপায়ে পরচুলা তৈরিতে হাত দেন। চক ও কাওলিন (একরকম নরম কাদা)-এর সঙ্গে আটা মেশানো হয়, সঙ্গে যুক্ত করা হয় ল্যাভেন্ডার, দারচিনি ও কস্তুরির সুবাস। তাই সাদা পরচুলা দেখাতে থাকে আরও সাদা। প্রতিবার এভাবে 'পাউডারিং' করার ফলে পরচুলাগুলোও হয়ে ওঠে ঝকঝকে, তকতকে ও নতুনের মতো। 

তথ্যসূত্র: রিপলি'স বিলিভ ইট অর নট

গ্রন্থনা: মাহমুদ নেওয়াজ জয় 

 

Comments

The Daily Star  | English

Choking waters: The dangerous decline of oxygen in Dhaka’s peripheral rivers

Bangladesh, often described as a land of rivers, is criss-crossed by more than 230 major and minor waterways.

16h ago