যেভাবে এলো ‘স্মাইলি’

যেভাবে এলো ‘স্মাইলি’
ছবি:হার্ভি রস বলের আঁকা মূল ডিজাইন। ছবি: সংগৃহীত

হলুদ রঙের একটি গোলকের ওপর কালো রঙে আঁকা দুটি চোখ আর একটি বাঁকা হাসির রেখা। 'স্মাইলি' নামে পরিচিত এই হাসিমুখের চিহ্নটি ইতিবাচক মনোভাব বোঝানোর জন্য পুরো বিশ্বেই বেশ পরিচিত। তবে এই স্মাইলি চিহ্নটি প্রথম কোথা থেকে এলো তা কখনো ভেবেছেন কি?

পুরো বিশ্বে সমাদৃত এই 'স্মাইলি' চিহ্নের জন্ম আজ থেকে ৬০ বছর আগে ১৯৬৩ সালে আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসে। হারভি রস বল নামে একজন আমেরিকান গ্রাফিক ডিজাইনার প্রথম হাসিমুখের আদলে এই ডিজাইনটি এঁকেছিলেন। 

একটি বিমা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে হারভি  প্রথম এই ছবিটি আঁকেন। সেই ক্যাম্পেইনটির লক্ষ্য ছিল তাদের কর্মচারীদের আরও বেশি হাসিখুশি থাকতে অনুপ্রেরণা দেওয়া। আর এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই হার্ভি মাত্র ১০ মিনিটে এই ডিজাইনটি তৈরি করেন। ছবিটি আঁকার সময় তার কোন ধারণাই ছিল না যে, এই অতি সহজ সরল ডিজাইনটি যে একসময় পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।

বিমা প্রতিষ্ঠানটি ছিল স্টেট মিউচুয়াল লাইফ অ্যাসিউরেন্স কোম্পানি (বর্তমানে অলমেরিকা ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশন)। তারা তাদের কর্মচারীদের আরও বেশি হাসিখুশি হতে উৎসাহিত করার জন্য তাদের অফিসে পোস্টার, ছবি চিহ্নিত বাটনসহ সবজায়গায় এই ডিজাইনটি ব্যবহার করতে শুরু করেন।

এই হাসিমুখ কর্মচারীদের আনন্দ দিতে কতটুকু সফল হয়েছিল জানা নেই। তবে প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই ডিজাইনটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এরপর এটি আর অফিসের ৪ দেয়ালের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং ধীরে ধীরে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে গিয়েছিল। অনেকেই তখন হার্ভির এই ডিজাইনটি নকল করে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে শুরু করে। তবে এত জনপ্রিয়তার পরেও হারভি বা স্টেট মিউচুয়াল কেউই এই ডিজাইনটিকে ট্রেডমার্ক বা কপিরাইট করার কোনো চেষ্টা করেননি। 
 
১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে, ফিলাডেলফিয়ার দুটি হলমার্ক কার্ডের দোকানের মালিক ২ ভাই বার্নার্ড এবং মুরে স্পেন এক দোকানে এই হাসিমুখের ডিজাইনটি দেখতে পান। এই ডিজাইনটি হার্ভি বল এঁকেছেন জেনেও তারা হাসিমুখটির নিচে 'হ্যাভ এ হ্যাপি ডে' স্লোগান জুড়ে দেন এবং ডিজাইনটি কপিরাইটের আওতায় আনেন। বছর শেষ না হতেই তারা ৫০ মিলিয়নেরও বেশি এই ডিজাইন সম্বলিত নানান পণ্য বিক্রয় করেন। 

এ ছাড়া ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় আমেরিকান যোদ্ধাদের হেলমেটেও তারা এই চিহ্ন ব্যবহার করে যোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার পাশাপাশি কিছুটা মুনাফা কামিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। 

তবে, ইউরোপেও এই হাসিমুখ চিহ্নের আরেকজন দাবিদার খুঁজে পাওয়া যায়। 

১৯৭১ সালে ফরাসি সাংবাদিক ফ্রাঙ্কলিন লুফরানি প্রথম  বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য চিহ্নটি ট্রেডমার্ক করেন। তিনিই প্রথম এর নাম দেন 'স্মাইলি'৷ এরপর তিনি স্মাইলি ছবিযুক্ত পণ্য বিক্রয়ের জন্য 'দ্য স্মাইলি কোম্পানি' প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৯৬ সালে লুফারনির ছেলে নিকোলাস তার বাবার ব্যবসার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর সে স্মাইলি চিহ্নিত পণ্য বিক্রির পাশাপাশি অর্থের বিনিমিয়ে প্রায় ১০০টি দেশে ব্যপকভাবে স্মাইলি চিহ্ন ব্যবহারের লাইসেন্স দেওয়া শুরু করেন। এর মাধ্যমে খুব দ্রুতই তার ব্যবসা সমৃদ্ধি লাভ করে। ক্রমেই এটি বিশ্বের শীর্ষ লাইসেন্সদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটিতে পরিণত হয়।

বর্তমানে দ্য স্মাইলি কোম্পানির বাৎসরিক আয় ২০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। কিন্তু তারা যেই ডিজাইনটি পুঁজি করে এত অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন সেটি প্রথম এঁকে হার্ভি রস বল পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন মাত্র ৪৫ ডলার। 

 

তথ্যসূত্র: সিএনএন, স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন
গ্রন্থনা: নাফিসা ইসলাম মেঘা 

 

Comments

The Daily Star  | English
education in Bangladesh

As a nation, we are not focused on education

We have had so many reform commissions, but none on education, reflecting our own sense of priority.

12h ago