বিসিএসে একসঙ্গে দুই বোনের সাফল্য

গুলে জান্নাত সুমি ও জান্নাতুন নাঈম খুশবু। ছবি: সংগৃহীত

গুলে জান্নাত সুমি ও জান্নাতুন নাঈম খুশবু দুই বোন। এবারের ৪১তম বিসিএসে নিয়োগের জন্য দুজনই সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। সুমি শিক্ষা ক্যাডারে এবং খুশবু কৃষি ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত। 

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার মকিমাবাদ এলাকার বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এয়াকুব মিয়া ও গৃহিণী রুপিয়া বেগমের মেয়ে তারা। বিসিএসে একসঙ্গে দুই বোনের সাফল্যে আনন্দে ভাসছে পরিবারটি।

শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত গুলে জান্নাত সুমি ২০০৭ সালে হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ২০০৯ সালে হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১০-১১ সেশনে রাজনীতি বিজ্ঞানে স্নাতক ও একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন।

সুমি বলেন, 'আমার শৈশব ও বেড়ে উঠা হাজীগঞ্জেই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স পরীক্ষা শেষে ঢাকায় চলে যাই। হঠাৎ করে ঢাকায় আসায় থাকার সমস্যা, মানিয়ে নেওয়ার সমস্যা শুরু হয়। ঢাকায় আসার পর বুঝতে পারি, চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতিতে আমি অনেক পিছিয়ে আছি। পরিবারের ওপর চাপ কমানোর জন্য এবং একইসঙ্গে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য আঞ্জুমান মোখলেছুর রহমান পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে যোগদান করি।

সেইসঙ্গে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ব্যাচেলর অব এডুকেশন কোর্সে ভর্তি হয়ে শিক্ষা বিষয়ক পড়ালেখা শুরু করি। পাশাপাশি বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি শুরু করি। ২০১৬ সালে প্রথম ৩৮তম বিসিএস দিয়ে আমার বিসিএস যাত্রা শুরু হয়। ৩৮তম বিসিএসে আশা অনুযায়ী ফল না পেয়ে স্বপ্ন পূরণের জন্য আবার নতুন উদ্যমে প্রস্তুতি শুরু করি। এভাবে দেখতে দেখতে ৪০তম বিসিএসের ফলের দিন চলে আসে।

২০১৮ সালে আবেদন করে ২০২২ সালে ৪০তম বিসিএসের ফলে এসে দেখলাম নিজের রোল নন-ক্যাডারে। অবশেষে গত ৩ আগস্ট ৪১তম বিসিএসের ফলের তালিকায় দুই বোনের রোল নম্বর একইসঙ্গে দেখে স্তব্ধ হয়ে যাই। ২০১৬ সালে শুরু শুরু হওয়া বিসিএসএর স্বপ্ন ২০২৩ এ এসে পরিপূর্ণতা পায়।'

কৃষি ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত জান্নাতুন নাঈম খুশবু বলেন, '২০১১ সালে হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি, ২০১৩ সালে হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি, ২০১৪-১৫ সেশনে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করি। এখনো ফল প্রকাশিত হয়নি স্নাতকোত্তরের।

২০১৯ সালে ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তখন আমি সদ্য গ্রাজুয়েট। তখনও চাকরির তেমন প্রস্তুতি শুরু করিনি। অনেকটা আনাড়িভাবেই   প্রথমবারের মতো বিসিএসে আবেদন করে ফেলি। ২০২০ সালে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হবার কথা থাকলেও করোনা মহামারির জন্য তা পিছিয়ে যায়।

আর আমিও প্রস্তুতির জন্য কিছু সময় পাই। ক্যাম্পাস থেকে বাড়ি ফিরে আসি। তারপর থেকে শুরু হয় আমার বিসিএস প্রস্তুতি। যেহেতু প্রিলিমিনারি হয়েছিল ২০২১ সালের ১৯ মার্চে, তাই আমি এক বছরেরও বেশি সময় পাই। এ জন্য ভালোভাবেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করি এবং প্রিলি-রিটেন পাস করি।

এরইমধ্যে ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোতে (বিবিএস) যোগদান করি এবং বর্তমানে কর্মরত আছি। ৩ আগস্ট যখন ৪১তম বিসিএসের ফল প্রকাশিত হয়, তখন তালিকায় স্থান পেয়ে সত্যিই আপ্লুত হয়েছি। ২০১৯ থেকে ২০২৩ এই দীর্ঘ সময়ের যাত্রায় পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও  সহকর্মীদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সমর্থন পেয়েছি।'

হাজীগঞ্জ মডেল সরকারি কলেজের শিক্ষিকা ফারজানা কুমকুম বলেন,'তারা দুই বোন আমাদের কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের এই সাফল্যে দারুণ উচ্ছ্বাসিত।'

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

7h ago