কুবি ভিসি কী বললেন, কেন বললেন?

দুর্নীতির ব্যাপকতা অস্বীকার করা যাবে না। আমাদের চারপাশে যেসব উন্নয়ন দৃশ্যমান, সেখানে দুর্নীতির কিছু ইতিবাচক ভূমিকা হয়তো রয়েছে। কিন্তু এই কথা একজন শিক্ষক, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বা উপাচার্য বলতে পারেন কি? উদাহরণ দিতে গিয়েও তিনি এমন কোনো কথা বলতে পারেন কি না, যেটি দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে? যদি তা-ই হয় তাহলে একজন এমপি, মন্ত্রী, রাজনৈতিক কর্মী বা ঘুষখোর সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে তার কী পার্থক্য থাকে?

ঢাবি ভিসির কানাডার ভিসা না পাওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষের রসিকতার রেস না কাটতেই এবার আলোচনায় কুবি ভিসি।

আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নাম সংক্ষেপ করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে এমন দশা হয় যে শুনতেও খারাপ লাগে। এই যেমন কুবি। মানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু 'কু' শুনলেই কেমন যেন লাগে।

কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সংক্ষেপ করতে গিয়ে এত বেশি জটিল করে ফেলা হয় যে তাতে মনে হয় সংক্ষেপের চেয়ে পুর্নাঙ্গ রূপটিই বরং সহজ। যেমন: গোপালগঞ্জে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এটকে সংক্ষেপে বলা হয় 'বশেমুরবিপ্রবি'। যেহেতু বঙ্গবন্ধুর নামে আরও একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে এবং গোপালগঞ্জে এটি ছাড়া আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই, সে হিসেবে বশেমুরবিপ্রবির মতো একটি খমমট শব্দ না বলে গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় বললেও মন্দ হয় না। দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও তা-ই। এটিকে সংক্ষেপে বলা হয় হাবিপ্রবি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঢাবি, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে শাবি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে জাবি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে রাবি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে খুবি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে জবি বলা হয়। সবচেয়ে বেশি বিভ্রান্তি তৈরি হয় জাবি ও জবি নিয়ে। কেননা দুটির উচ্চারণ ও বানান খুব কাছাকাছি। এ ২ প্রতিষ্ঠানের ২ শিক্ষার্থী পরস্পরকে পরিচয় দিতে গেলে জবি ও জাবি নিয়ে খাবি খেতে পারেন।

একইভাবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় ববি। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ববি নামে কোনো শিক্ষক বা শিক্ষার্থী থাকলে তাকে বলা হবে 'ববি এখন ববিতে পড়ে' বা 'ববি এখন ববিতে পড়ায়'।

তবে এই লেখার বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সংক্ষেপকরণ নয়। বরং আজকের বিষয় দুর্নীতি—যার পক্ষে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাফাই গেয়েছেন এবং এই সংবাদ প্রকাশের 'অপরাধে' মোহাম্মদ ইকবাল মনোয়ার নামে একজন শিক্ষার্থীকে—যিনি দৈনিক যায়যায়দিনের কুবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক—বহিষ্কার করা হয়েছে।

এই ঘটনার সমালোচনা হচ্ছে মূলত ২টি কারণে।

১. একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেছেন, 'দুর্নীতি হচ্ছে বলেই উন্নয়ন হচ্ছে'

২. সংবাদ প্রকাশকে অপরাধ গণ্য করে একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী।

কেন এবং কোন প্রেক্ষাপটে একজন অধ্যাপক 'দুর্নীতি হচ্ছে বলে উন্নয়ন হচ্ছে' বললেন এবং এ বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদটি শত ভাগ সঠিক না হলেও কিংবা পুরোপুরি মিথ্যা হলেও এই অপরাধে একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা যায় কি না, সেটিই মূল প্রশ্ন।

গত ৩১ জুলাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের নবীন বরণ ও প্রবীণ বিদায় অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের বক্তব্য নিয়ে 'যায়যায়দিন' পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল 'দুর্নীতি হচ্ছে তাই বাংলাদেশে উন্নয়ন হচ্ছে: কুবি উপাচার্য'।

খবরে বলা হয়, অনুষ্ঠানে ভিসি বলেছেন, একজন শিক্ষার্থী তাকে বললেন যে দেশে দুর্নীতির কারণে উন্নয়ন হচ্ছে না। তার উত্তরে ভিসি তাকে বিষয়টিকে উল্টোভাবে দেখার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, দুর্নীতি হচ্ছে বলেই উন্নয়ন হচ্ছে। যেমন: কিছু লোক ঘুষ খাচ্ছে বলেই গরিব মানুষ ইলিশ মাছ বিক্রি করতে পারছে। গরিব মানুষের সংসার চলছে। এভাবে উপাচার্য আরও কিছু কথা বলে দুর্নীতির ইতিবাচক চিত্র তুলে ধরেন।

কিন্তু এই সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় শুরু হলে উপাচার্যের বক্তব্য বিকৃত করে সংবাদ প্রকাশের অভিযোগে ইকবাল মনোয়ারকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আমিরুল হক চৌধুরীর সই করা বহিষ্কারের অফিস আদেশে বলা হয়, 'উপাচার্যর বক্তব্যকে বিকৃত করে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তমূলক তথ্য প্রচার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন করার প্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রক্টরিয়াল বডির প্রাথমিক প্রতিবেদন ও সুপারিশে ২ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের সভায় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইকবাল মনোয়ারকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলো।'

তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া উপাচার্যর বক্তব্যের অডিও রেকর্ড শুনে জানা যায়, তিনি সত্যিই দুর্নীতি হচ্ছে বলে উন্নয়ন হচ্ছে—এই কথা বলেছেন। অর্থাৎ এখানে সংবাদ বিকৃতির অভিযোগটি সঠিক নয়। তবে উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈনের দাবি, পত্রিকায় যা প্রকাশিত হয়েছে সেটি তার বক্তব্যের খণ্ডিত রূপ। তিনি ছাত্রছাত্রীদের ক্রিটিক্যাল থিংকিং বাড়ানোর পরামর্শ দিতে ওই কথা বলেছেন। (দ্য ডেইলি স্টার বাংলা, ২ আগস্ট ২০২৩)

ধরা যাক, ভিসির বক্তব্যের খণ্ডিত অংশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এই অপরাধেও কি একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা যায়? বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কি এটা অনুমোদন করে? কর্তৃপক্ষ কি তাকে কোনো চিঠি দিয়েছে? তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বা তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়েছে?

গণমাধ্যমকে ওই শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি। তার মানে, সিদ্ধান্তটি কর্তৃপক্ষ এককভাবে নিয়েছে এবং এখানে প্রশাসন ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয় আইনের কোন ধারা, ক্ষমতা ও এখতিয়ার বলে কর্তৃপক্ষ একজন শিক্ষার্থীকে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে বহিষ্কার করলো—সেটির সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

কোনো একটি অনুষ্ঠানে একজন বিশিষ্ট নাগরিক, তিনি শিক্ষক-রাজনীতিবিদ-ব্যবসায়ী যেই হোন না কেন, তার পুরো বক্তব্যটি গণমাধ্যমে আসে না। এমনকি স্বয়ং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেরও পুরোটা পত্রিকায় বা টেলিভিশনে প্রকাশ ও প্রচার হয় না। বক্তব্যের উল্লেখযোগ্য অংশই প্রকাশিত হয়। এটিই সারা পৃথিবীর সাংবাদিকতার অনুশীলন। অর্থাৎ সাংবাদিকরা তার দীর্ঘ বক্তৃতার মধ্য থেকে উল্লেখযোগ্য এবং আকর্ষণীয় অংশটুকুই প্রকাশ করেন।

তবে সেখানে যদি সত্যিই বক্তব্যকে বিকৃত করা হয় বা ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়, সেটি সাংবাদিকতার মানদণ্ডে অপরাধ। কিন্তু এই অপরাধের শাস্তি দিতে একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করাটা আরও বড় অপরাধ। উপরন্তু যায়যায়দিনে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এবং ভিসির বক্তব্যের যে অডিও রেকর্ড প্রচারিত হয়েছে, সেখানে খুব বেশি অমিল নেই। অর্থাৎ তার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে বলে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটি পুরোপুরি সঠিক নয়।

এখানে উপাচার্যের একটি কথা প্রণিধানযোগ্য, তিনি শিক্ষার্থীদের ক্রিটিক্যাল থিংকিং বাড়ানোর পরামর্শ দিতে গিয়ে উদাহরণ হিসেবে এটা বলেছেন। শিক্ষার্থীরা যাতে মুখস্তবিদ্যানির্ভর না হয়, সেই পরামর্শ দিয়েছেন। এটি যৌক্তিক। কিন্তু তারপরও তিনি যা বলেছেন এবং পত্রিকায় যে অংশটুকু এসেছে, সেটিকে বিকৃতি বলা যায় না।

ভিসির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তিনি প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ পাঠিয়েছিলেন, সেটি ছাপা হয়নি। যদি এই তথ্য সঠিক হয় তাহলে বলতে হবে, পত্রিকা কর্তৃপক্ষ এখানে পেশাদারি আচরণের পরিচয় দেয়নি। কারণ, প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ করার এখতিয়ার সংশ্লিষ্ট সকলেরই রয়েছে এবং প্রতিবাদ পাঠানো হলে সেটি প্রকাশ করা সাংবাদিকতার নীতিমালারই অংশ। যদি পত্রিকা কর্তৃপক্ষ এই নীতি ভঙ্গ করে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ দায়েরের সুযোগ আছে।

সেইসঙ্গে ওই প্রতিবেদককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া এবং ভবিষ্যতে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সাবধান হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে চিঠি দিতে পারতো। উপাচার্য স্বয়ং তাকে ব্যক্তিগতভাবে ডেকে নিয়েও শাসন করতে পারতেন। শিক্ষক হিসেবে এই এখতিয়ার তার রয়েছে। কেননা শিক্ষক হচ্ছেন পিতার মতো। তার সন্তানতুল্য শিক্ষার্থী যদি সত্যিই কোনো অন্যায় করেন, তাহলে সেটির প্রতিকার তিনি নিজেই করতে পারেন। কিন্তু একটি সংবাদ প্রকাশের জেরে তাকে কোনো ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে দেওয়াটি কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।

দুর্নীতির ব্যাপকতা অস্বীকার করা যাবে না। আমাদের চারপাশে যেসব উন্নয়ন দৃশ্যমান, সেখানে দুর্নীতির কিছু ইতিবাচক ভূমিকা হয়তো রয়েছে। কিন্তু এই কথা একজন শিক্ষক, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বা উপাচার্য বলতে পারেন কি? উদাহরণ দিতে গিয়েও তিনি এমন কোনো কথা বলতে পারেন কি না, যেটি দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে? যদি তা-ই হয় তাহলে একজন এমপি, মন্ত্রী, রাজনৈতিক কর্মী বা ঘুষখোর সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে তার কী পার্থক্য থাকে?

বরং শিক্ষককে তো এমন কথা বলতে হয়, যাতে তার সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীরা, যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে দেশের নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে কাজ করবেন, তারা দুর্নীতিমুক্ত থাকেন; তারা যাতে সব ধরনের লোভ ও প্রলোভনের ঊর্ধ্বে থেকে দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করতে পারেন; তারা যাতে যেকোনো পরিস্থিতিতে নীতি আদর্শের প্রতি অবিচল থাকেন। শিক্ষক তো সেই পরামর্শই দেবেন। সততা ও ন্যায়ের পক্ষে অটল থেকেও কীভাবে ভালো থাকা যায়, সেই উদাহরণ দেবেন।

কিন্তু সেটি না করে তিনি যদি ক্রিটিক্যাল থিংকিং বাড়ানোর পরামর্শ দিতে ঘুষ আর ইলিশ মাছের উদাহরণ টানেন, তাহলে তার সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীরা চাকরির প্রথম দিন থেকেই ঘুষ খাবে। তার কথায় উৎসাহী হয়ে শিক্ষার্থীরা যদি ঘুষখোরে পরিণত হয়, অসৎ পথে পা বাড়ায়, যেকোনো উপায়ে টাকাপয়সা উপার্জনকেই 'উন্নয়ন' বলে মনে করেন, সেই দায় তিনি কী করে এড়াবেন?

আমীন আল রশীদ: কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এডিটর, নেক্সাস টেলিভিশন

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)

Comments

The Daily Star  | English
What constitutes hurting religious sentiments

Column by Mahfuz Anam: What constitutes hurting religious sentiments?

The issue of religious tolerance have become a matter of great concern as we see a global rise in narrow-mindedness, prejudice and hatred.

10h ago