কুয়েতে অনলাইনে ভিসা প্রতারণার নতুন ফাঁদ

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আকর্ষণীয় বেতন ও সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে নতুন ভিসা করে দেওয়ার নামে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে প্রতারকরা।

এর জন্য তারা বেছে নিয়েছে ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটকের মতো মাধ্যমগুলোকে। তাদের প্রতারণার ফাঁদে পা দিচ্ছে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। এমনকি, এসব চক্রের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব ও ঋণগ্রস্ত হয়ে স্ট্রোক করে মৃত্যু এবং আত্মহত্যার খবরও পাওয়া গেছে।

এসব ভিসা প্রতারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দিয়ে প্রবাসীদের সতর্ক করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস।

করোনা মহামারিতে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অনেক প্রবাসী ছুটিতে দেশে আটকা পড়েন এবং তাদের আকামা বাতিল হওয়ায় আর কুয়েত ফিরতে পারেননি। এরপর অনিয়মিতদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকায় অনেকটা কর্মী সংকট দেখা দেয় দেশটিতে।

এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনলাইনে ভিসা প্রতারণার নতুন ফাঁদ তৈরি করে প্রতারক চক্র।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিটি ভিসা বাবদ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে ৫ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা। এসব চক্রের সঙ্গে জড়িত আছে কিছু ট্রাভেল এজেন্সি ও দালাল। প্রতারক চক্রটি ইমো বা হোয়াটসঅ্যাপের মতো মাধ্যম ব্যবহার করে আলোচনার পর মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে টাকা লেনদেন করে।

চক্রের লোভনীয় প্রস্তাবে সহজ-সরল মানুষ তাদের কষ্টার্জিত অর্থ তুলে দেন প্রতারকদের হাতে।

এমন কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, কুয়েত-বাংলাদেশভিত্তিক কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপে ভিসা সংক্রান্ত পোস্ট দেখে ইমো বা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে তারা যোগাযোগ করেন। যেখানে তাদের বেতনের অফারের সঙ্গে আস্থা আনতে ভিসার কয়েকটি কপিও দেখানো হয়। এমনকি নিজের পাসপোর্ট কপি, সিভিল আইডি কপিসহ কিছু নথি দেখিয়ে আস্থা অর্জন করে, যেগুলো আসলে ওই প্রতারকের নয়।

তারা জানান, পাসপোর্ট দেওয়ার ২ মাস পর ভুক্তভোগীদের ভিসার কপি দেখানো হয়। সেই কপি দেখিয়ে প্রতারকরা ৫০০ থেকে ২ হাজার দিনার দাবি করে এবং অর্থ দিতে বলা হয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। পরবর্তীতে দেখা যায়, ভিসাটি ভুয়া।

কুয়েতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও সামনে আসে গত ৮ আগস্ট। প্রতারক চক্রটির বিরুদ্ধে ঢাকার গুলশান থানায় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দায়ের করেন। ইস্ট বেঙ্গল ওভারসিজ নামে প্রতারক চক্রটি ফেসবুকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে মাত্র ৪ মাসে ৩৫ জনের কাছ থেকে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। টাকা নেওয়ার পর থেকেই তারা পলাতক।

ভিসা প্রতারকদের সতর্ক করে কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান বলেন, 'ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপে যারা ভিসা প্রতারণার কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের খোঁজ নিচ্ছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

তিনি বলেন, 'না জেনে, না বুঝে যারা টাকা দিয়ে দিচ্ছেন, তাদেরও সতর্ক করছি। এই ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডে আপনারা যুক্ত হবেন না। কারণ, এভাবে টাকা নেওয়া যেমন অবৈধ, দেওয়াও অবৈধ।'

'মিথ্যা প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে টাকা-পয়সার লেনদেন করবেন না। যদি কেউ এমন প্রলোভন দেখায়, তাহলে দূতাবাসে অভিযোগ জানান। দূতাবাস এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে', যোগ করেন তিনি।

লেখক: কুয়েতপ্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

No clear roadmap for investment

The budget for FY26 has drawn strong criticism from business leaders who say it lacks a clear roadmap for improving the investment climate, bolstering industrial competitiveness, and implementing overdue reforms in the banking sector.

14h ago