রিভিউ

দুই মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্পে উঠে এলো মুক্তিযুদ্ধের চিত্র

‘১৯৭১ সেই সব দিন’ সিনেমার পোস্টার।

হৃদি হক পরিচালিত প্রথম সিনেমা '১৯৭১ সেই সব দিন'। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এমন গল্পের সিনেমা খুব কমই নির্মিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে দুই মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প কীভাবে সারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে ঢুকে পড়ল, সিনেমায় সে গল্প উঠে এসেছে।

সিনেমাটির গল্প ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ শুরু হয়ে শেষ হয়েছে ১৬ ডিসেম্বরে। মধ্যবিত্ত দুই পরিবারের এমন সংকটের গল্প ভাবনা নিয়ে এর আগে মুত্তিযুদ্ধের কোনো সিনেমা নির্মিত হয়নি। এখানে নির্মাতাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করা যায়।

তবে মুক্তিযুদ্ধের অনেক ঘটনা অনায়াসে গল্পের ভেতর ঢুকে পড়েছে, যা দর্শকদের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অনেক ইতিহাস জানার সুযোগ করে দিবে। সিনেমায় কোনোকিছুই আরোপিত মনে হয়নি। নির্মাতা মুক্তিযুদ্ধের একটা ছবি সেলুলয়েডে আঁকার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। যেখানে তিনি স্বার্থক হয়েছেন এটা বলা যায়।

অনেক অভিনয়শিল্পীর সমাহার রয়েছে এই সিনেমার গল্পে। তাদের মধ্যে আলাদা করে চোখে পড়বে সানজিদা প্রীতিকে। সিনেমায় তার চোখের ভাষা ও অনবদ্য অভিনয় দর্শকদের মনের গহীনে দাগ কেটে থাকবে দীর্ঘদিন। তারিনকে দর্শকরা একেবারে ভিন্ন একটা চরিত্রে আবিষ্কার করবেন। সিনেমায় চরিত্রটার কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টায় তিনি সফল।

অনেকদিন পর লিটু আনাম পর্দায় উপস্থিত হয়েছেন অভিনয়শিল্পী হিসেবে। সিনেমায় তার চরিত্রটির টানাপোড়েন দ্বিধাগ্রস্ততা দর্শকদের ভাবিয়ে তুলবে। অল্প সময় পর্দায় উপস্থিত থাকলেও দারুণ উজ্জ্বল ছিলেন আনিসুর রহমান মিলন। ছোট ছোট এমন অনেক চরিত্র নিয়েই '১৯৭১ সেই সব দিন'।

বিশেষভাবে পর্দায় অনবদ্য ছিলেন নাজিয়া হক অর্ষা; মৌসুমী হামিদও তাই। সানজিদা প্রীতির ছোট বোন ও মায়ের চরিত্রের অভিনয়শিল্পী, দাদীর চরিত্রের অভিনয়শিলল্পীরা দারুণ।

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় সবসময়ই অভিনয়গুণে নিজেকে আলাদা করে রাখেন অন্যদের চেয়ে। সিনেমার উর্দু 'ইয়ে শ্যাম' গানটিতে সোনিয়া হোসেনের অল্প উপস্থিতি ছিল ঝলমলে।

সিনেমার মূল চরিত্রের অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে নায়ক ফেরদৌস, সজল চরিত্র হয়ে উঠার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। কিছু জায়গায় তারা সফল হয়েছেন, কোথাও কোথাও ব্যর্থ। তবে সবমিলিয়ে তাদের মন্দ লাগেনি।

সাজু খাদেম বরাবরের মতোই ভালো অভিনয় করেছেন। রাজাকার হিসেবে খলনায়কের ভূমিকায় নিজেকে ভালোভাবেই উপস্থাপন করেছেন তিনি।

হৃদি হক পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয়ও করেছেন। তবে সিনেমাটিতে পরিচালক হিসেবেই এগিয়ে থাকবেন তিনি।

সিনেমায় অভিনয়শিল্পীদের মেকআপ বিষয়ে আরেকটু মনোযোগী হওয়া উচিত ছিল। পর্দায় এটি খুব চোখে লেগেছে।

হৃদি হক তার পরিচালিত প্রথম সিনেমায় মুক্তিযুদ্ধের দৃশ্য নিয়ে বড় আয়োজন করেছেন। যুদ্ধের দৃশ্য তৈরি করা, গ্রেনেড ফোটানো, বোমাবারুদ, রাইফেল— এসব নিয়ে খুব একটা হেলাফেলা করেননি। সিনেমাটিতে দেবজ্যোতি মিশ্রের আবহ সঙ্গীত ও গানের সুর সংগীত আলাদা একটা মাত্রা দিয়েছে। 'যাচ্ছো কোথায়' গানটা শুনতে যেমন ভালো, চোখে দেখেও আরাম লাগে।

অনেকখানি ধারা বর্ণনায় মাধ্যমে সিনেমার গল্প বলার এই ধারা সত্যি অন্যরকম লেগেছে। সিনেমাটার শুরু এবং শেষ পর্যন্ত হৃদি হকের পিতা বরেন্য অভিনয়শিল্পী ড. ইনামূল হক জড়িয়ে ছিলেন কোথাও না কোথাও।

আংশিক সরকারি অনুদানে নির্মিত '১৯৭১ সেই সব দিন' সিনেমার শেষ দৃশ্য যুদ্ধ শেষে নদীর মাঝখানে নৌকায় মুক্তিযোদ্ধাদের ফিরে আসার সময় পতাকা আবহ সংগীত আর দেশের গান চোখ ভেজাবে দর্শকদের। মুক্তিযুদ্ধের এই সিনেমা আরও বেশি দর্শকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক এমন প্রত্যাশা রইল।

Comments

The Daily Star  | English
Eid-ul-Azha 2025

Main Eid congregation held at National Eidgah

With due religious solemnity and fervour, the main congregation of Eid-ul-Azha was held at the National Eidgah.

1h ago