‘ক্যাপাসিটি চার্জের’ বোঝা ধারণার চেয়ে বেশি

সরকার পরিচালিত টঙ্গী ১০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২০১৮-১৯ সালে উৎপাদন হয় এর বার্ষিক সক্ষমতার মাত্র ২ শতাংশ। এর বাইরে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়নি ১ ওয়াটও। অথচ এই ৫ বছরে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির পেছনে সরকারের খরচ হয়েছে ১৩৩ কোটি টাকা।

২১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন। ওই ৫ বছরের মধ্যে ৩ বছরে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়নি। বাকি ২ বছরে উৎপাদন হয়েছে বার্ষিক সক্ষমতার মাত্র ৩-৮ শতাংশ। দেশের সাধারণ মানুষের করের টাকা থেকে এই প্রতিষ্ঠানের জন্য 'ফিক্সড কস্ট' গুণতে হয়েছে ৪৩১ কোটি টাকা।

২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এ ২টি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অন্তত ৪২টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্র অন্তত ১ বছর বসে ছিল। অথচ সম্মিলিতভাবে এগুলোর জন্য 'ফিক্সড কস্ট' বাবদ সরকারের খরচ হয়েছে ১৩ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা।

এই টাকায় তাদের কর্মকর্তাদের বেতন হয়েছে, স্থাপনা পরিচালনার ব্যয় নির্বাহ হয়েছে কিংবা সরকারি-বেসরকারি ঋণ পরিশোধ হয়েছে। অথচ এই সময়কালে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বেশিরভাগ শুধু বসেই ছিল।

দ্য ডেইলি স্টারের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নিষ্ক্রিয় এই সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে দেওয়া 'ফিক্সড কস্টকে' ক্যাপাসিটি চার্জ বিবেচনা করলে তা এর আগে প্রকাশিত ক্যাপাসিটি চার্জের সব অংক ছাড়িয়ে প্রাপ্তির তুলনায় অনেক বেশি ব্যয়ের একটা হিসাবে গিয়ে ঠেকে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা সাধারণত বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে দেওয়া 'ক্যাপাসিটি চার্জ' সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেন। যেমন, গত জুনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ২০১৭-১৮ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে দিয়েছে ৫৭ হাজার ৯৭০ কোটি।

বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য সরকারের ব্যয় দুই ধরনের। এক জ্বালানি ব্যয় ও অপরটি ক্যাপাসিটি পেমেন্ট। ক্যাপাসিটি পেমেন্টের মধ্যে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ছাড়াও বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া বাবদ একটা অংক গুণতে হয় সরকারকে, যাকে 'ক্যাপাসিটি চার্জ' বলা হয়।

সিপিডির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ৫ বছরে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে দেওয়া ক্যাপাসিটি চার্জের সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোর 'ফিক্সড কস্ট' যোগ করলে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৯৯ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা, যা বিদ্যুৎ উৎপাদন হোক বা না হোক সরকারকে পরিশোধ করতে হয়েছে। 

২০২১-২২ সাল পর্যন্ত দেশে অন্তত ১৫১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল। এগুলোর মধ্যে ৬৩টি সরকারি এবং ৮৮টি বেসরকারি।

এই ১৫১টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে দ্য ডেইলি স্টার ৪২টি সরকারি এবং ২৬টি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে চিহ্নিত করেছে যেগুলো গত ৫ অর্থবছরে বার্ষিক সক্ষমতার ১০ শতাংশ বা তার কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে।

এই ৬৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ৫ বছরের মধ্যে যে বছরগুলোতে কম উৎপাদন করেছে, শুধু ওই সময়ে এগুলোর জন্য সরকারের ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা।

এর মধ্যে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পেয়েছে ৪ হাজার ১৪১ কোটি টাকা, আর বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পেয়েছে ৭ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা।

আর ৬৮টি কেন্দ্রের জন্য ৫ বছরে দেওয়া মোট ক্যাপাসিটি চার্জের পরিমাণ ২৯ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ২৯ শতাংশ।

এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে ৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ওই ৫ বছরের ৫ বছরই সক্ষমতার ১০ শতাংশের কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে এবং ৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ৫ বছরের মধ্যে ৪ বছর ১০ শতাংশের কম উৎপাদন করেছে। এই ১৪ প্রতিষ্ঠানের ১১টিই সরকারি।

দেশের বাজেটের মোট বার্ষিক ভর্তুকি বরাদ্দের ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ খাতে ব্যয় হয়। সিপিডির ধারণা, এই বরাদ্দের বেশিরভাগই পরিশোধ করা হয় ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের হিসাব অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে মোট বার্ষিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৫০ শতাংশই অব্যবহৃত থাকবে। এটি কমাতে চাইলে যেগুলো বছরের পর বছর বসে থাকছে সেগুলো অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। কিন্তু সরকার এগুলো চালু রাখছে, কারণ তারা দেখাতে চায় যে তাদের আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।'

চাহিদা-সরবরাহে পার্থক্য

বিদ্যুৎ উৎপাদনে বর্তমানে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট।

অর্থাৎ, দেশীয় উৎপাদন ও আমদানির মাধ্যমে দেশের মোট গ্যাস সরবরাহ চাহিদার তুলনায় অনেক কম।

দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্প ও গৃহস্থালি মিলিয়ে বর্তমানে মোট ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা আছে। সেখানে সরবরাহ আছে ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট।

এই চাহিদা ও সরবরাহের ব্যবধানের কারণে সরকারকে এক খাতের জন্য বরাদ্দ গ্যাস অন্য খাতে ব্যবহার করতে হয়। যার প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ খাতেও।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তারপরও সরকার গ্যাসভিত্তিক নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দিচ্ছে। আমি জানি না সরকার কীভাবে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করবে। সেটা নিশ্চিত করতে না পারলে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকেও বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দিয়ে যেতে হবে।'

বুয়েটের পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেল রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এই শিক্ষক বলেন, 'অন্তত ৩টি গ্যাসচালিত বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর জন্য প্রস্তুত বলে আমি জানি। কিন্তু সরকার চুক্তি অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করতে পারবে না বিধায় সেগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম স্থগিত আছে।'

পিডিবির তথ্য বলছে, টঙ্গী ১০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালাতে প্রতিদিন ২৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দরকার। কিন্তু সেখানে সারা বছর কোনো গ্যাস সরবরাহ করতে পারে না সরকার।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ম্যানেজার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের এই এলাকায় ইন্ড্রাস্ট্রিগুলোর জন্য প্রচুর গ্যাস দরকার হয়। সেগুলোর চাহিদা মিটিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা হয়ত সম্ভব হয় না। পর্যাপ্ত গ্যাস পেলে আমাদের এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে মাঝেমধ্যেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করি।'

সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ডেইলি স্টারকে জানান, ২০১৯ সাল থেকে কেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চলছে।

তিনি বলেন, 'ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার ঠিকাদার কিছু সরঞ্জাম সরবরাহ করতে পারেনি।'

গ্যাস সংকটে সরকারি ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, চট্টগ্রাম পাওয়ার স্টেশন, বিবিয়ানা পাওয়ার স্টেশন, শিকলবাহা ১৫০ মেগাওয়াট, শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশনের কয়েকটি ইউনিট গত ৫ বছরের মধ্যে অন্তত ১ বছর সক্ষমতার ১০ শতাংশের কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে।

টঙ্গী ও সিদ্ধিরগঞ্জ ছাড়া ৫ বছরের পুরোটা সময় ১০ শতাংশের কম উৎপাদন করেছে খুলনা পাওয়ার স্টেশন, ভোলা, কুতুবদিয়া ও সন্দ্বীপ পাওয়ার প্ল্যান্ট, ডিজিডি ঢাকা এবং বাংলা ট্র্যাক পাওয়ার ইউনিট-১। 

বেসরকারি খাতের ১১টি ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র ৫ বছরের মধ্যে অন্তত ২ বছর সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। এই সময়ের মধ্যে সেগুলো ক্যাপাসিটি চার্জ পেয়েছে ৫৯২ কোটি টাকা।

বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না, এটি একটি সংকট। কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো প্রতিষ্ঠা করার জন্য কোম্পানিগুলো কিছু ব্যাংক ঋণ নিয়েছে। যেভাবেই হোক তাদের ঋণ তো পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকলেও কর্মীদের বেতন-ভাতা ও অপারেশন খরচ তো থাকেই। তাই ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।'

'ভুল মডেল'

বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাতের ক্যাপাসিটি মডেলের সমালোচনা করে আসছেন। বিশেষ করে ক্যাপাসিটি চার্জের হারের সমালোচনা করা হয়, যা বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অতিরিক্ত সুবিধা দিচ্ছে।

এ বছরের জুলাইয়ে একটি সরকারি প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয়েছে যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার প্রথা এক ধরনের 'লুটেরা মডেল' এবং তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চুক্তির ফল।

পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মডেল টেকসই নয়।

তবে প্রতিবেদনটির ওই অংশটি পরবর্তীতে সরকারি ওয়েবসাইট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে এবং প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে জড়িত ২ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে, যা বেসামরিক আমলাতন্ত্রে একটি শাস্তি হিসেবে বিবেচিত।

অধ্যাপক ম. তামিমের মতে, বাংলাদেশ ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার মডেলের 'অপব্যবহার' করছে।

যেমন, বিপুল ক্যাপাসিটি চার্জ পাওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে কিছু ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলচালিত কেন্দ্র রয়েছে, যা 'পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট' নামে পরিচিত। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো শুধু জরুরি সময়ে বা পিক আওয়ারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বলে এমন নামকরণ।

ম. তামিম বলেন, 'যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো শুধুমাত্র সংকটকালীন সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য তৈরি করা হয়, সেগুলো সাধারণত ৫ থেকে ১৫ শতাংশ প্ল্যান্ট লোড ফ্যাক্টরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এটা খুব স্বাভাবিক, কিন্তু আমরা তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছি, সারা বছর বিদ্যুৎ না পেলেও ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ক্যাপাসিটি পেমেন্ট পাবে। অন্তত ৮০ শতাংশ লোড ফ্যাক্টরের জন্য আমরা তাদের অনেকের সঙ্গে চুক্তি করেছি। এটাই সমস্যা।'

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো বিশ্বের বেশ কিছু দেশে সরকারই বিদ্যুতের একমাত্র ক্রেতা। সেখানে নিয়ম আছে, সরকার শুধু বেজ-লোড বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে (যেগুলো সারাবছর ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদনে থাকে) ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়।

'ক্যাপাসিটি চার্জের প্রশ্ন তখনই আসে, যখন সরকার চুক্তি অনুযায়ী ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ কিনতে পারে না,' যোগ করেন তিনি।

'পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট'র বিষয়ে অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, 'বেশিরভাগ দেশেই এই ধরনের ছোট ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তবে তারা এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বেজ-লোড বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে কিছুটা বাড়তি দাম দিয়ে দেয়। আর সারা বছর বসে থাকায় ওদের তো অপারেটিং কস্ট খুব একটা হয় না।'

ভারতসহ যেসব দেশে সরকার একমাত্র ক্রেতা নয়, তাদের উদাহরণ দিয়ে এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, সেসব দেশে সরকারি বা বেসরকারি সরবরাহকারীরা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ কিনতে পারে। যখন বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি হয়, তখন দরপত্র ডেকে পিকিং প্ল্যান্টগুলো থেকে সরকার বিদ্যুৎ কেনে। সেখানে একটা প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা থাকায় এতে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও ভোক্তা উভয়ই উপকৃত হয়।

গত ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (সংশোধিত) হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন ২৪ হাজার ১৭১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত দেশে দিনে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছিল গত এপ্রিলে ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট।

পরে চাহিদা বাড়লেও এর চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়নি, বরং সারা দেশে লোডশেডিং করে বিদ্যুতের চাহিদা কমিয়ে রাখা হয়।

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে তারা ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতা তৈরি করতে চায়।

পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, 'বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে বন্ধ করে দেয়।'

কিন্তু সব ক্ষেত্রে এমনটা হচ্ছে না, তার উদাহরণ তুলে ধরলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরাও কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে এমন অবস্থা দেখেছি। পিডিবি ভাবতে পারে যে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের চাকরির কী হবে। কিন্তু মন্ত্রণালয় সব সময়ই পিডিবিকে চাপ দেয় যেন সেগুলো সময়মতো বন্ধ করা হয়।'

জরুরি পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য যেসব এলাকায় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নেই, সেখানে ছোট ছোট কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন তিনি।

'কিন্তু যদি এমন হয় যে, কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বছরের পর বছর ধরে উৎপাদন না করে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জই নিয়ে যাচ্ছে, তবে সেগুলোও খুঁজে বের করা উচিত,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

7h ago