বিচারকের সই-সিল জাল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, ‘উদ্দেশ্য হয়রানি’

দেখতে আসল মনে হলেও বিচারকের সই জাল করে এভাবে ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তৈরি করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারকের সই জাল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বানিয়ে একজনকে জেলহাজতে রাখার ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামে।

গ্রেপ্তারকৃত সেই আসামিকে জামিনে মুক্তি দিয়ে এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক ড. আজিজ আহমেদ ভূঁঞা।

আজ বুধবার তিনি এই আদেশ দেন।

এর আগেও চট্টগ্রাম আদালতে ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় হয়রানির ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আজিজুর রহমান ঢাকার সাভার থানার ফিরিংগীকান্দার বাসিন্দা। ভুয়া একটি সিআর মামলায় বিচারকের সই জালিয়াতি করে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়ে আসা হয় বলে জানিয়েছে আদালত সূত্র।

চট্টগ্রাম জেলা আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজিজুর রহমান আরেকটি মামলায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হাজতি হিসেবে ছিলেন। গত মাসের ২৮ আগস্ট তারিখে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারকের সই নকল করে তৈরি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় তাকে ৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম কারাগারে আনা হয়।'

তিনি বলেন, 'মামলার জামিন শুনানির সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী আদালতকে জানান, এটি ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হলে সেটি ভুয়া হিসেবে শনাক্ত করা হয়। যে মামলায় তাকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করা হয়েছে, তেমন কোনো মামলার অস্তিত্ব চট্টগ্রাম আদালতে নেই।'

আইনজীবীদের কাছে আজিজুর রহমান দাবি করেন, তাকে ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়ে আগেও হয়রানি করা হয়েছে।

তার দাবি, স্থানীয় একজনের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে বিভিন্ন মামলায় জড়ানো হচ্ছে এবং ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়ে জেল খাটাচ্ছে একটি চক্রটি।

মাসখানেক ধরেই আরেকটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় ঢাকার কারাগারে রয়েছেন আজিজুর।

ইফতেখার সাইমুল বলেন, 'সরাসরি জেলা ও দায়রা জজের সই জালিয়াতি করে এভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বানানো সহজ নয়। যে বা যারাই জড়িত থাকুক, আমরা তাদের খুঁজে বের করবো।'

আদালত সূত্রে জানা গেছে, কিছু অসাধু আইনজীবী, আদালত সংশ্লিষ্ট কর্মচারী, পুলিশ ও উকিলদের মুন্সি এই ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বানানোর সঙ্গে জড়িত। আসল গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ফর্মে এসব ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা লিপিবদ্ধ করায় প্রাথমিকভাবে বোঝার উপায় থাকে না, এগুলো আসল নাকি নকল।

তদন্তকারীরা বলছেন, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এসব ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তৈরি করে এই চক্রটি।

চট্টগ্রামের আদালতে যে ভুয়া পরোয়ানার সিন্ডিকেটের কথা বলা হচ্ছে তার একমাত্র শিকার আজিজ নন। এর আগে ২০২১ সালে কিশোরগঞ্জ থেকে সাইফুল নামে একজনকে আদালতে আনা হলে ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে আলোচনা হয়। সেই সময় আদালত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তৈরি করে আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটদের সই ও সিল জাল করে মানুষকে টার্গেট করে হয়রানির জন্য দেশের বিভিন্ন থানায় পাঠানো হচ্ছে।

২০২১ সালের কিশোরগঞ্জের সাইফুলের ঘটনার পর আদালতের কর্মকর্তারা ১৪টি ভুয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা শনাক্ত করেছেন, যেগুলো বিভিন্ন সময়ে আদালত থেকে পাঠানো হয়েছিল।

সিএমএম আদালতের নাজির আবুল কালাম আজাদ সেই বছরের ১৫ অক্টোবর অজ্ঞাতনামা আসামি করে কোতোয়ালি থানায় চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রবিউল আলমের অনুমতিতে মামলা করেন।

তবে মামলা দায়েরের প্রায় দুই বছর পার হলেও কোনো কুল-কিনারা করতে পারেনি তদন্তকারীরা।

বর্তমানে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটি তদন্ত করছে।

চট্টগ্রাম পিবিআই নগর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) নাইমা সুলতানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি আসলে অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়ার মতো। এখানে পদে পদে জালিয়াতির ঘটনা। গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় ব্যবহৃত সিল ও মামলার নম্বর ভুয়া। তবে যে ফর্মগুলোতে এগুলো লেখা হয়, তা আদালতে ব্যবহার করা কাগজগুলোর মতোই।'

তিনি বলেন, 'পরোয়ানা ইস্যুর ফর্ম বা কাগজগুলো সরকারিভাবেই সরবরাহ করা হয়। তবে এগুলোতে কোনো ক্রমিক নম্বর বা সিরিয়াল নম্বর থাকে না। এমনকি কোনো বিশেষ নিরাপত্তা চিহ্নও নেই। তাই এগুলো চিহ্নিত করা প্রায় অসম্ভব।'

'তবে আমরা তদন্তে এটুকু জানতে পেরেছি, অধিকাংশ পরোয়ানা বানানো হচ্ছে ঢাকা থেকে। তবে এই তথ্যও একেবারে নিশ্চিত করে বলা কঠিন। আমাদের তদন্ত এখনো চলছে,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Expatriates, young voters must be allowed to vote: Jamaat chief

Shafiqur holds interim government to its election deadline for April

54m ago