বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে সুষ্ঠু সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য সুনাম কুড়িয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

‘আমরা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, লেনদেনে ভারসাম্য ও উন্নয়ন ব্যয় বজায় রাখার চেষ্টা করছি।’
ছবি: বাসস থেকে নেওয়া

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে স্পেন ও ইউরোপীয় কাউন্সিল আয়োজিত 'টুওয়ার্ডস অ্যা ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল আর্কিটেকচার' শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে এই গুরুত্ব আরোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাপী ক্রেডিট রেটিং সিস্টেম পর্যালোচনা করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, কারণ, এটি বর্তমানে অনেক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের জন্য তহবিলের সুবিধা সীমিত করেছে।

তিনি বলেন, 'আমরা জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে একমত যে বৈশ্বিক ক্রেডিট রেটিং সিস্টেম অবশ্যই পর্যালোচনা করা উচিত। বর্তমান রেটিং সিস্টেম অনেক নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশের জন্য তহবিলের সুবিধাকে আরও সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে।'

শেখ হাসিনা বলেন, তাদের ভোটাধিকার, কোটা ও বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক (এমডিবিএস) এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (আইএফআইএস) প্রতিনিধিত্বের সীমা তাদের দর কষাকষির ক্ষমতাকেও ক্ষুণ্ন করে।

তিনি বলেন, 'আমরা প্রায়শই আন্তর্জাতিক পাবলিক ফাইন্যান্সগুলোকে ব্যয়বহুল ও নাগালের বাইরে দেখতে পাই। ঋণের ঝামেলা এড়াতে আমরা উচ্চ-সুদের ঋণ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করি। বাংলাদেশ কখনই এর ঋণ পরিশোধে খেলাপি হয়নি এবং আমরা সেই রেকর্ড বজায় রাখার আশা করি।'

আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্সিয়াল-আর্কিটেকচারের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং গ্লোবাল সাউথের প্রতিনিধিত্ব করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশের উন্নয়ন বিবরণী দেখায় যে, আমরা আমাদের অংশ করতে পারি।

তিনি বলেন, 'আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার জন্য আমাদের প্রত্যাশার প্রতি সায় দেওয়ার সময় এসেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা স্বীকার করি যে আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্সিয়াল-আর্কিটেকচারের জরুরি সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু সংস্কারের প্রকৃতি ও পরিধির বিষয়ে অ্যাগ্রিমেন্টের ক্ষেত্রে এখনো সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আর এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা গুরুত্বপূর্ণ।'

মহাসচিবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'একটি মৌলিক পরিবর্তন প্রয়োজন।'

এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী পাঁচ দফা প্রস্তাব পেশ করেন। প্রথম প্রস্তাবে তিনি বলেন, এমডিবি, আইএফআই ও বেসরকারি ঋণদাতা সংস্থাগুলোকে তাদের অগ্রাধিকারগুলো পুনরায় সাজাতে হবে এবং এসডিজি বাস্তবায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা মোকাবিলার জন্য অতিরিক্ত তহবিল সংগ্রহ করতে হবে।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা সম্পর্কে তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য স্বল্পব্যয়ে, রেয়াতি হারে তহবিলের পর্যাপ্ততা প্রয়োজন এবং পছন্দসই উচ্চমানের বিপুল পরিমাণে অনুদান এবং সব ঋণদানের উপকরণগুলোতে দুর্যোগের ধারা থাকতে হবে, যাতে দুর্বল দেশগুলো সংকটকালের ধাক্কা সামলাতে পারে।

চতুর্থ দফা সম্পর্কে তিনি বলেন, 'ঋণদাতাদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে ন্যায্য ও কার্যকর ঋণ হিসেবে ত্রাণ ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।'

পঞ্চম ও শেষ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটার পরিবর্তে এসডিআর ঋণের সীমা প্রয়োজন এবং সীমাবদ্ধতার ভিত্তিতে সহজ ঋণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হওয়া উচিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে তার সুষ্ঠু সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য সুনাম কুড়িয়েছে।

তিনি বলেন, 'মহামারির ঠিক আগে আমাদের অর্থনীতি ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। স্বাস্থ্য, জীবনযাত্রার ব্যয় ও জলবায়ু সংকট আমাদের অর্থনীতিকে চাপের মধ্যে ফেলেছে।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বাংলাদেশ আইএমএফের সঙ্গে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা করেছে।

তিনি বলেন, 'আমরা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, লেনদেনে ভারসাম্য ও আমাদের উন্নয়ন ব্যয় বজায় রাখার চেষ্টা করছি।'

তিনি বলেন, 'আমরা আমাদের দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের মাত্রা ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছি।'

এই সভা আহ্বান করায় শেখ হাসিনা স্পেনের প্রধানমন্ত্রী ও ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতিকে ধন্যবাদ জানান।

সেই সময় ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) থিমেটিক অ্যাম্বাসেডর সায়মা ওয়াজেদ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন।

Comments