জনগণ ক্ষমা করবে না তাই সরকার ভোটের অধিকার দিতে রাজি না: নজরুল

বিএনপির লোকরা দোষ না করলেও দোষী বানায়। কোনো ঘটনা না ঘটলেও মামলার আসামি বানায়। মরে গেলেও আসামি হওয়া থেকে বাঁচার উপায় নেই। হজে গেছে, ওমরাহতে গেছে, চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেছে, তারপরও মামলার আসামি
জনগণ ক্ষমা করবে না তাই সরকার ভোটের অধিকার দিতে রাজি না: নজরুল
বিএনপির বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

জনগণ ক্ষমা করবে না তাই সরকার জনগণের ভোটের অধিকার দিতে রাজি না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

একদফা দাবিতে আজ শনিবার দুপুরে ঝালকাঠিতে আয়োজিত পথসভায় তিনি এ কথা বলেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, 'প্রতিদিন জিনিসের যেভাবে দাম বাড়ছে তাতে হালাল উপার্জন দিয়ে জীবীকা নির্বাহ আর সম্ভব না। আর হারাম খেলে কী হয় তা তো আমরা যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করি জানি।'

তিনি বলেন, 'যারা আমাদের এই অবস্থায় পৌঁছে দিয়েছে, তারা কারা? তারা কিন্তু এই কষ্টে নেই। আজকে যে দল ক্ষমতায় তার জেলা পর্যায়ের অঙ্গ দলের একজন নেতা দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের জন্য অভিযুক্ত হয়েছেন।'

সিন্ডিকেট করে তারা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়, কিছু লোক আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'কয় দিন পরে দেখবেন, তারা কানাডায় বেগমপাড়া করেছে, না হয় মালয়েশিয়ায়-সিঙ্গাপুরে সেকেন্ড হোম করেছে। না হয় দুবাইয়ে গুলশান থ্রিতে একটা বাড়ি করেছে। এত আলোচনা হয়, এত কথা হয় কিন্তু কখনো এই সরকার কোনো তদন্ত করে না। যে এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো যে, তারা ৩০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত নির্দেশ দিয়ে স্থগিত করে দিয়েছেন।'

এই বিএনপি নেতা আরও বলেন, 'এ দেশের এক সময়ের অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেব বলেছিলেন যে, ব্যাংক লুটের ব্যাপারে তদন্ত রিপোর্ট বলা যাবে না। কারণ এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ লোকরা জড়িত আছে। এই গুরুত্বপূর্ণ লোক কারা? তারা কি বিএনপির লোক? বিএনপির লোক হলে তাড়াতাড়ি প্রকাশ করতো।

'বিএনপির লোকরা দোষ না করলেও দোষী বানায়। কোনো ঘটনা না ঘটলেও মামলার আসামি বানায়। মরে গেলেও আসামি হওয়া থেকে বাঁচার উপায় নেই। হজে গেছে, ওমরাহতে গেছে, চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেছে, তারপরও মামলার আসামি,' যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশের মানুষ তাদের মাফ করবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'কারণ আমার সন্তানকে আমি খাবার দিতে পারি না, ভালো স্কুলে পড়াতে পারি না। ঈদে-পার্বনে তার গায়ে জামা দিতে পারি না। একটা ডিম খাওয়াতে গেলে ১৬ টাকা লাগে। এ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে তাদের এ দেশ ক্ষমা করবে না।'

তিনি আরও বলেন, 'ক্ষমা করবে না জেনেই এই সরকার কখনো জনগণের ভোটের অধিকার দিতে রাজি না। কারণ যদি জনগণকে ভোটের অধিকার দেওয়া হয়, তাহলে তাদের বাক্সে শূন্য পড়বে। দুই-চারটা পড়তেও পারে, তাদের দিয়ে যারা সুবিধা পেয়েছে; কিছু লোক তাদের ভোট দিতে পারে।'

নজরুল ইসলাম খান বলেন, 'পত্রিকায় রিপোর্ট বের হয়েছে, কোভিডের সময় থেকে এ পর্যন্ত প্রায় কয়েক হাজার নতুন কোটিপতি হয়েছে। আর বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) বলেছে, এই সময়ের মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার কোটি মানুষ আরও অধিক দরিদ্র হয়েছে। যার সামান্য কিছু জমি ছিল, সে এখন ভূমিহীন হয়ে গেছে। ছোটখাটো ব্যবসা ছিল বন্ধ হয়ে গেছে।'

তিনি বলেন, 'এই সরকার যখন দাবি করে উন্নতি হয়েছে, তখন কাকে দেশের মানুষ মনে করে? ওই কয়জন যারা কোটিপতি হয়েছে। আমরা যারা আরও দরিদ্র হয়েছি, তারা কিন্তু এ দেশের মানুষ না। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে যদি সরকার নিজেদের লোক মনে করতো তাহলে এ কথা বলতে পারতো না যে, উন্নতি হয়েছে।'

বড় বড় বিল্ডিং, বড় বড় ব্রিজ, সুন্দর ট্রেন—এগুলো দিয়ে দেশের উন্নয়ন বোঝায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমেরিকার একজন সিনেটর তার বক্তৃতায় বলেছেন, যে দেশের মানুষ না খেয়ে থাকে, যে দেশের মানুষ কাজ পায় না, যে দেশের মানুষ সুখের স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে সেসব দেশে বড় বড় দালান-কোঠা, ব্রিজ গোরস্থানে আলোকসজ্জা করার মতো।

'এই সরকারের উন্নয়ন হলো সে রকম; গোরস্থানে আলোকসজ্জা করার চেষ্টা করছে। আর এটা করতে গিয়ে যে পরিমাণ টাকা বিদেশ থেকে ঋণ করেছে, তার ফলে আজ যদি একটা শিশু জন্ম নেয় সে এক লাখ টাকা ঋণ মাথায় নিয়ে জন্মগ্রহণ করবে। দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানুষের উন্নয়ন খাতে যত টাকা বরাদ্দ, তার চেয়ে অনেক বেশি টাকা বরাদ্দ হলো ঋণ এবং ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য,' বলেন তিনি।

Comments