১৯৯৯ থেকে ২০২৩

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল

এ যেন ইতিহাসেরই ধারাবাহিকতা। মাঠের খেলায় ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও মাঠের বাইরে একটা বিষয়ে অদ্ভুত ধারাবাহিকতা বজায় আছে বাংলাদেশের। অবশ্য এই ধারাবাহিকতা না থাকাটাই হতো সুখকর। সেই ১৯৯৯ সালে প্রথম বিশ্বকাপ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় প্রতি বিশ্বকাপেই বিতর্ক ছিল বাংলাদেশ দলের নিত্যসঙ্গী।

১৯৯৯ (ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ)

১৯৯৯ বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করেও দলে জায়গা পাননি তখনকার অন্যতম সেরা ব্যাটার মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। এই সিদ্ধান্তে আসে তুমুল প্রতিক্রিয়া। এমনকি মিছিলও করেন সমর্থকরা। গণমাধ্যমও তৈরি করে প্রবল চাপ। এক পর্যায়ে তখনকার প্রধান নির্বাচক এনায়েত হোসেন সিরাজকে সরে দাঁড়াতে হয়। বিশ্বকাপ দল থেকে কিপার ব্যাটার জাহাঙ্গীর আলমকে ইনজুরির কারণ দেখিয়ে বাদ দিয়ে যুক্ত করা হয় নান্নুকে। জাহাঙ্গিরও বাড়তি সদস্য হিসেবে ইংল্যান্ড সফর করেন। মানুষের দাবিতে দলে আসা নান্নু বিশ্বকাপে এনে দেন বাংলাদেশের প্রথম জয়। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ২৫ রানে ৫ উইকেট পড়ার পরিস্থিতি থেকে খেলেন ৬৮ রানের অবিস্মরণীয় ইনিংস।

২০০৩ (দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ)

২০০৩ বিশ্বকাপে সিনিয়র কয়েকজন খেলোয়াড়কে বাদ দেওয়া হয়। তারমধ্যে অন্যতম ছিলেন আকরাম খান। তার বাদ পড়াতেও হইচই কম হয়নি। মজার কথা হলো মাশরাফি বিন মর্তুজার চোটে পরে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠানো হয় আকরামকে। তবে সেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ভুলে যাওয়ার মতো। কেনিয়া-কানাডার মতো দলের সঙ্গে হারতে হয়। সব ম্যাচ হেরে দেশে ফেরে বিপর্যস্ত খালেদ মাসুদ পাইলটের দল।

২০০৭ (ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপ)

২০০৭ বিশ্বকাপের দল ঘোষণা আলোচিত ছিল খালেদ মাসুদ পাইলটের বাদ পড়ায়। তখনো পর্যন্ত দেশের সেরা উইকেটকিপার ছিলেন তিনি। তবে ব্যাটে পাচ্ছিলেন না রানের দেখা। তাকে বাদ দেওয়ায় প্রকাশ্যে সিদ্ধান্তের বিরোধিতা বিবৃতি দিয়েছিলেন কয়েকজন বোর্ড পরিচালকও! পাইলটকে বাদ দিয়ে নেওয়া হয়েছিল তখনকার তরুণ মুশফিকুর রহিমকে। একদম প্রথম ম্যাচে ভারতকে হারাতে ফিফটি করেন মুশফিক। এই সিদ্ধান্ত যে সময় উপযোগী ছিল পরে তা প্রমাণ হয়েছে।

২০১১ (ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ)

২০১১ বিশ্বকাপের সহ আয়োজক ছিল বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখছিলেন দলের সেরা পেসার মাশরাফি মর্তুজা। তবে ইনজুরির কারণ দেখিয়ে তাকে বাদ দেওয়া হয়। তিনি ভেঙে পড়েন কান্নায়। এই নিয়েও হইচই হয় তুমুল। পরে গণমাধ্যমে একাধিকবার মাশরাফি বলেছেন, বিশ্বকাপ খেলার মত ফিটনেস তখন ছিল তার। ২০১১ বিশ্বকাপেও দলের অধিনায়ক ছিলেন সাকিব আল হাসান। সেই বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করেছিলেন তখনকার বিসিবি সভাপতি আহম মোস্তাফা কামাল। 

২০১৫ (অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপ)

এই বিশ্বকাপে দল ঘোষণা নিয়ে বড় কোন বিতর্ক হয়নি। তবে দল ঘোষণার এক মাস আগেও একটি কেলেঙ্কারির ঘটনায় কারাগারে ছিলেন পেসার রুবেল হোসেন। রুবেলকে কারাগার থেকে বের করে বিশ্বকাপে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা করে বিসিবি। তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রবল সমালোচনা হয়।

২০১৯ (ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ)

বাকিগুলোর তুলনায়  মোটামুটি নির্ঝন্টাট বলা যায় ২০১৯ বিশ্বকাপের দল ঘোষণা। তবে এখানেও আছে কিছু বিতর্ক। চোটের কারণে নেওয়া হয়নি তাসকিন আহমেদকে। তাসকিন এই খবরে প্রবল ধাক্কা পান, কান্নায় ভেঙে পড়েন এই পেসার। তার বিশ্বাস ছিল তিনি বিশ্বকাপ খেলার মতো। তাসকিনের বদলে যাকে নেওয়া হয় সেই আবু জায়েদ রাহিকে বিশ্বকাপে এক ম্যাচও মাঠে নামানো হয়। খোদ অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজা পেশির চোট নিয়েই খেলেন সব ম্যাচ। তার পারফরম্যান্সও ছিল একদমই বিবর্ণ। চোটে থাকা মাশরাফি খেলতে পারলে তাসকিনকে না নেওয়ার যুক্তি কি ছিল এই প্রশ্ন উঠে তখন।

২০২৩ (ভারত বিশ্বকাপ)

নাটকীয়তার এবার চূড়ান্ত। আড়াই মাস আগেও যিনি ছিলেন দলের অধিনায়ক সেই তামিম ইকবালকে ছাড়া বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ যাত্রার মাত্র আগের দিন রাতের বেলা জানানো হয় দল। তার আগে চলতে থাকে প্রবল অনিশ্চয়তা। পুরো ফিট না থাকা তামিমকে রাখলে অধিনায়কত্ব না করার হুমকি দেন সাকিব আল হাসান। দেন দরবারের পর বাদ পড়েন তামিম। অথচ গত জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আচমকা অবসরের পরদিন তামিমকে ফেরানো হয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে।  এত কিছু করার পর সেই তামিমই পরে নেই বিশ্বকাপ দলে!

তামিমের বাদ পড়ার মতো না হলেও চমক ছিল মাহমুদউল্লাহর দলে থাকা। এশিয়া কাপ সহ টানা চার সিরিজে দলে ছিলেন না তিনি। বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ড সিরিজ দিয়ে তাকে ফেরানো হয়। দুই ম্যাচে ৭৬ বলে ৪৯ আর ২৭ বলে ২১ রান করেই ৩৭ পেরুনো ক্রিকেটার কেটে ফেলেন বিশ্বকাপের টিকেট।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: A day of sharing for some, a day of struggle for others

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

36m ago