শরীরের ব্যথা কমলেও মনের ব্যথা যাচ্ছে না চারণকবি রাধাপদ রায়ের

চারণকবি রাধাপদ রায়। ছবি: সংগৃহীত

দুর্বৃত্তের মারধরে আহত চারণকবি রাধাপদ রায়ের শরীরের ব্যথা চিকিৎসায় অনেকখানি কমে এসেছে। কিন্তু মনের ব্যথা যাচ্ছে না তার। অশীতিপর এই কবি কোনোভাবেই বুঝে পাচ্ছেন না যে, ঠিক কী কারণে তার গায়ে হাত তোলা হলো? কেউ তার শত্রু হতে পারে এমনটিও ভাবতে পারছেন না তিনি।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার এই চারণকবির দিন কাটে নিজ গ্রামসহ আশপাশের এলাকার মানুষকে স্বরচিত কবিতা শুনিয়ে। এতে লোকে খুশি হয়ে তাকে কিছু টাকা-পয়সা দেয়। তা দিয়েই অন্নের সংস্থান হয় তার।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের ভাষ্য, গত শনিবার উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের মাধাইখাল গ্রামে রাধাপদ রায়কে মারধর করে রক্তাক্ত করেন স্থানীয় কদু মিয়া (৪২) ও তার ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম (৩৬)। তারা ভিতরবন্দ ইউনিয়নের বচুয়ারপাড় গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে।

এ ঘটনায় কদু মিয়া ও রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন রাধাপদ রায়। কিন্তু তিন দিনেও তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

বিষয়টি নিয়ে নাগেশ্বরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, শনিবার সকালে রাধাপদ রায় বাড়ির পাশে বিলে মাছ ধরতে যান। কদু মিয়ার নির্দেশে তার ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম বাঁশের লাঠি দিয়ে তাকে বেদম মারপিট করে মাটিতে ফেলে দেন। এ সময় আশপাশে থাকা লোকজন ছুটে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান। পরে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

আজ সোমবার দুপুরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রাধাপদ রায় বলেন, 'আমার ওপর কেন হামলা করা হলো তা এখনো বুঝতে পারছি না। আমার তো কোনো শত্রু নেই।'

রাধাপদ রায়ের ভাষ্য, পাশের গ্রামের বাসিন্দা কদু মিয়া ও রফিকুল ইসলাম গান-বাজনা পছন্দ করেন না। তাকে পেটানোর সময় রফিকুল ইসলাম বলছিলেন, হিন্দু কবিকে পেটালে কিছু হয় না।

হাসপাতালে চিকিৎসায় এখন অনেকখানি ভালো আছেন রাধাপদ। কিন্তু সখেদে তিনি বলেন, 'মনের ব্যথা তো যাচ্ছে না।'

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরাও বলছেন, আসামিরা গান-বাজনার সংস্কৃতির বিরোধিতা করেন। কিন্তু এ কারণেই কেন রাধাপদ রায়ের মতো একজন মানুষকে পেটানো হবে, সেটা বুঝে উঠতে পারছেন না তারা।

নাগেশ্বরী উপজেলার সাংস্কৃতিককর্মী কুমার বিশ্বজিত বর্মণ বলেন, 'রাধাপদ রায় এলাকায় চারণকবি হিসেবে পরিচিত। তিনি তাৎক্ষনিক কবিতা রচনা করে দর্শক-শ্রোতাদের বিমোহিত করেন। এমন একজন মানুষের ওপর হামলা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপর হামলার সামিল। গান বাজনা ও সাহিত্যচর্চার বিরোধিরা চান না যে রাধাপদ রায় কবিতার চর্চা করুন।'

এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান বিশ্বজিত বর্মণ।

আর ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফি বলছেন, প্রায় সাত মাস আগে রফিকুলের বড় ভাই কদু মিয়ার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছিল রাধাপদ রায়ের। তার জেরে এই হামলার ঘটনা ঘটতে পারে।

রাধাপদ রায়ের প্রতিবেশীদের ভাষ্য, তিনি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তার সম্পদ বলতে আছে বসতভিটার ছয় শতাংশ জমি আর একটি বাইসাইকেল। একসময় বিত্তশালী ছিলেন। এখন প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে বাইসাইকলে চড়ে বের হন। রাতে বাড়িতে ফেরেন। নিজের রচিত কবিতা শুনিয়ে তিনি মানুষকে আনন্দ দেন।

রাধারপদ রায়ের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি আশিকুর রহমান বলেন, 'আসামিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারের জন্য তৎপর আছে।'

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

2h ago