শান্তির নোবেলে আলোচনায় যারা

শান্তির নোবেলে আলোচনায় যারা
এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের দৌড়ে আলোচনায় যারা। ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছর নোবেল পুরষ্কার ঘোষণা শুরুর পর থেকেই গুঞ্জন-জিজ্ঞাসা চলছে শান্তিতে নোবেল পাচ্ছেন কে বা কারা। গত ৫০ বছর ধরে নরওয়ের নোবেল কমিটি কখনোই শান্তিতে নোবেলপ্রত্যাশীদের তালিকা আগেভাগে প্রকাশ করেনি। 

তবে মনোনীতদের সংখ্যা জানায় কমিটি। যেমন, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জানিয়েছিল এবারের প্রাথমিক তালিকায় ৩০৫টি নাম আছে। তবে এই ২১২ ব্যক্তি ও ৯৩ সংস্থার নাম কিন্তু জানা যায়নি। এখন প্রশ্ন হলো কারা আছেন এই তালিকায়? 

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ইতোমধ্যে সম্ভাব্য নোবেলজয়ীদের নাম উল্লেখ করে বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেগুলোতে ঘুরে ফিরে আসছে ইরানের নারী আন্দোলন, রাশিয়ায় ইউক্রেনের আগ্রাসন, জলবায়ু ও মানবাধিকার ইস্যুর সঙ্গে জড়িত আলোচিত ব্যক্তি ও সংস্থার নাম। 

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি গুঞ্জন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলোনস্কি ও রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা অ্যালেক্সেই নাভানলিকে নিয়ে। দু'জনই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনবিরোধী অবস্থানের জন্য খ্যাতি অর্জন  করেছেন। 

রয়েছেন চীনের শি জিন পিং-নীতির কট্টর সমালোচক ইলহাম তোহতিও। চীনের মুসলিম উইঘুর সম্প্রদায়ের জন্য লড়াই করে এরইমধ্যে ইউরোপের মানবাধিকার বিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মাননা অর্জন করে নিয়েছেন ২০১৪ সাল থেকে কারাবন্দি এই নেতা। 

তবে নোবেল বিশেষজ্ঞরা এসব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নোবেল জয়ের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। তারা বলছেন, ইরান থেকে চীন, নারী অধিকার, আদিবাসী অধিকার ও পরিবেশ রক্ষার সঙ্গে জড়িতরাই এবার পুরষ্কার পাবেন।  

রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্টকহোমের ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড্যান স্মিথ বলেন, 'এখন সময়টাই অশান্তির। জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সংকট পুরো পৃথিবীর ওপর চাপ বাড়াচ্ছে।' এ অবস্থায় এবার নোবেল জয়ে গ্রেটা থুনবার্গের মতো পরিবেশকর্মী বা রাওনি মেটুকটায়ারের মতো ব্রাজিলের আদিবাসী কর্মীরাই গুরুত্ব পাবে বলে মনে করেন তিনি। 

অসলোর পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক হেনরিক উর্ডালও শান্তিতে নোবেল জয়ী বাছাইয়ে একই ইঙ্গিত দিয়েছেন। 

তার মতে, ২০২৩ সাল হচ্ছে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার ঘোষণার ৭৫তম বছর। তাই সময়ের প্রেক্ষাপটে এবার পুরষ্কার জয়ে মানবাধিকার কর্মীরাই গুরুত্ব পাবে। 

তার নিজের পছন্দের শর্ট লিস্টে রয়েছেন, ইরানের নার্গিস মোহাম্মদী, আফগানিস্তানের মাহবুবা সিরাজ, ফিলিপাইনের ভিক্টোরিয়া তাউলি-কর্পুজ, ইকুয়েডরের হুয়ান কার্লোস জিনতিয়াচ ও জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত কায়ে মো তুন। সংস্থা হিসেবে রয়েছে- নেদারল্যান্ডসের হেগের আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালত– আইসিজে।  

নার্গিস মোহাম্মদী

ইরানের এই মানবাধিকারকর্মী সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড বাতিলের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। ২০১৬ সালের মে মাসে এ আন্দোলনের জেরে তাকে ১৬ বছরের জেলও দেওয়া হয়। শান্তিতে নোবেল জয়ী শিরিন এবাদির নেতৃত্বাধীন 'ডিফেন্ডারস অব হিউম্যান রাইটস সেন্টার (ডিএইিআরসি)- এর ভাইস প্রেসিডেন্ট তিনি। গত বছর বিবিসির প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায়ও ছিলেন নার্গিস মোহাম্মদী।

মাহবুবা সিরাজ

কাবুলে জন্মগ্রহণকারী মাহবুবা সিরাজ নারী ও শিশুদের অধিকার নিয়ে আন্দোলনের জন্য ২৬ বছর নির্বাসনে ছিলেন। ২০০৩ সালে আফগানিস্তানে ফিরে আসার পর দুর্নীতি, নারী ও শিশু অধিকারের জন্য আফগান নারী নেটওয়ার্কসহ বেশ কয়েকটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ২০২১ তালেবান ক্ষমতায় ফিরলেও মাহবুবা সিরাজ দেশ ছাড়েননি। নারী-শিশুদের জন্য কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ৬৯ বছর বয়সী এই নারী ২০২১ সালে টাইমের ১০০ প্রভাবশালীর ব্যক্তির তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিলেন।   

ভিক্টোরিয়া তাউলি-কর্পুজ
 
আন্তর্জাতিক আদিবাসী অধিকারকর্মী। ফিলিপাইনে জন্মগ্রহণকারী ভিক্টোরিয়া আদিবাসী ইস্যুতে জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরামের চেয়ারম্যান ও আদিবাসীদের অধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদকের দায়িত্ব পালন করেন। আদিবাসীদের অধিকার আদায় ছাড়াও ধ্বংসাত্মক উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ, বন রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেন। 

হুয়ান কার্লোস জিনতিয়াচ

ইকুয়েডরের এই নেতা আদিবাসীদের কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত। আমাজন বেসিনে আদিবাসী সংগঠনের প্রতিনিধিত্বকারী ফেডারেশন (সিওআইসিএ)-এ নির্বাচিত নেতা। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আদিবাসী ফোরাম ককাসের সহসভাপতিও ছিলেন।

কায়ে মো তুন

২০১৮ সালে অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে জাতিসংঘে মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত হন কায়ে মো তুন। এরপর ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জান্তা সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাকে বরখাস্ত করা হলেও বিশ্ব দরবারে তিনি মিয়ানমারের বেসামরিক সরকারের প্রতিনিধিত্ব অব্যাহত রাখেন। তাকে হত্যারও চেষ্টা চালায় জান্তা সরকার। 

আইসিজে
 
ইউক্রেন যুদ্ধ, রোহিঙ্গা গণহত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় গেল কয়েক বছর ধরে আলোচিত নাম আইসিজে। নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত এই আন্তর্জাতিক আদালতের কাজ বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিরোধের মীমাংসা করা। ২০২২ সালের ১৬ মার্চ রাশিয়াকে দ্রুত ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন বন্ধের নির্দেশ দেয় আইসিজে।   

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি), ইউরোপীয় কোর্ট ফর হিউম্যান রাইটস ও ইন্টার অ্যামেরিকান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটসও রয়েছে হেনরিক উর্ডালের শট লিস্টে।

তবে অতীত ইতিহাস আছে, সব অনুমান আর জল্পনা-কল্পনা ভুল প্রমাণ করে একদম ভিন্ন কাউকে পুরস্কৃত করতে পারে নরওয়ের নোবেল কমিটি।

 


 

Comments

The Daily Star  | English

CSA getting scrapped

The interim government yesterday decided in principle to repeal the Cyber Security Act which has been used to curb press freedom and suppress political dissent.

5h ago