বেশি কথা বললে সব বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকব: প্রধানমন্ত্রী

‘সব গুছিয়ে দেওয়ার পর এখন ইলেকশন, ভোট, অর্থনীতির পাকা পাকা কথা শুনতে আমি রাজি না’
গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন। ছবি: টিভি থেকে নেওয়া

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের মানুষ যদি বলে রিজার্ভ রক্ষা করতে হবে, তাহলে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেই, পানি দেওয়া বন্ধ করে দেই, সার দেওয়া বন্ধ করে দেই। সব বন্ধ করে বসিয়ে রাখি, আমাদের রিজার্ভ ভালো থাকবে।

আজ শুক্রবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক শাহরিয়ার খান জানতে চান, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২ বছর আগে অনেক বেশি ছিল। কিন্তু আমাদের রিজার্ভ অনেক কমে গেছে। এ বিষয়ে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি না।

এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'করোনার সময় আমদানি বন্ধ ছিল, যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ ছিল। তখন তো রিজার্ভ বেড়েছিল। এরপর যখন সব খুলে গেল, সবকিছু আমদানি শুরু হলো। তখন রিজার্ভ কমবে, এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। আমরা যখন ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি, তখন রিজার্ভ ১ বিলিয়নও ছিল না। ছিল শূন্য দশমিক সাত। আমি যখন ৯৬ সালে সরকার গঠন করি তখন রিজার্ভ ছিল বিলিয়নের নিচে। যেটুকু বেড়েছে, আমাদের সরকারই বাড়িয়েছে।'

তিনি বলেন, 'এখন দেশের মানুষ যদি বলে রিজার্ভ রক্ষা করতে হবে, তাহলে আমি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেই, পানি দেওয়া বন্ধ করে দেই, সার দেওয়া বন্ধ করে দেই। সব বন্ধ করে বসিয়ে রাখি, আমাদের রিজার্ভ ভালো থাকবে। রিজার্ভ বেশি রাখা বেশি প্রয়োজন, নাকি দেশের মানুষের ভালো, মানুষের জন্য কাজ করা বেশি প্রয়োজন। ২০০ ডলারে গম কিনতাম, তা এখন ৬০০ ডলার। ৮০০ ডলারের পরিবহন খরচ এখন ৩-৪ হাজার ডলার লাগছে।'   

'রিজার্ভ নিয়ে অনেকে অনেক কিছু বলতে পারে। আমি তো বলেছি যে যদি এত বেশি কথা হয়, যখন সরকার গঠন করেছিলাম, রিজার্ভ ওইখানে রেখে তারপর ইলেকশন করব। পরে আবার বাড়াব। কিন্তু, করে দেখাব যে এই ছিল। বিদ্যুৎ শতভাগ থেকে কমায়ে ওই ২৮ ভাগে নিয়ে আসব। সবাই একটু টের পাক যে কী ছিল। আমরা তো ভুলে যাই। আমি বিদ্যুৎ মন্ত্রীকে বলেছিলাম, প্রতিদিন যেন কিছু লোডশেডিং দেয়, তাহলে মানুষের মনে থাকবে যে লোডশেডিং আছে। পয়সা খরচ করে তেল কিনে জেনারেটর চালাতে হবে। তখন আক্কেলটা ঠিক হবে যে, না এই অবস্থা তো ছিল,' যোগ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, 'আমরা তো ভর্তুকি দিচ্ছি। কেন আমরা ভর্তুকি দেব। বিদ্যুৎ ব্যবহার করতেছে সবাই, ভর্তুকির সুযোগ নিচ্ছে অর্থশালী বড়লোকরা। এখন একটা স্লট ঠিক করব কতটুকু সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে। তাদের জন্য আলাদা দাম। তার থেকে বেশি যারা করবে তাদের জন্য আলাদা দাম। ইতোমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি ওইভাবে একটা স্লট করতে। যে বেশি ব্যবহার করবে, তাকে বেশি দামে কিনতে হবে।' 

তিনি বলেন, 'বেশি কথা বললে সব বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকব। ইলেকশনের পর যদি আসতে পারি, তাহলে আবার করব। সব গুছিয়ে দেওয়ার পর এখন ইলেকশনের কথা, ভোটের কথা, অর্থনীতির পাকা পাকা কথা শুনতে হয়। আমি এসব শুনতে রাজি না।'

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'আমার ৭৭ বছর বয়স। ১৫ বছর বয়স থেকে মিছিল করি। এ পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। সবাইকে হারিয়েছি। আমি এখানে কিছু পেতেও আসিনি, নিতেও আসিনি। আমি এসেছি দেশের মানুষকে দিতে। আজ দেশ একটা মর্যাদা পাচ্ছে সারা বিশ্বব্যাপী। আগে বাংলাদেশ শুনলে সবাই নাক সিঁটকাতো। এখন বাংলাদেশ শুনলে আলাদা মর্যাদা দিয়ে তাকায়। উন্নয়নের রোল মডেল এটা মাথায় রাখতে হবে। এটা বাতাসে হয়নি। এটা আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলে, দেশের উন্নতি করেছি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছি। যে কারণে এটা সম্ভব হয়েছে।'

'এখন তো কেউ না খেয়ে কষ্ট পায় না। মানুষের খাবার গ্রহণ বেড়েছে। আমাদের উৎপাদনও বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী কিন্তু প্রচণ্ড খাদ্যমন্দা। কেউ বলবে, কেউ বলবে না। আমি নিজে কয়েকটা দেশ দেখলাম। দক্ষিণ আফ্রিকা, ইন্ডিয়া, আমেরিকা, ইংল্যান্ডের সাধারণ মানুষের খবর নেওয়ার চেষ্টা করেছি। প্রতিটি জায়গায়ই ইনফ্লেশন অনেক বেশি। কাজেই আমাদের খাদ্য আমাদের উৎপাদন করতে হবে,' বলেন প্রধানমন্ত্রী।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৮তম অধিবেশনে যোগদানের ফলাফল সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ১৬ দিনের সরকারি সফর শেষে বুধবার দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী।
   
       

    
 

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

5h ago