মহামারি বাদ দিলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১৩ বছরে সর্বনিম্ন

২০২২-২৩ সালে অর্থনীতি বেড়েছে ছয় দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। ২০২১-২২ সালে তা ছিল সাত দশমিক এক শতাংশ।
জিডিপি
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

গত অর্থবছরে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে পাঁচ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এটি গত ১৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) চূড়ান্ত পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানা গেছে।

গত বছরের মে মাসে প্রকাশিত অস্থায়ী প্রাক্কলনে দেখা গেছে যে, ২০২২-২৩ সালে অর্থনীতি বেড়েছে ছয় দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। ২০২১-২২ সালে তা ছিল সাত দশমিক এক শতাংশ।

২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০১১-১২ অর্থবছরের পর সবচেয়ে কম ছিল। তবে করোনা মহামারির সময় ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল তিন দশমিক ৪২ শতাংশ।

সাময়িক সংখ্যার তুলনায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে চূড়ান্ত প্রাক্কলনে কৃষি ও শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। তবে পরিষেবা খাতে এটি কমেছে।

অন্তর্বর্তীকালীন প্রাক্কলনের তুলনায় গত জুনে শেষ হওয়া গত অর্থবছরে পরিষেবা খাতের প্রবৃদ্ধি ৪৭ বেসিস পয়েন্ট কমে পাঁচ দশমিক ৩৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এটি ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ছয় দশমিক ২৬ শতাংশ।

কৃষি খাতে জিডিপি ৭৬ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে তিন দশমিক ৩৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে শিল্প খাতের জিডিপি ১৯ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে আট দশমিক ৩৭ শতাংশ হয়েছে। এক বছর আগে চূড়ান্ত প্রাক্কলনে এটি ছিল নয় দশমিক ৮৬ শতাংশ।

মহামারির দীর্ঘ প্রভাব ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে পড়ে। রিজার্ভ ও টাকার দাম দ্রুত কমেছে এবং মূল্যস্ফীতি বেড়েছে রেকর্ড মাত্রায়।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মূলত মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও মজুরি বাড়েনি। জনগণকে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমাতে হয়েছে।'

বাণিজ্য ও পরিবহন খাতেও মন্দা দেখা দিয়েছে।

তার প্রশ্ন—'কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। তাহলে এ খাতের ঊর্ধ্বমুখী প্রবৃদ্ধি হলো কীভাবে?'

বিবিএসের তথ্য বলছে—জিডিপিতে ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশ অবদান রাখা পাইকারি ও খুচরা ব্যবসার প্রবৃদ্ধি ২৭ বেসিস পয়েন্ট কমে ছয় দশমিক ৩৮ শতাংশ হয়েছে। এটি ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল আট দশমিক ৪৬ শতাংশ।

একই সময়ে জিডিপির সাত দশমিক ২৯ শতাংশ অবদান রাখা পরিবহন ও সংরক্ষণ খাত চূড়ান্ত প্রাক্কলনে ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমে হয়েছে পাঁচ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

আবাসন, আর্থিক ও বিমা কার্যক্রম, গৃহায়ন ও খাদ্য পরিষেবায় মন্দার কারণে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি কমেছে।

গত বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো জিডিপি নিয়ে ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিএস। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের ওপরও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

এতে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ছয় দশমিক শূন্য সাত শতাংশ।

কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ। এটি ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল দুই দশমিক শূন্য সাত শতাংশ।

সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ থেকে কমে তিন দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হয়েছে নয় দশমিক ৬৭ শতাংশ। আগের বছর শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল সাত দশমিক ১৭ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন আরও বলেন, 'দেশে গত দুই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। এটি সেবা খাতের প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলেছে।'

দেশে ২০২২ সালের মে মাস থেকে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী আছে।

তিনি শিল্প খাতের জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে 'বিভ্রান্তিকর' বলে মন্তব্য করেছেন।

তার প্রশ্ন—'কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। তাহলে এ খাতের ঊর্ধ্বমুখী প্রবৃদ্ধি হলো কীভাবে?'

গত বছরের চূড়ান্ত প্রাক্কলনে কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী দেখা গেলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে তা কমতে দেখা গেছে।

জাহিদ হোসেনের মতে, 'আবাদি জমি বাড়ছে না বলে কৃষি খাতে যেকোনো মাত্রায় প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক। বরং চাষযোগ্য জমি ধীরে ধীরে কমছে।'

Comments