জাবিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনে বিধি-নিষেধ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ছবি: সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনকে নির্দিষ্ট সময়ের গণ্ডিতে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে 'শিক্ষা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখার' জন্য সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চে সব ধরনের অনুষ্ঠান রাত ১০টার মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রাত ১০টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করা না হলে সেখানে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে এবং আয়োজক সংগঠনকে কালো তালিকাভুক্ত করে তাদেরকে আর কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ ছাড়া, অ্যালামনাই ও বিভিন্ন ব্যাচ আয়োজিত নিয়মিত অনুষ্ঠানের বিষয়েও এসেছে নতুন নির্দেশনা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শীতকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অ্যালামনাই ও ব্যাচগুলোর পুনর্মিলনী এবং বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান প্রায়ই মধ্যরাত পর্যন্ত মুক্তমঞ্চে হয়। এতে শিক্ষা ও ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর পাশাপাশি ক্যাম্পাসে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২০ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের বিশেষ সভায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সীমিতকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের অনুষ্ঠান তিন বছরে একবার আয়োজন করা যাবে। সাবেক ও বর্তমান ব্যাচগুলোর বর্ষপূর্তি কিংবা পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করা যাবে না। রাত ১০টার পর কোনো সংগঠন অনুষ্ঠান করলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের পাশাপাশি কালো তালিকাভুক্ত করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন নির্দেশনাকে 'অযৌক্তিক, কর্তৃত্ববাদী এবং সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য ক্ষতিকর' দাবি করে বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার জাবি ছাত্রফ্রন্টের বিবৃতিতে বলা হয়, দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে, এ ধরনের নির্দেশনা তার মূলে কুঠারাঘাত করে।

জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সুমাইয়া জাহান বলেন, 'সাংস্কৃতিক চর্চা কখনোই শিক্ষার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল নির্মাণ ও এর পরিচর্যার জন্য প্রশাসনের এমন নিয়ম সংস্কৃতি চর্চার জন্য ক্ষতিকর।'

জাবি ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায় বলেন, 'অব্যবস্থাপনা, বহিরাগত নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাসহ প্রশাসনের ব্যর্থতার দায় শিক্ষার্থীদের ওপর দোষ আকারে চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিফলন হচ্ছে এই সিদ্ধান্ত। আগামী সিন্ডিকেট সভার মধ্যে যদি প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত বাতিল না করে, আমরা স্ট্রাইকে যাবো। প্রয়োজনে সিন্ডিকেট হতে দিবো না। স্টেকহোল্ডারদের মতামত না নিয়ে এরকম সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী৷'

এ ধরণের সিদ্ধান্ত মুক্ত সংস্কৃতি বিকাশের অন্তরায় হবে কি না, জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আলম বলেন, 'অনুষ্ঠান করার জন্য সারাদিন তো আছে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

Large-scale Chinese investment can be game changer for Bangladesh: Yunus

The daylong conference is jointly organised by Bangladesh Economic Zones Authority and Bangladesh Investment Development Authority

14m ago