মুড সুইংয়ের কারণ ও লক্ষণ কী, নিয়ন্ত্রণ করবেন যেভাবে

ছবি: সংগৃহীত

দিনের শুরুতে মনটা হয়তো ভালোই ছিল, কিন্তু হঠাৎ মনে হলো 'মন ভালো নেই'। কিংবা কোনো কাজ স্বাভাবিকভাবেই করছিলেন, হুট করে মনে হচ্ছে 'নাহ! বিরক্ত লাগছে'। এই যে মেজাজের এই দ্রুত পরিবর্তন, এটিকেই আমরা মুড সুইং বলি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় 'মুড ডিজঅর্ডার।'  

মুড সুইং কী, কেন হয় আর তার প্রতিকার কী এ বিষয়ে আমাদের জানিয়েছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ।

মুড সুইং কী

আমাদের সবারই বিভিন্ন কারণে মন খারাপ হয়ে থাকে। কিন্তু তা যদি বারবার ঘটে এবং কোনো কারণ ছাড়াই দীর্ঘক্ষণ মন খারাপ থাকে তাহলে তা একটু চিন্তারই বিষয়। কারণ কারণ ছাড়া ঘন ঘন মেজাজের পরিবর্তন স্বাভাবিক কিছু নয়। এই সমস্যাটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলে 'মুড ডিজঅর্ডার'।

ডা. হেলাল আহমেদ বলেন, 'সাধারণ আবেগ, যেটাকে আমরা বলি দুঃখবোধ বা আনন্দবোধ সেটা কিন্তু আমাদের মুড সুইং না। সেটি হলো ব্যক্তিগত ভালোলাগা-মন্দলাগা। মুড সুইং হচ্ছে মুড ডিজঅর্ডার রোগের অন্যতম লক্ষণ, যা ১৫ থেকে ২৯ বছর নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই হতে পারে।'

মুড সুইং কেন হয়

  • বিভিন্ন কারণে মুড সুইং হতে পারে। শারীরিক কিংবা মানসিক কোনো রোগের ফলেও এটা হতে পারে, আবার পারিবারিক, সামাজিক কিংবা স্বাস্থ্যগত কোন কারণেও হতে পারে।
  • মানসিক চাপ,অবসাদ, হতাশা, অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা,  মাদক সেবন, মদ্যপান, ঘুমের সমস্যা, মেনোপজ, পেরিমেনোপজ ইত্যাদি থেকেও মুড সুইং দেখা দিতে পারে। এসব কারণ মূলত হরমোনের ওপর প্রভাব ফেলে। এই ঘটনাগুলো দীর্ঘস্থায়ী হলে মানসিক সমস্যা দেখা দেয় এবং মুড ডিজঅর্ডারের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে।
  • তাছাড়া, পুষ্টিহীনতা, লৌহ, ভিটামিন ও খনিজের অভাবে মেজাজের দ্রুত উঠা-নামা হয়ে থাকে।

মুড সুইংয়ের লক্ষণ

কারণ ছাড়াই ঘন ঘন মন খারাপ, দীর্ঘক্ষণ খারাপ লাগা কাজ করা এবং এক পর্যায়ে কেঁদে ফেলা, অকারণে দুঃখবোধ, বিরক্তি ভাব, মানসিক অবসাদ, নিঃসঙ্গতা অনুভব, আত্মবিশ্বাসের অভাব, সবসময় ক্লান্তিবোধ, অতিরিক্ত রাগ বা অতিরিক্ত স্পর্শকাতরতা- এই লক্ষণগুলো যদি দীর্ঘদিন আপনার মধ্যে কাজ করে, তাহলে বুঝতে হবে আপনি মুড ডিজঅর্ডার বা মুড সুইং সমস্যায় ভুগছেন।

তবে একজনের মধ্যে সবগুলো লক্ষণই যে প্রকাশ পাবে না নয়। একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম লক্ষণ প্রকাশ পায়।

মুড সুইং নারী না পুরুষের বেশি হয়

অনেকের ধারণা, মুড সুইংয়ের সমস্যায় নারীরা বেশি ভোগেন। কিন্তু নারী-পুরুষ সবারই এটি হতে পারে। তবে আমাদের এই উপমহাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটের কারণে নারীদের মধ্যে বেশি মুড সুইংয়ের প্রবণতা দেখা যায় বলে জানান ডা. হেলাল আহমেদ। মূলত ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়।

মুড সুইং নিয়ন্ত্রণ

ডা. হেলাল আহমেদ বলেন, মুড ডিজঅর্ডারের লক্ষণ প্রকাশ পেলে অবশ্যই একজন  মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে, যিনি তাকে প্রাথমিক অবস্থায় পথ্যের মাধ্যমে এবং পরে প্রয়োজন অনুসারে কাউন্সিলিংয়ের পরামর্শ  দেবেন।

তাছাড়া তাকে মেনে চলতে হবে বেশ কিছু বিষয়। নিজেকে সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত রাখা, ব্যায়াম, সুষম খাবার গ্রহণের পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। নিজেকে নিজের মধ্যে গুটিয়ে না রেখে মেলে ধরতে হবে, নিজের মনের ভাব কাছের কোনো মানুষের কাছে ব্যক্ত করুন।

ডার্ক চকলেট কি মুড সুইং কমায়

মন খারাপের অজুহাত দিয়ে অনেক সময় আমরা নিজেকে ডার্ক চকলেট উপহার দিই। তবে ডা. হেলাল আহমেদ জানান, মুড সুইং কমানোর ক্ষেত্রে ডার্ক চকলেটের কোনো ভূমিকা নেই। হয়তো ডার্ক চকলেট খাওয়ার পর নিজের মধ্যে আত্মতৃপ্তি কাজ করে, সাময়িক ভালোলাগা কাজ করে। কিন্তু ডার্ক চকলেট মুড সুইং কমায় ধারণাটি ভুল।

শরীরের অসুস্থতায় হলে যেমন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত, ঠিক তেমনি মনের অসুখ হলেও তার নিরাময় জরুরি। যদি মনে হয়, মুড সুইংয়ের লক্ষণগুলো প্রকট আকার ধারণ করেছে তবে মনোচিকিৎসকের কাছে গিয়ে সমাধান করুন।

Comments

The Daily Star  | English

Govt sets Tk 4.99 lakh crore target for NBR in FY26

The government has set a revenue collection target of Tk 4.99 lakh crore for the National Board of Revenue (NBR) in the upcoming fiscal year 2025–26 — a 7.6 percent increase from the revised target for this year.

9h ago