আলোচিত ১০ ভুতুড়ে হোটেল

ছবি: সংগৃহীত

১৯৮০ সালে হলিউডে মুক্তি পেয়েছিল ভুতুড়ে সিনেমা দ্য শাইনিং। যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর দ্য স্ট্যানলি হোটেলের ওপর নির্মিত এই সিনেমাটি দেখে রোমাঞ্চপ্রিয় অনেক মানুষেরই এরকম ভুতুড়ে হোটেলে রাত্রিযাপন করার শখ জেগেছিল। কলোরাডোর ওই হোটেলের মতো বিশ্বের বিভিন্ন শহরের অনেক পুরোনো হোটেলের কথা ইন্টারনেটের বিভিন্ন ফোরামে প্রায়ই আলোচিত হয়। 

বিনামূল্যের সুইমিং পুল কিংবা ওয়াইফাই পেলে অনেকে যেমন খুশি হন, তেমনি ভুতুড়ে বা ব্যাখাতীত বিষয়বস্তুর সন্ধান পেলেও অনেকে উদ্বেলিত হন। 

আমেরিকার সবচেয়ে বিখ্যাত কিছু হোটেলে দীর্ঘদিন ধরে ভূত বা ব্যাখ্যাতীত ঘটনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যেমন, হলিউডের রুজভেল্ট হোটেলে ম্যারিলিন মনরোর প্রেতাত্মা এবং জর্জিয়ার সাভানায় মার্শাল হাউসে আমেরিকার গৃহযুদ্ধে নিহত সেনাদের প্রেতাত্মার কথা শোনা যায়। 

ধরুন, বিদেশে কোনো হোটেল রাত্রিযাপনের সময় খেয়াল করলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত কোনো সেনাও আপনার সঙ্গে একই রুমে অবস্থান করছেন! কেমন অনুভূতি হবে তখন?

ভৌতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে যারা আগ্রহী, তারা বিশ্বের এই ভুতুড়ে হোটেলগুলোর কথা জেনে রাখতে পারেন। কখনো এই শহরগুলোতে গেলে হোটেলগুলোতে ঢুঁ মারতে পারেন। আর যারা ভূতে ভয় পান, তারাও হোটেলগুলোকে চিনে রাখলেন, যাতে সেগুলো থেকে ১০০ হাত দূরে থাকতে পারেন!

ওমনি পার্কার হাউজ, ম্যাসাচুসেটস

যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে দীর্ঘসময় ধরে পরিচালিত এই হোটেলে দুএকটি ভূতের আবাস থাকতে পারে। বোস্টনের বিলাসবহুল এ হোটেলের অতিথিরা যথাযথ সেবা পাচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য নাকি এর প্রতিষ্ঠাতা হার্ভি পার্কারের প্রেতাত্মা ঘোরাঘুরি করেন। হোটেলটির তৃতীয় তলার একটি রুমে লেখক চার্লস ডিকেন্স কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন। অনেকে বলেন, ডিকেন্সের প্রেতাত্মাও নাকি এখনো হোটেলের লবি ও বিভিন্ন কক্ষে বিচরণ করে। 

হোটেল চেলসি, নিউ ইয়র্ক

প্যাটি স্মিথ, অ্যান্ডি ওয়ারহল, জ্যাকসন পোলক, ম্যাডোনার মতো তারকারা চেলসি হোটেলের প্রশংসা করেছেন। তবে কেউ কেউ এই হোটেলের ভৌতিক বিভিন্ন ঘটনাও উল্লেখ করেছেন। ২০১১ সাল থেকে সংস্কারের জন্য এটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চলতি বছর আবারও চালু হয়েছে। সাবেক অনেক কর্মী ও অতিথির দাবি, তারা বিভিন্ন সময় হেটেলটিতে সিড ভিশাস নামের এক খুনির প্রেতাত্মা দেখেছেন। এই হোটেলে বান্ধবীসহ অবস্থানের সময় তাকে খুনের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিলেন সিড। অনেকে নাকি বিভিন্ন সময় বিখ্যাত কবি ডিলান থমাসের অবয়বও দেখেছেন। হোটেলটির বাইরে একটি ফলকে ডিলান থমাসের একটি উদ্বৃতি আছে, যাতে লেখা আছে, 'ডিলান থমাস হোটেল চেলসিতে থেকেছেন ও লিখেছেন এবং এখান থেকেই তিনি মৃত্যু উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন।'

দ্য রেড লায়ন ইন, ম্যাসাচুসেটস

ভৌতিক অভিজ্ঞতার উদ্দেশ্যে অনেকেই ম্যাসাচুসেটসের এই হোটেলে গিয়েছেন। হোটেলের বিভিন্ন জায়গায় ভৌতিক কর্মকাণ্ডের দেখা মিললেও সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে চতুর্থ তলায়। হোটেলের বিভিন্ন অতিথি এবং পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের দাবি, তারা 'হাতে ফুল আছে, এমন একটি ভৌতিক একটি মেয়েকে' দেখেছে এবং 'টপ হ্যাট (উঁচু হ্যাট) মাথায় এক লোককে' দেখেছে। অনেক অতিথি বলেছেন- কেউ তাদের বিছানা থেকে দৌড়ে পালাচ্ছে, এমন অভিজ্ঞতাও তাদের হয়েছে। 

দ্য ড্রিস্কিল, টেক্সাস

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের অস্টিন শহরে অনেক ভুতুড়ে জায়গা আছে। তবে দ্য ড্রিস্কিল হোটেলটি নিঃসন্দেহে তালিকার শীর্ষে অবস্থান করবে। এই হোটেলে যেসব প্রেতাত্মা ঘোরাঘুরি করে, তাদের মধ্যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনের প্রেতাত্মাই বোধ হয় সবচেয়ে জনপ্রিয়। ১৯৩৪ সালে এই হোটেলেই প্রেসিডেন্ট জনসন ও তার স্ত্রী প্রথম ডেট করেছিলেন। ১৯৬৪ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার সময়ও তিনি এই হোটেলেই অবস্থান করছিলেন। ওই নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন এবং হোটেলের বলরুমে সেই জয় উদযাপন করেছিলেন। সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করা একটি চার বছরের শিশুর প্রেতাত্মাকেও হোটেলে বিভিন্ন সময় দেখা গেছে বলে শোনা যায়। ভৌতিক অভিজ্ঞতা অন্বেষণকারীরা বলছেন, 'তারা হোটেলটিতে দূর থেকে আসা বলের পিং-পং শব্দ পেয়েছেন, অথচ এই শব্দের কোনো উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে এই হোটেলে যত ব্যাখ্যাতীত কর্মকাণ্ড দেখা যায়, তাদের মধ্যে সবেচেয়ে পরিচিত হচ্ছে দুই দম্পতির ভূত, যারা কয়েক দশকের ব্যবধানে এই হোটেলে থাকার সময় আত্নহত্যা করেছিলেন। 

এমিলি মরগ্যান হোটেল, সান অ্যান্টোনিও

এই হোটেলটি ১৯২৪ সালে তৈরি করা হয়। তবে এটি প্রথমে ছিল একটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, যার ১২ ও ১৪ তলায় ছিল হাসপাতাল ও সার্জারি বিভাগ। বিভিন্ন সময় এই দুটি তলার অতিথিরা বলেছেন, তারা সাদা পোশাকের নারীদের অবয়ব প্রত্যক্ষ করেছেন এবং মাঝরাতে হঠাৎ করে ফোন পেয়েছেন, অথচ অন্যপাশ থেকে কেউ কোনো কথা বলেনি। এই হোটেলটি নিহত সেনাদের কবরস্থান দ্য অ্যালামোর ঠিক বিপরীত দিকে অবস্থিত। দ্য অ্যালামোও ভৌতিক নিদর্শনের জন্য পরিচিত। 

ওমনি শোরহাম হোটেল, ওয়াশিংটন, ডিসি

ওমনি শোরহাম হোটেল হলো ওয়াশিংটন, ডিসির সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী এবং সবচেয়ে ভুতুড়ে হোটেল। প্রচলিত আছে, বিংশ শতকের গোড়ার দিকে হোটেলের একটি স্যুটে একজন অল্পবয়সী মেয়ে এবং একজন কর্মচারী উভয়ই রহস্যজনকভাবে মারা যান। এরপর থেকেই হোটেলের যে অংশে তারা মারা গিয়েছিলেন, সেখান থেকে অদ্ভুত শব্দ শুনতে পান অতিথিরা।

হোটেল ডেল করোনাডো, সান ডিয়েগো

সান ডিয়েগোর সবচেয়ে বিখ্যাত ভূতের বসবাস নাকি এই হোটেলেই। ঐতিহাসিক এই হোটেলটি ১৮৮৮ সালে চালু হয়। ১৮৯২ সালে এই হোটেলের আতিথ্য গ্রহণ করেন কেট মরগ্যান নামের এক নারী। তিনি তার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তারা দুজনই ছিলেন ভ্রাম্যমাণ কন আর্টিস্ট। যাইহোক, তার স্বামীর আসার কথা থাকলেও তিনি আর আসেননি এবং চারদিন পর হোটেল থেকে করোনাডো বিচে যাওয়ার মুখে কেটকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তিনি গর্ভবতী ছিলেন। হোটেলের যেই রুমে কেট অবস্থান করছিলেন, সেই ৩৩২৭ নম্বর কক্ষটি পরবর্তীতে ব্যাপক পরিচিতি পায়। অনেকেই নাকি করোনাডা সৈকতে এবং হোটেলে কেটের প্রেতাত্মা দেখেছেন।

দ্য ল্যাংহাম, লন্ডন

প্রচলতি আছে ল্যাংহামের ৩৩৩ নম্বর কক্ষে এক তরুণ প্রায়ই আড্ডা দিতে আসতো। এখন হোটেলের অতিথি ও কর্মচারীরা তার প্রেতাত্মা দেখতে পান। এ ছাড়া সামরিক পোশাক পরা এক ব্যক্তি, একজন জার্মান প্রিন্স এবং হোটেলের বেজমেন্টে নেপোলিয়ন দ্য থার্ডের প্রেতাত্মাও নাকি নিয়মিত দেখা দেয়!

ক্রিসেন্ট হোটেল অ্যান্ড স্পা, আরকানসাস

বিশ্বের অন্যতম ভুতুড়ে হোটেল হিসেবে এর কুখ্যাতি আছে। ১৯৩০-এর দশকে এটি ক্যানসার হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। অতিথিদের দাবি তারা হোটেলে থাকার সময় ঠান্ডা স্পর্শ, অস্বাভাবিক ছায়া এবং ফিসফাস শব্দ শুনেছেন। এমনকি হোটেলটিতে ভৌতিক বিষয় সম্পর্কিত বাৎসরিক সম্মেলনও আয়োজন করা হয় যাতে বক্তব্য দেন আরকানসাস প্যারানরমাল অ্যান্ড অ্যানোমালাস স্টাটিড টিমের ল্যারি ফ্ল্যাক্সম্যানের মতো ব্যাক্তিরা। 

দ্য হলিউড রুজভেল্ট, লস অ্যাঞ্জেলেস

হলিউড রুজভেল্টের জনপ্রিয় প্রেতাত্মাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অভিনেতা মন্টগোম্যারি ক্লিফ্টের প্রেতাত্মা। অনেকেই দাবি করেছেন তারা হোটেলটিতে এই অভিনেতাকে দেখেন। লাস্যময়ী অভিনেত্রী ম্যারিলিন মনরো এই হোটেলে অবস্থান করেছিলেন। তিনি যে কক্ষে ছিলেন, তার আয়নাতেও নাকি মাঝে মাঝে মনরোর অবয়ব ভেসে ওঠে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

12h ago