যুদ্ধের পর গাজার নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ নেবে ইসরায়েল: নেতানিয়াহু

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২৮ অক্টোবর তেল আবিবের কিরিয়া সামরিক ঘাঁটিতে বক্তব্য রাখছেন। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২৮ অক্টোবর তেল আবিবের কিরিয়া সামরিক ঘাঁটিতে বক্তব্য রাখছেন। ছবি: এএফপি

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অঙ্গীকার করেছেন, যুদ্ধের পর ইসরায়েল গাজার 'সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থার' নিয়ন্ত্রণ নেবে।

গতকাল সোমবার নেতানিয়াহুর বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম স্ট্রেইটস টাইমস।

তিনি জানান, ইসরায়েল গাজার যুদ্ধে 'কৌশলগত বিরতি' দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে, যাতে জিম্মিরা নিরাপদে বের হয়ে আসতে পারেন এবং ত্রাণসামগ্রী গাজায় প্রবেশ করতে পারে।

তবে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ সত্ত্বেও তিনি আবারও সার্বিকভাবে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নাকচ করেছেন।

মার্কিন টিভি চ্যানেল এবিসি নিউজে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, তিনি মনে করেন যুদ্ধের পর অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ইসরায়েলের গাজা উপত্যকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্ব নেওয়া উচিত।

ইসরায়েল-গাজা সীমান্তে হাওয়িটজার কামান মোতায়েন করেছে ইসরায়েল। ছবি: স্ট্রেইটস টাইমস
ইসরায়েল-গাজা সীমান্তে হাওয়িটজার কামান মোতায়েন করেছে ইসরায়েল। ছবি: স্ট্রেইটস টাইমস

এবিসি নিউজকে গতকাল সোমবার নেতানিয়াহু বলেন, 'আমি মনে করি ইসরাইলের উচিত অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়া। কারণ আমাদের হাতে এই দায়িত্ব না থাকলে কী ঘটে, তা আমরা দেখেছি।'

মানবিক কারণে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, যুদ্ধবিরতি তার দেশের যুদ্ধের লক্ষ্যমাত্রাকে (হামাসকে নিশ্চিহ্ন করা) বাধাগ্রস্ত করবে।

'১-২ ঘণ্টার ছোট ছোট কৌশলগত বিরতি আমরা আগেও নিয়েছি। পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা ত্রাণ, মানবিক সহায়তা সেখানে (গাজায়) যেতে দিতে পারি। অথবা আমাদের কোনো জিম্মি বের হয়ে আসতে চাইলেও বিরতি নেওয়া যেতে পারে', বলেন তিনি।

নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেন, 'তবে আমার মনে হয় না সার্বিকভাবে যুদ্ধবিরতির কোনো সম্ভাবনা আছে।'

ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার স্মৃতিসৌধের সামনে ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে আয়োজিত বিক্ষোভে নেতানিয়াহুর কার্টুন সম্বলিত পোস্টারের ওপর পা রেখে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছেন দেশটির নাগরিকরা। ছবি: এএফপি
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার স্মৃতিসৌধের সামনে ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে আয়োজিত বিক্ষোভে নেতানিয়াহুর কার্টুন সম্বলিত পোস্টারের ওপর পা রেখে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছেন দেশটির নাগরিকরা। ছবি: এএফপি

এখনো আন্তর্জাতিক মহলের কাছ থেকে আসা যুদ্ধবিরতির আহ্বানে সাড়া দেয়নি ইসরায়েল বা হামাস।

ইসরায়েল বলেছে, ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে জিম্মি হওয়া বন্দীরা মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয়।

হামাস বলেছে, যতদিন গাজার বিরুদ্ধে হামলা চলতে থাকবে, ততদিন তারা জিম্মিদেরও মুক্তি দেবে না আর নিজেরাও যুদ্ধ থামাবে না।

রাফাহ অঞ্চলে ইসরায়েলি বোমার হাত থেকে বাঁচতে ছুটে পালাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। ছবি: স্ট্রেইটস টাইমস
রাফাহ অঞ্চলে ইসরায়েলি বোমার হাত থেকে বাঁচতে ছুটে পালাচ্ছে ফিলিস্তিনিরা। ছবি: স্ট্রেইটস টাইমস

৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হন। এ সময় হামাস ২৪০ জনেরও বেশি লোককে জিম্মি করে, যাদের মধ্যে ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকরা আছেন।

এরপর থেকে ইসরায়েল গাজার বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ও নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলে এই হামলায় সম্প্রতি বিমানবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছে ইসরায়েলের স্থলবাহিনী।

গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে, যার বেশিরভাগই শিশু ও নারী।

ওয়াশিংটন ত্রাণ প্রবেশের জন্য যুদ্ধ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়ে আসছে।

তবে ইসরায়েলের মতো যুক্তরাষ্ট্রও যুক্তি দিয়েছে, পূর্ণ যুদ্ধবিরতি দেওয়া হলে হামাস এর ফায়দা নিয়ে আবারও সংঘবদ্ধ হতে পারে।

সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ বিষয়টি নিয়ে ফোনে নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনা করেন।

আতশবাজি নয়, গাজার আকাশে ফ্লেয়ার জ্বালিয়ে বোমাহামলার লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করছে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। ছবি: স্ট্রেইটস টাইমস
আতশবাজি নয়, গাজার আকাশে ফ্লেয়ার জ্বালিয়ে বোমাহামলার লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করছে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী। ছবি: স্ট্রেইটস টাইমস

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ফোন কলে বাইডেন ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনের বিষয়টি আবারও জানান এবং বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদ রাখতে ইসরায়েলকে অনুরোধ করেন।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সোমবার সতর্ক করেন, গাজা 'শিশুদের কবরস্থানে' রূপান্তরিত হচ্ছে। তিনি শিগগির যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর স্থল অভিযান ও নিরবচ্ছিন্ন বোমাবর্ষণে আক্রান্ত হচ্ছে বেসামরিক ব্যক্তি, হাসপাতাল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জা ও জাতিসংঘের অবকাঠামো—যার মধ্যে আছে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো। গাজায় কেউই নিরাপদ নয়।'

'একইসঙ্গে, হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনীগুলো বেসামরিক ব্যক্তিদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে এবং ইসরায়েলের দিকে নির্বিচারে রকেট হামলা চালিয়ে যাচ্ছে', যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

5,500 new govt jobs likely

The government is likely to approve the creation of over 5,500 new posts across various ministries and agencies today, following proposals submitted by at least 10 ministries and divisions, officials said.

7h ago