সিডনিতে ইসরায়েলি গণহত্যাবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিলেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ

ইসরায়েলি গণহত্যাবিরোধী বিক্ষোভে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলি গণহত্যাবিরোধী বিক্ষোভে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। ছবি: এএফপি

গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে ও অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত স্থাপনা সিডনি হারবার ব্রিজে হাজারো মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। এক পর্যায়ে ওই বিক্ষোভে যোগ দেন উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ।  

আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স ও এএফপি।

গত বছর একটি উচ্চ নিরাপত্তার ব্রিটিশ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় ফেরেন অ্যাসাঞ্জ। সিডনি হারবার ব্রিজের ওপর দিয়ে হেঁটে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার সময় অ্যাসাঞ্জের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরা ও অস্ট্রেলিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রধানমন্ত্রী বব কার ছিলেন।

তবে বিক্ষোভে অংশ নিলেও উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বা গণমাধ্যমের কাছে কোনো বক্তব্য দেননি অ্যাসাঞ্জ। 

হাজারো বিক্ষোভকারী আজ রোববার গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও ত্রাণ বিতরণের পরিমাণ বাড়ানোর দাবিতে সিডনির সাগর সৈকতে অবস্থিত বিখ্যাত সেতুতে ভিড় জমান। সকলেই গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সৃষ্টি মানবিক সংকটের প্রতিবাদ জানান। 

প্রায় দুই বছর ধরে চলা গাজার যুদ্ধে ইসরায়েলের নির্বিচার ও গণহত্যামূলক হামলায় নিহতের সংখ্যা ৬০ হাজার পেরিয়েছে। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত সরকার ও মানবিক সংস্থাগুলো বলেছে, তীব্র খাদ্য সংকটের কারণে গাজায় ফিলিস্তিনিরা অনাহারে ভুগছেন এবং অঞ্চলটি দুর্ভিক্ষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ফ্রান্স, ব্রিটেন ও কানাডা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। দেশগুলো গাজা সংকটের কূটনীতিক সমাধানের দাবি করেছে।

অস্ট্রেলিয়া যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানালেও এখনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

তবে গত মঙ্গলবার আরও ১০-১২টিরও বেশি দেশের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া 'দুই রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে' ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।

সিডনিতে ফিলিস্তিনপন্থি অস্ট্রেলীয়রা ঝড়ো বাতাস ও প্রবল বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে সেতুর ওপর দিয়ে হেঁটে যান। এ সময় তারা 'অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি চালু' ও 'ফিলিস্তিন মুক্ত কর' শ্লোগানে মুখর হন।

সিডনি হারবার ব্রিজে ইসরায়েলি গণহত্যাবিরোধী বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি
সিডনি হারবার ব্রিজে ইসরায়েলি গণহত্যাবিরোধী বিক্ষোভ। ছবি: এএফপি

নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের পুলিশ জানায়, বিক্ষোভ চলাকালীন সময় যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিতে হাজারো বাড়তি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

নিউ সাউথ ওয়েলসে বামপন্থি গ্রিনস পার্টির সিনেটর মেহরিন ফারুকি সিডনির কেন্দ্রে অবস্থিত ল্যাং পার্কে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে বলেন, এই বিক্ষোভ ও পদযাত্রা 'ইতিহাস তৈরি করবে'।

তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে 'কঠোরতম বিধিনিষেধ' আরোপের দাবি জানান এবং অভিযোগ করেন, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় 'গণহত্যা' চালাচ্ছে।

এর আগে, 'এই বিক্ষোভ বন্ধ হওয়া উচিত' বলে মন্তব্য করেছিলেন নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস মিনস। সিনেটর মেহরিন ওই বক্তব্যের জন্য কড়া ভাষায় প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করেন।  

অসংখ্য বিক্ষোভকারীর হাতের ব্যানারে হাজারো নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের নামসহ তালিকা মুদ্রিত ছিল।

লেবার পার্টির ব্যাকবেঞ্চ এমপি এড হিউসিক বিক্ষোভে অংশ নেন। তিনি তার দল, দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান।

২০২৩ সালের অক্টোবরে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অতর্কিত হামলা চালিয়ে এক হাজার ২০০ মানুষকে হত্যা ও ২৫০ জনকে জিম্মি করে। ওই ঘটনার জেরে সেদিনই প্রতিশোধমূলক পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। সে সময় থেকে টানা প্রায় দুই বছর ধরে গাজার যুদ্ধ চলছে।  

হারবার সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটারেরও বেশি। এটি ১৯৩২ সালে চালু হয়।

অনন্য নির্মাণশৈলী ও স্থাপত্যের কারণে এটি সিডনি, অস্ট্রেলিয়া এবং একইসঙ্গে, বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপনার অন্যতম হিসেবে বিবেচিত।

Comments