৭০ বছর ধরে গাছ লাগাচ্ছেন সিরাজুল

সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার। ছবি: স্টার

এখন তার বয়স ৮২ বছর। এর মধ্যে প্রায় ৭০ বছর ধরে তিনি গাছ লাগাচ্ছেন। বলছি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়নের পূর্ব আটখালী গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম হাওলাদারের কথা।

নিজের বাড়ির উঠান-বাগান থেকে শুরু করে প্রতিবেশীর বাড়ি ও সরকারি রাস্তার পাশেও গাছ লাগিয়েছেন তিনি। শুধু নিজের গ্রামেই নয়, আশেপাশের অন্তত ১০ গ্রামজুড়ে আছে তার লাগানো নানান প্রজাতির গাছ। এ পর্যন্ত তিনি অন্তত ৫০ হাজার গাছ লাগিয়েছেন।

সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার এলাকাবাসীর কাছে বৃক্ষপ্রেমী হিসেবে সমাদৃত।

পটুয়াখালী শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে ডাকুয়া গ্রামের টিনশেডের ঘরে বসে কথা হয় সিরাজুলের সঙ্গে। পরে গ্রাম ঘুরে ঘুরে দেখান তার লাগানো গাছগুলো। পরম মমতায় গাছগুলো বেড়ে উঠছে। কোনো গাছ ৫০ বছর পুরোনো। নিজের সন্তানের মতোই সযত্নে প্রতিপালন করছেন এসব গাছ।

তিনি জানান, বাবা আলতাফ হোসেন হাওলাদারের সাত ছেলের মধ্যে তিনি সবার ছোট। ঢাকা নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে কামিল (এমএ) পাস করেন ১৯৮৬ সালে। গলাচিপা শহর ও নিজ গ্রামের কয়েকটি মসজিদে ইমামতির চাকরি করেছেন।

'ছোটবেলা থেকেই গাছ লাগানোর প্রতি ঝোঁক ছিল' উল্লেখ করে সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়। ছায়া দেয়। ফল দেয়। গাছের ছায়ায় ক্লান্ত পথিক বিশ্রাম নেন। গাছের পাতা মাটিতে পচে জৈব সার হয়।'

তিনি জানান, বেশিরভাগ চারা নিজেই বাড়িতে তৈরি করেন। আবার কিছু বাজার থেকে কেনেন। মূলত বর্ষায় গাছ লাগান। বাকি সময় গাছের পরিচর্যা করেন।

তার রোপণ করা গাছের মধ্যে আছে—সুপারি, নারিকেল, পেয়ারা, জাম্বুরা, গাব, তাল, মেহগনি, রেইনট্রি, সুন্দরী ইত্যাদি।

সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার। ছবি: স্টার

প্রতিবেশী দেলোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার সরকারি রাস্তার দুই পাশে ও অন্যের জমিতেও গাছ লাগান।

গ্রামের দোকানদার আবু তাহের জানান, নিজের বাড়ি, গ্রামের পতিত জায়গা, সরকারি রাস্তার দুই পাশসহ সব সর্বত্রই সিরাজুল ইসলাম হাওলাদারের লাগানো গাছ চোখে পড়ে।

'গাছ লাগানো যেন তার নেশা ও পেশা', যোগ করেন তাহের।

সিরাজুলের মেয়ে হামিদা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাবার এ কাজে আমরা খুশি।'

সিরাজুল বলেন, 'গাছ লাগাতেই ভালো লাগে। এগুলো আমার সন্তানের মতো। খালি-পতিত জায়গা দেখলেই আমি সেখানে গাছ লাগিয়ে দিই। জায়গাটির মালিক কে তা বড় কথা নয়। সব জায়গায় গাছ লাগিয়ে সবুজের সমারোহ ঘটানোর পাশাপাশি প্রকৃতিকে সুস্থ রাখাই মূল কথা।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা গাছ লাগানোর চেয়ে গাছ কাটতে বেশি পছন্দ করি। সবারই গাছ লাগানো উচিত। কাজের প্রয়োজনে একটি গাছ কাটলে তার পরিবর্তে কমপক্ষে দুইটি গাছ লাগানো কর্তব্য।'

ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ রায় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিরাজুল ইসলাম হাওলাদারের গাছ লাগানোর অভ্যাস আমাকে মুগ্ধ করেছে। তার এ কাজ প্রশংসার দাবিদার। তিনি গাছ লাগিয়ে গ্রামের চেহারাই পাল্টে দিয়েছেন। তার এ কাজ সবার জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা সরকারিভাবে বন বিভাগ থেকে কিছু চারা বরাদ্দ পাই। এখন থেকে বরাদ্দকৃত সব চারা আমরা তাকে দেবো, যাতে তিনি ঘুরে ঘুরে চারা গাছগুলো লাগাতে পারেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Yunus opens second round of talks to strengthen national unity

'Beautiful July Charter' would be unveiled following discussions, he says

1h ago