দিনভর হিজবুল্লাহর ড্রোন-রকেট হামলা, ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটিতে ধ্বংসযজ্ঞ
গাজায় ইসরায়েলের-হামাস সংঘাত শুরুর পর হামাসের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ। হিজবুল্লাহ বাহিনীর সাম্প্রতিক এক হামলায় ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের বিরানিত সেনা ঘাঁটি বড় আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গতকাল সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সোমবার দক্ষিণ লেবাননে কামানের গোলা ছুঁড়ে হামলার সূত্রপাত ঘটায়। তবে আইডিএফ দাবি করেছে, তারা হিজবুল্লাহ বাহিনীকে এগিয়ে আসতে দেখে হামলা শুরু করে।
ইসরায়েলের অতর্কিত হামলার পর বেশ কিছু রকেট ও মর্টার ছুঁড়ে জবাব দেয় হিজবুল্লাহ। এসব হামলায় কেউ হতাহত না হলেও বিরানিত ঘাঁটি ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়। ভিডিও ফুটেজ থেকে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল।
ইসরায়েলের সেনবাহিনী জানিয়েছে, এই হামলার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের আরব আল-আরামশে ও বার'আম অঞ্চল এবং বিরানিত সামরিক ঘাঁটি।
এরপর আইডিএফ যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার ও ট্যাংক নিয়ে দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহ'র অবস্থানে হামলা চালায়।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউভ গ্যালান্ট দাবি করেছেন, অক্টোবর ৮ থেকে শুরু করে গতকাল পর্যন্ত হিজবুল্লাহ এক হাজারেরও বেশি রকেট, মর্টার, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ব্যবহার করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে।
অপর কে ঘটনায় আইডিএফ লেবাননের মারওয়াহিন গ্রামে হিজবুল্লাহ'র অবকাঠামোর ওপর হামলা চালায়। আইডিএফের দাবি, সেখান থেকে হিজবুল্লাহ ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছিল।
পরবর্তীতে লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তের একাধিক অঞ্চল থেকে ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী অবস্থানে ২৫টি রকেট ও ৩টি আত্মঘাতী ড্রোন হামলা চালায় হিজবুল্লাহ।
ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় শহর কিরিয়াত শিমোনা, মানারা ও মারগালিয়তে আকাশ পথে হামলার সতর্কতাসূচক সাইরেন বেজে ওঠে। দেশটির আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বেশ কয়েকটি রকেটকে ঠেকিয়ে দিতে সমর্থ হয়। বাকিগুলো উন্মুক্ত স্থানে ভূপাতিত হয়।
৩টি বিস্ফোরক যুক্ত আত্মঘাতী ড্রোন সীমান্তে আইডিএফের একটি চৌকিতে আঘাত হানলেও এতে কেউ হতাহত হননি।
হিজবুল্লাহ দিনভর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পরিচালিত রকেট ও মর্টার হামলার দায় স্বীকার করেছে।
৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালালে প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হন। সে সময় ইসরায়েলি ভূখণ্ড থেকে প্রায় ২৪০ জন ইসরায়েলি ও বিদেশী নাগরিককে জিম্মি করে হামাস।
এ ঘটনার পর হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার নেয় ইসরায়েল, যার অংশ হিসেবে ৪৬ দিন ধরে গাজা অবরুদ্ধ করে নির্বিচার বিমান ও স্থল হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। গাজার সরকার জানিয়েছে, গত দেড় মাসে ১৩ হাজার ৩০০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে ৫ হাজার ৬০০ শিশু ও ৩ হাজার ৫৫০ নারী আছেন।
ইসরায়েলের দাবি, ৭ অক্টোবরের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ ইসরায়েল-লেবানন সীমান্তে হামলা চালিয়েছে। তবে তারা পূর্ণ মাত্রার অভিযান বা হামলা পরিচালনা করেনি।
একইভাবে, ইসরায়েল হামলার প্রত্যুত্তর দিলেও লেবাননের ভূখণ্ডে অভিযান চালায়নি। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা গাজার দিকে নজর স্থির রাখতে চায়।
লেবানন-ইসরায়েল সীমান্তে সংঘাতে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের ৩ বেসামরিক ব্যক্তি ও ৬ সেনা নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েল জানায়, এসব হামলায় হিজবুল্লাহর ৭৬ জন কর্মী সহ মোট ১০০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বেসামরিক ব্যক্তি ও রয়টার্সের এক সাংবাদিক আছেন।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেন, '(হিজবুল্লাহ) আগুন নিয়ে খেলছে'।
'আগুনের উত্তর আরও বলিষ্ঠ আগুন দিয়ে দেওয়া হবে। আমাদের ধৈর্য্যের পরীক্ষা নেওয়া ঠিক হবে না, কারণ আমরা শুধু আমাদের ক্ষমতার ছোট একটি অংশ (তাদেরকে) দেখিয়েছি। যারা আমাদের ক্ষতি করে, আমরা তাদের ক্ষতি করব', যোগ করেন তিনি।
Comments