চমেক

১ মাসের বেশি সময় সিটি স্ক্যান মেশিন নষ্ট, রোগীদের চরম ভোগান্তি

চমেক
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক)। ছবি: সংগৃহীত

ষাটোর্ধ্ব সিরাজুল ইসলাম কয়েক বছর ধরে ফুসফুসের রোগে ভুগছেন। গত সপ্তাহে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আউটডোরে গেলে চিকিৎসক তাকে সিটি স্ক্যান করার পরামর্শ দেন। 

সিরাজুল জানতেন চমেক হাসপাতালে স্বল্পমূল্যে সিটি স্ক্যান পরীক্ষা করানো যায়। কিন্তু পরীক্ষার জন্য হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে গিয়ে জানতে পারেন, হাসপাতালের একমাত্র সিটি স্ক্যান মেশিনটি নষ্ট।

সিরাজুলের ছেলে জহিরুল ইসলাম বলেন, 'বাবার চিকিৎসার জন্য লোহাগড়া উপজেলা থেকে এসেছি। গ্রামে একটা ছোট মুদির দোকান চালাই সেই আয় দিয়েই ছয় সদস্যের সংসার চালাতে হয়। বাবাকে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিটি স্ক্যান পরীক্ষা করানোর সামর্থ্য আমার নেই।'

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, এক মাস আগে হাসপাতালের একমাত্র সিটি স্ক্যান মেশিনটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সিরাজুলের মতো অনেক দরিদ্র রোগী চমেক হাসপাতালে সিটি স্ক্যান সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ২৪ অক্টোবর থেকে এই পরিষেবা বন্ধ রয়েছে বলেও জানা যায়।

চমেক হাসপাতাল এবং বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সূত্রে জানা যায়, চমেক হাসপাতালে সিটি স্ক্যান পরিষেবা পেতে পরীক্ষার ধরন অনুযায়ী ২ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ হয়, অন্যদিকে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তার জন্য খরচ হয় ৬ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষীপুর জেলাসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অন্য কোনো সরকারি হাসপাতালে সিটি স্ক্যান পরিষেবা নেই। 

চমেকের মেডিসিন বিভাগের প্রাক্তন প্রধান অধ্যাপক ডা. সুজাত পল বলেন, আঘাত বা রোগজনিত কারণে শরীরের ভেতরে টিস্যু বা অঙ্গের কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা বিশদভাবে বোঝার জন্য ডাক্তাররা রোগীদের সিটি স্ক্যান করার পরামর্শ দেন। 

সাধারণত স্ট্রোক, মাথায় আঘাত, বুকে বা পেটের অভ্যন্তরে কোনো ধরনের স্ফীতি সম্পর্কে  বিস্তারিত জানতে বা শরীরের কোনো অংশে আঘাতের অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য সিটি স্ক্যানের পরামর্শ দেওয়া হয়।

সিটি স্ক্যান পরিষেবাটি চমেক হাসপাতালে প্রথম শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালে কিন্তু ২০১৪ সালে মেশিনটি অকার্যকর হয়ে পড়ায় আট বছর পরে পরিষেবাটি বন্ধ হয়ে যায়, চমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, এরপরে, চমেক হাসপাতালে পরিষেবাটি প্রায় পাঁচ বছর  বন্ধ ছিল। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হাসপাতালে নতুন মেশিন বসানো হলে পরিষেবাটি পুনরায় শুরু হয়।

হিটাচি ব্র্যান্ডের মেশিনটির দাম সাত কোটি টাকা উল্লেখ করে চমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে মেশিনটি বসানোর পর প্রায় তিন বছর আট মাস সেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটেনি।

চমেক হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুবাস মজুমদার জানান, গত ৬ জুন প্রথমবারের মতো মেশিনে সমস্যা দেখা যায় এবং এই কারণে সেই সময় সিটি স্ক্যান পরিষেবা ১৭ দিন বন্ধ ছিল।

তিনি বলেন, মেশিনের ওয়ারেন্টির মেয়াদ ২০২৬ সাল পর্যন্ত। আমরা তখন বিষয়টি স্থানীয় এজেন্ট মেডিটেল প্রাইভেট লিমিটেডকে জানিয়েছি। এই কোম্পানি ওয়ারেন্টির মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মেশিনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে।

'তারা সমস্যাটি সমাধান করে এবং ২৪ জুন পরিষেবা আবার চালু হয়,' বলেন তিনি।

এরপর মেশিনটি ২৪ অক্টোবর আবার বন্ধ হয়ে যায়।

'মেডিটেলের কর্মকর্তারা বলেছেন যে মেশিনের একটি টিউব নষ্ট হয়ে গেছে, কিন্তু তারা এখনও এটি প্রতিস্থাপন করতে পারেনি,' তিনি বলেন।

'প্রতিদিন শতাধিক রোগী, যাদের বেশিরভাগই আর্থিকভাবে অসচ্ছল তারা চমেক হাসপাতালে সিটি স্ক্যান পরিষেবা পেতেন কিন্তু এখন তাদেরকে তিন থেকে চার গুণ বেশি মূল্যে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরিষেবা নিতে হচ্ছে, বলেন অধ্যাপক সুবাস মজুমদার।

যোগাযোগ করা হলে, মেডিটেল (প্রা.) লিমিটেডের কারিগরি ব্যবস্থাপক বাবুল মিয়া বলেন, জুন মাসে মেশিনটি নষ্ট হলে তারা সমস্যাটি সমাধান করেন এবং সিটি স্ক্যান পরিষেবা আবার চালু হয়, কিন্তু অক্টোবর মাসে মেশিনটি আবার নষ্ট হলে তারা অনুসন্ধান করে দেখেন সম্ভবত চোর ঘরের বাইরে থেকে মেশিনের আর্থিং তার কেটে নিয়ে গেছে এবং এই কারণে যখন মেশিনটি চালু করা হয়, তখন ভোলটেজের তারতম্যের কারণে মেশিনের টিউবটি নষ্ট হয়ে গেছে।'

'এখন প্রিন্সিপাল কোম্পানি বলেছে যে তারা টিউবটি প্রতিস্থাপন করবে না, কারণ এটি নিরাপত্তা সমস্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যা ওয়ারেন্টি শর্তের আওতায় নয়,' তিনি যোগ করে বলেন, 'আমরা এই বিষয়টি চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।'

'চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে টিউবটি কিনতে হবে,' তিনি বলেন।

যোগাযোগ করা হলে, চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, ওয়ারেন্টির সময় পর্যন্ত মেশিনটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়িত্ব মেডিটেল কোম্পানির। তিনি বলেন, 'মেশিনটি ইনস্টল করার পর থেকে কোম্পানি এটির দেখভাল করছে, কোম্পানির দুই জন কর্মী সিটি স্ক্যান রুমে প্রতিদিন দায়িত্ব পালন করছেন।'

আর্থিং ক্যাবল চুরির বিষয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক বলেন, 'আমরা বিষয়টি জানি না। কোম্পানির কর্মীরা মেশিনটির দেখভাল করছেন এবং তাই তারা এটি আরও ভালভাবে জানবেন। পিডব্লিউডি এর আরও দুটি আর্থিং তার এখনও সেখানে আছে, সেগুলি তো চুরি হলো না, তাহলে কেন সিটি স্ক্যান মেশিনের আর্থিং ক্যাবল চুরি হবে?'

'আমি গত ১৫ নভেম্বর কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে মেশিনের সমস্যা সমাধানে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি চিঠি লিখেছিলাম। আসলে তারা মেশিনের সমস্যা সমাধানে গড়িমসি করছে,' বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
NID cards of Sheikh Hasina and family locked

NIDs of Hasina, 9 family members 'locked'

The NIDs of the 10 listed individuals were locked through an official letter on April 16

1h ago