২০২২-২৩ অর্থবছর

স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি কমেছে ১৩ শতাংশ

স্থলবন্দর
লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাক। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার ফাইল ফটো

দেশে বিদ্যমান ডলার সংকটের কারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্থলবন্দরগুলো দিয়ে, বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারত থেকে আমদানি ১৩ শতাংশেরও বেশি কমেছে।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের (বিএলপিএ) তথ্য অনুসারে, গত অর্থবছরে দেশের ১৫ স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় এক কোটি ৭৪ লাখ টন পণ্য আমদানি হয়েছিল।

এতে আরও বলা হয়, গত তিন অর্থবছরের মধ্যে স্থলবন্দরগুলো দিয়ে আমদানি-রপ্তানির এটাই সবচেয়ে কম পরিমাণ।

এর মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে এক লাখ ৯৯ হাজার টন পণ্য আমদানি করা হয়েছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি আগের বছরে তুলনায় ছয় শতাংশ বেড়ে প্রায় ১৩ লাখ টন হয়েছে।

লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে ওই বছর সর্বোচ্চ ৩০ লাখ ৪০ হাজার টন ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় ২০ লাখ ৬০ হাজার টন পণ্য আমদানি হয়েছে।

স্থলবন্দরগুলো দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশের আমদানি প্রধানত যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, ভোগ্যপণ্য, সুতা, তুলা ও রাসায়নিক পণ্য।

পেঁয়াজ, রসুন, আলু ও হলুদের মতো পণ্যও ভারত থেকে আমদানি করা হয়।

ইন্ডিয়া ব্র্যান্ড ইক্যুইটি ফাউন্ডেশনের তথ্যে জানা যায়, ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানিস্থল। দেশের মোট আমদানি পণ্যের ১২ শতাংশ ভারত থেকে আনা হয়।

২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। এর আগের বছর তা ছিল ১৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার।

ওই বছর বাংলাদেশ ২১২ কোটি ডলারের পণ্য ভারতে রপ্তানি করে।

গত অর্থবছরে স্থলবন্দরগুলো দিয়ে ভারত থেকে আসা পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ছয় হাজার ৩৪৫টিতে। এর আগের বছর তা ছিল সাত লাখ ৩১ হাজার ৪৭০টি।

বিএলপিএর ট্রাফিক বিভাগের উপ-পরিচালক মোসাম্মৎ ফয়জুন্নাহার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডলার ঘাটতি ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় ভারত থেকে আমদানি কমেছে।'

তিনি জানান, স্থলবন্দরগুলো দিয়ে আমদানি কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারত থেকে পাথরের চালান কমে যাওয়া।

ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে অসুবিধা হওয়ায় ভারত থেকে আমদানি কমেছে।'

যেমন, ব্যবসায়ীদের এখন পণ্য আমদানির জন্য ১০০ শতাংশ মার্জিন দিতে হয়।

ভারতীয় রুপিসহ ডলারের অভাবে ছোট ব্যবসায়ীরা সময়মতো এলসি খুলতে হিমশিম খাচ্ছেন।

এ ছাড়া, ভারত কিছু পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এবং বাংলাদেশ অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করছে।

আবদুল মাতলুব আহমাদ মনে করেন, 'এসব কারণে গত অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি কমেছে।'

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি করা লালমনিরহাটের জুহাইনা এন্টারপ্রাইজের মালিক এএসএম রায়হান কবির রিগ্যান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগে প্রতি মাসে প্রায় চার হাজার টন পাথর আমদানি করতাম। এলসি খুলতে অসুবিধা হওয়ায় বর্তমানে এর পরিমাণ প্রায় এক হাজার টনে নেমে এসেছে।'

তার অভিযোগ, 'এলসি খোলার জন্য ব্যাংকগুলোর ১১০ শতাংশ মার্জিন দরকার। চুক্তি নিষ্পত্তির পর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ ফেরত দেওয়া হয়।'

রিগ্যান আরও বলেন, 'ব্যাংকগুলো প্রতি ডলারের বিপরীতে ১৩৭ টাকা ৫০ পয়সা (শতভাগ মার্জিনসহ) নিচ্ছে। ফলে আমদানি খরচ বেশি হচ্ছে।'

বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী ফেরদৌস আরা বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রিজার্ভ কমে যাওয়া বন্ধ করতে এবং গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানিতে উৎসাহ দিতে আমদানি সীমিত করা হচ্ছে।'

তিনি জানান, কিছু উন্নয়ন প্রকল্প পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে বলে ভারত থেকে নির্মাণসামগ্রী আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

1h ago