এমপি প্রার্থীর ঋণ পুনঃতফসিলে নিয়ম ভাঙল ন্যাশনাল ব্যাংক

ন্যাশনাল ব্যাংক, লোকসান, ব্যাংক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, মূল্যস্ফীতি, ইপিএস,

ন্যাশনাল ব্যাংক তার এক গ্রাহকের খেলাপি ঋণ আড়াল করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর ডাটাবেজে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করেছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক চিঠিতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক পরে বেসরকারি ব্যাংকটিকে এর কারণ ব্যাখ্যা করতে বলেছিল এবং জানতে চেয়েছিল এজন্য কেন তাদের কর্মকর্তাদের জরিমানা করা হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ডাটাবেজে মিথ্যা তথ্য জমা দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা যেতে পারে।

গত ৬ ডিসেম্বর ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দিয়ে বলা হয়, গত ১৫ নভেম্বর সিআইবি ডাটাবেজে খেলাপি 'মরিয়ম কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের' ঋণ প্রথমে ব্যাড অ্যান্ড লস (বিএল) ক্যাটাগরিতে দেখানো হয়। যা পরে গত ৩ ডিসেম্বর স্ট্যান্ডার্ড (এসটিডি) ক্যাটাগরিতে দেখানো হয়।

বাংলাদেশ কৃষক লীগের উপদেষ্টা আলম আহমেদ মরিয়ম কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি গাজীপুর-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আইনি লড়াইয়ের মধ্যে আছেন।

চিঠি দেওয়ার আগে বাংলাদেশ ব্যাংক এই অসঙ্গতির বিষয়ে জানতে চাইলে ন্যাশনাল ব্যাংক জানিয়েছিল, ঋণ পুনঃতফসিল করা হয়েছে।

কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, সিআইবি ডাটাবেজে অনাপত্তিপত্র (এনওসি) ছাড়াই এই ঋণ স্ট্যান্ডার্ড ক্যাটাগরিতে দেখানো হয়েছে, যা তাদের নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তারা বিষয়টির ব্যাখ্যা চেয়ে ব্যাংকটিকে চিঠি পাঠিয়েছেন। কিন্তু, আদালত তিন মাসের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করেছেন।

আলম আহমেদ ন্যাশনাল ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ঋণ নিয়েছিলেন এবং ৪৯১ কোটি টাকা বকেয়া আছে।

বেসরকারি ব্যাংকটি ঋণ পুনঃতফসিল করলেও বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ আবেদনে দেওয়া ঠিকানা পরিদর্শনে গিয়ে মরিয়ম কনস্ট্রাকশনের কোনো ব্যবসায়িক কার্যক্রম পায়নি। ফলে, গত ২৩ অক্টোবর পুনঃতফসিল বাতিলের নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ন্যাশনাল ব্যাংকের এই গ্রাহক ঋণের টাকা উত্তোলন করে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ ঘটনার তদন্ত করছে।

ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহমুদ হোসেন বুধবার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এটি তাদের 'অনিচ্ছাকৃত ভুল'।

তিনি বলেন, ব্যাংকের সিআইবি বিভাগের কর্মকর্তারা ভুল করে বিএল ক্যাটাগরির পরিবর্তে স্ট্যান্ডার্ড ক্যাটাগরিতে (৩ ডিসেম্বর) ঋণ দেখিয়ে সিআইবি ডাটাবেজ আপডেট করেছিলেন। পরে তারা গ্রাহককে খেলাপি দেখিয়ে সিআইবির প্রতিবেদন আবার আপডেট করেন।

মেহমুদ হোসেন বলেন, 'আমরা জানতে পেরেছি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্বাচন কমিশনকে ঋণখেলাপির বিষয়ে অবহিত করেছে, কারণ তিনি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে চান।'

তবে, ওই গ্রাহকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার বিচারপতি আলম আহমেদকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুমতি দিতে ও তার জন্য প্রতীক বরাদ্দে ইসিকে নির্দেশ দেন।

পরে গাজীপুর-৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমি চেম্বার বিচারপতির আদেশ বাতিল চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন।

বুধবার চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে শুনানির জন্য ২ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল আলম আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ঋণখেলাপি নই। এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।'

Comments

The Daily Star  | English

BNP rally begins at Nayapaltan

The rally will conclude at Manik Mia Avenue, where the closing speech will be delivered by Tarique Rahman

29m ago