বয়সভিত্তিক পর্যায়ে ফলাফলের চেয়েও যেখানে বেশি নজর স্টুয়ার্ট ল’র

Stuart Law
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ থাকার সময় স্টুয়ার্ট ল। ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ

বয়সভিত্তিক পর্যায়ে জয়-পরাজয়ই কি মুখ্য? নাকি আদর্শ প্রক্রিয়া অনুসরণে বেড়ে উঠার মসৃণ রাস্তা ধরা বেশি জরুরী? বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচ স্টুয়ার্ট ল বেছে নিলেন দ্বিতীয়টি। তার মতে কাঁচা প্রতিভার সমাবেশকে পরিপক্ব জায়গায় নিয়ে যেতে হলে হাঁটতে হবে নির্দিষ্ট ছকে, ফলের চিন্তায় মাথা ঘামিয়ে রাস্তা ভুলে গেলে চলবে না।

এবার দক্ষিণ আফ্রিকায় হতে যাওয়া অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দলটি তৈরির পেছনে ছিলেন ল। তার অধীনে জুনিয়র টাইগাররা জিতেছে এশিয়া কাপ। তাদের নিয়ে বেশ ঝমকালো উদযাপনও হয় দেশে। বিশ্বকাপেও তাই তারা কেমন করেন, তা নিয়ে আছে মানুষের কৌতূহল।

তবে সোমবার মিরপুরে সংবাদ সম্মেলনে ল জানালেন তার মূল অগ্রাধিকারের জায়গায় ফল নেই, আছে অন্য চিন্তা,  'প্রক্রিয়া সবসময় প্রথম অগ্রাধিকার। আপনি যদি অনেক ওপরের বিষয় যেমন জয় নিয়ে চিন্তা করেন, তাহলে এই পথে কী করতে হবে তা ভুলে যাবেন। তো আমি শুধু খেলা বা শেষের ফলের দিকে মনোযোগ দেই না। বরং যা আমাদের হাতে আছে তা নিয়ন্ত্রণ করতে চাই। আর আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে প্রস্তুতি, কীভাবে আমরা এগোবো, নিজেদের পরিকল্পনায় অনড় থাকা, ভিন্ন প্রতিপক্ষের জন্য কৌশল সাজানো এবং সব কাজ করে প্রতি ম্যাচে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে যাওয়া। এটিই আমার মূল মনোযোগের জায়গা।'

'সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হলো পরের ম্যাচ। আর সেটি এখন ২০ তারিখে, ভারতের বিপক্ষে। তো এই মুহূর্তে সেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ওই ম্যাচের পর এটি শেষ। পরের ম্যাচ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবারে একটি করে ম্যাচ, সেই একই পুরনো কথা। তবে প্রক্রিয়া অনুসরণে কঠোর পরিশ্রম করা।'

২০২০ সালে যুব বিশ্বকাপ জিতেছিলো বাংলাদেশ। সেই দলে খেলা অনেকেরই পা পড়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। এবারের দলটি থেকেও অনেককে আগামীর জাতীয় দলে দেখছেন ল। তবে  বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যে ফারাক সেটাও কয়েকজনের পারফরম্যান্সে এরমধ্যে হয়েছে স্পষ্ট।

এর আগের যুব বিশ্বকাপগুলোতেও বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে অন্য দেশের যারা ছিলেন, সিনিয়র ক্রিকেটে এসে তারা দ্রুত উপরে উঠেছেন, আর সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে খাবি খেয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।

কাজেই ফল নাকি প্রক্রিয়া অনুসরণ? বয়সভিত্তিক পর্যায়ে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনটা বেশি অগ্রাধিকার পাবে এই প্রশ্ন পুরনো। ল মনে করিয়ে দিলেন এই পর্যায়ে খেলোয়াড়দের ভেতর স্রেফ প্রতিভাটাই থাকে, সেই প্রতিভা বাস্তবায়নের পথে যেতে হলে পরের এগিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটা বেশি জরুরি,  'শুধু বাংলাদেশ নয়, বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে যেকোনো দলে প্রতিভা থাকে অনেক। এখানে শুধু প্রতিভাটাই থাকে। বিষয়টা হলো চাপের মুহূর্তে ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করা। তা করতে পারলে পরবর্তী ধাপে তারা মনোযোগ পাবে। ক্রিকেটারদের জন্য এটি (অনূর্ধ্ব-১৯) দুই বছরের যাত্রা।'

এশিয়া কাপে ভালো খেলে ব্যাটার আশিকুর রহমান শিবলি, অলরাউন্ডার মাহফিজুর রহমান রাব্বি, পেসার মারুফ মৃধা এরমধ্যে আলো কেড়েছেন। বিশ্বকাপেও এই তরুণদের ঝলক দেখার অপেক্ষায় যুব দলের কোচ, তিনি চান তারা যেন নিজেদের মেধার অপচয় না করে, 'বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার সম্ভাবনার ছাপ রাখছে। তারা এখন যে সুযোগ পাচ্ছে, সবার মনোযোগের কেন্দ্রে থাকছে। এশিয়া কাপ একটি সুযোগ ছিল। তাদের জন্য বিশ্বকাপ আরেকটি সুযোগ, নিজেদের স্কিল দেখানোর। আমার বিশ্বাস, বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার (জাতীয় দলে) খেলতে পারবে। তবে পুরোটাই তাদের ওপর নির্ভর করবে। তাড়নাটা হৃদয় থেকে আসতে হবে, মাথা থেকে আসতে হবে।'

'নিজেদের প্রতিভা যেন অপচয় না করে, সুযোগ যেন নষ্ট না করে। একইসঙ্গে মাঠে নেমে নিজেদের ক্রিকেট উপভোগ করতে হবে। আমি ওদের দেখেছি, যখন ভালো খেলে, মুখে চওড়া হাসি থাকে। মাঠে সতীর্থের কাঁধে তাদের হাত থাকে। ওরা একে অপরের সাফল্য উপভোগ করে। আমরা সবাই যদি তা করি, তাহলে ফলটা দারুণ পাওয়া যাবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Smaller in size, larger in intent

Finance Adviser Salehuddin Ahmed has offered both empathy and arithmetic in his budget speech, laying out a vision that puts people, not just projects, at the heart of economic policy.

10h ago