ইয়েমেনে হুতি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের স্থল, বিমান ও নৌ হামলা

ইয়েমেনে হুতিদের ওপর হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছে একটি আরএএফ তাইফুন যুদ্ধবিমান। ছবি: রয়টার্স
ইয়েমেনে হুতিদের ওপর হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছে একটি আরএএফ তাইফুন যুদ্ধবিমান। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সামরিক বাহিনী ইয়েমেনের হুতি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বেশ কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে বারবার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়ায় হুতিদের বিরুদ্ধে এই হামলা চালানো হয়।

আজ শুক্রবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এই তথ্য জানিয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানান, তিনি গতকাল 'লোহিত সাগরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে হুতিদের নজিরবিহীন হামলার সরাসরি প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন'।

হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বাইডেন জানান, তার নির্দেশে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী যুক্তরাজ্যের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে ইয়েমেনের বেশ কয়েকটি লক্ষ্যবস্তুতে সফল হামলা চালিয়েছে। এই অবস্থানগুলো ব্যবহার করে হুতি বিদ্রোহীরা 'বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নৌপথের অন্যতম', লোহিত সাগরে নৌযানের স্বাধীন চলাচলে বিপদের সৃষ্টি করেছিল।

তিনি আরও জানান, এই অভিযানে সহযোগিতা করেছে অস্ট্রেলিয়া, বাহরাইন, কানাডা ও নেদারল্যান্ডস।

'আমি আমাদের জনগণকে সুরক্ষা দিতে ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পথ সুগম করতে প্রয়োজন হলেও আরও সরাসরি উদ্যোগ নিতেও দ্বিধা বোধ করব না', বলেন বাইডেন।

মার্কিন বিমানবাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল অ্যালেক্স গ্রিনকেউইচ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রবাহিনী 'ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের ১৬ অবস্থানের প্রায় ৬০ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। এর মধ্যে আছে নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র, গোলাবারুদের মজুত, লঞ্চিং সিস্টেম, উৎপাদনকেন্দ্র ও আকাশ হামলা প্রতিরোধের রাডার ব্যবস্থা।'

বিশ্লেষকদের মতে, লোহিত সাগরে বাড়তে থাকা ঝুঁকির মোকাবিলায় এই উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনের সরাসরি হামলা এড়ানোর চেষ্টা চালিয়েছে।

ইতোমধ্যে এ অঞ্চলে গাজায় হামাস-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিশ্লেষকদের মতে, এ পরিস্থিতিতে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে এই হামলায় পুরো অঞ্চলেই ছড়িয়ে পড়তে পারে সংঘাত।

হুতিরা প্রকাশ্যে হামাসের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছে এবং মূলত, এই সমর্থনের অংশ হিসেবেই তারা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে হামলা চালাচ্ছে।

ইয়েমেনে হুতিদের ওপর হামলা চালাচ্ছে একটি রণতরী। ছবি: রয়টার্স
ইয়েমেনে হুতিদের ওপর হামলা চালাচ্ছে একটি রণতরী। ছবি: রয়টার্স

গাজার যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র ইরাক ও সিরিয়ায় ইরান সমর্থিত বাহিনীর ওপর হামলা চালালেও ইয়েমেনে এটাই তাদের প্রথম প্রকাশ্য হামলা।

যুদ্ধবিমান ও টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের ব্যবহারে এই হামলা চালানো হয়। প্রায় এক ডজন হুতি লক্ষ্যবস্তুতে আকাশ, স্থল ও সাবমেরিন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়। এই অবস্থানগুলো ধ্বংস হলে লোহিত সাগরে হামলা চালানোর সক্ষমতা অনেকটাই হারিয়ে ফেলবে হুতিরা, এই প্রত্যাশায় এই হামলা চালানো হয়। সিএনএনকে এক মার্কিন কর্মকর্তা এই তথ্য জানান।

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার মধ্যে ছিল রাডার ব্যবস্থা, ড্রোন, ক্রুজ ও ব্যালিসটিক ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত ও নিক্ষেপের লঞ্চ সাইট।

দ্বিতীয় এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, সশস্ত্র সাবমেরিন ইউএসএস ফ্লোরিডা এই হামলায় অংশ নেয়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা জানান, হুতিদের ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত জানা না গেলেও এটুকু বলা যায়, তারা 'উল্লেখযোগ্য পরিমাণে' ক্ষতির শিকার হয়েছে।

তিনি জানান, 'বেসামরিক জনগোষ্ঠীর ওপর কোনো হামলা চালানো হয়নি। আমাদের লক্ষ্যবস্তু ছিল সুনির্দিষ্ট এবং নিখুঁত অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে যাতে লক্ষ্যবস্তু ছাড়া অন্য কোথায় হামলা না হয়'।

ইয়েমেনের মার্কিন হামলা নজিরবিহীন নয়। যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সম্পর্ক কাউন্সিলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০২ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দেশটি ইয়েমেনের বিরুদ্ধে ৪০০টি বিমানহামলা চালিয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Joy in the wild: Families flock to National Zoo for Eid fun

On the second day of Eid, the National Zoo in Dhaka turned into a vibrant celebration of life, laughter, and togetherness

21m ago