ভরা মৌসুমেও আলুর দাম যে কারণে বেশি

আলুর দাম
ছবি: আনিসুর রহমান/ স্টার ফাইল ফটো

আমদানি বন্ধের পাশাপাশি বৈরী আবহাওয়ার কারণে মৌসুমের শুরু থেকেই দেশে আলুর জন্য বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

ব্যবসায়ীরা জানান, গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় 'মিচং'র সময় বৃষ্টিতে দেশে আলুর উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে মৌসুমের শুরুতে আগাম জাতের আলুর সরবরাহ কমে যায়।

তারা মনে করেন, আমদানি বন্ধ হওয়ায় আলুর সরবরাহ আরও কমে গেছে। তাই ক্রেতাদের এখন তুলনামূলক বেশি দামে আলু কিনতে হচ্ছে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, গতকাল সোমবার প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এক বছর আগে ছিল ২২ থেকে ২৫ টাকা কেজি।

গত মাসে আলুর খুচরা দাম বেড়েছে ১০ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ১৩৪ শতাংশ।

ঢাকার অন্যতম প্রধান কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সবুজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নতুন আলু আসলেই বাজারে আলুর দাম কমতে শুরু করে। কিন্তু, এ বছর দেখছি ব্যতিক্রম।'

তিনি আরও বলেন, 'নতুন আলু বাজারে আসছে। আবার পুরাতন আলুর মজুদ থেকে গেছে। তবে আলুর দাম কমার লক্ষণ নাই। বরং বাড়ছে।'

গত বছর এই সময়ে তিনি ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করছিলেন। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকায়।

গত প্রায় ৩০ বছর ধরে আলু ব্যবসায় জড়িত সবুজ আরও বলেন, 'মৌসুমের শুরুতে আলুর দাম এত বাড়তে দেখিনি।'

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার কৃষক জহিরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর প্রতি বিঘা থেকে ৭০-৮০ মণ আলু পেয়েছিলাম। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এ বছর বিঘাপ্রতি মাত্র ৪০-৪২ মণ পেয়েছি। এ বছর আলুর উৎপাদন কম।'

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে জানা যায়, ২০১৮ সালে প্রতি কেজি আলুর গড় পাইকারি দাম ছিল ১৯ টাকা ৬৩ পয়সা, ২০১৯ সালে ২০ টাকা ৪৬ পয়সা ও ২০২০ সালে ১৯ টাকা ৫৮ পয়সা।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ডিসেম্বরের আগেই হিমাগারে থাকা আলুর মজুদ শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে হিমাগার থেকে বাজারে আলু সরবরাহ করা হচ্ছে না।'

'এবার ৯০ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে প্রায় ৮০ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। তাই হিমাগারে আলু কম মজুদ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।'

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আলু রোপণেও দেরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'বাজারে এখন যে আলু পাওয়া যাচ্ছে তা অপরিপক্ব। বেশি দাম পাওয়ায় কৃষকরা ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করছেন।'

গত সেপ্টেম্বরের দিকে হঠাৎ করেই আলুর দাম বাড়তে শুরু করে। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার প্রতি কেজি আলুর খুচরা দাম ৩৫-৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেয়।

সেই উদ্যোগ কার্যকর না হওয়ায় গত ৩০ অক্টোবর সরকার ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আলু আমদানির অনুমতি দেয়। বাজারে এর তেমন প্রভাব না পড়ায়, প্রতি কেজি আলুর দাম ৫০ টাকার নিচে নামেনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরকার তিন লাখ ৬০ হাজার টন আলু আমদানির অনুমতি দিলেও এসেছে ৬০ হাজার টন।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর আলুর উৎপাদন ৮৫ লাখ টনের বেশি হয়নি। যদিও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আশা করেছিল আলুর উৎপাদন এক কোটি ১২ লাখ টন হবে।

দেশের অন্যতম প্রধান আলু উৎপাদনকারী জেলা মুন্সীগঞ্জের কৃষি বিপণন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এবিএম মিজানুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এ বছর আলু চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'চলতি মৌসুমে সরবরাহ কম থাকায় মুন্সীগঞ্জে আলুর দাম অনেক বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার দাম প্রায় দ্বিগুণ।'

মুন্সীগঞ্জের মুন্সীরহাট বাজারের আলুর পাইকারি বিক্রেতা হানিফ মৃধা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর দুটি ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ায় আলু চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে উৎপাদন কমে গেছে।'

মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মৌসুম শুরুর ঠিক আগে বৃষ্টি হওয়ায় বাজারে নতুন আলু আসতে কয়েক সপ্তাহ দেরি হয়েছে।'

এ কারণে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ফারাক তৈরি হয়েছে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, আলু উত্পাদনে ঘাটতি নেই।

তার মতে—প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও তৃতীয় পর্যায়ে সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের প্রবণতা আছে। এ কারণে ক্রেতাদের বেশি দামে আলু কিনতে হচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English
remittance earning of Bangladesh

Bangladesh’s forex reserves cross $25b again

However, as per BB’s calculation, the figure stands at $30.07 billion

4h ago