‘নির্বাচন খুব অংশগ্রহণমূলক না হলেও জাতি চলমান সংকট থেকে উঠে এসেছে’

সিইসি বলেন, ‘আমি জানি না সরকারের সঙ্গে আসলেই কোনো গোপন এজেন্ডা নিয়ে কারো সমঝোতা হয়েছে কি না। আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে আমার সঙ্গে হয়নি।’
সিইসি
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। ফাইল ছবি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচন খুব যে অংশগ্রহণমূলক হয়েছে তা নয়। তবে এর মাধ্যমে জাতি একটি চলমান সংকট থেকে উঠে এসেছে।

আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন আয়োজিত 'দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সফলভাবে সম্পন্ন করায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন' অনুষ্ঠানে সিইসি এসব কথা বলেন।

নির্বাচন ভবনের মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সিইসি বলেন, 'দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুসম্পন্ন হয়েছে। জাতি একটি চলমান সংকট থেকে উঠে এসেছে, যেটা নিয়ে উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা ছিল। তবে এটি স্থায়ী সমাধান নয়।'

তিনি বলেন, 'নির্বাচন কোনো দর্শন নয়। এটি একটি আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। রাজনীতি থেকে নির্বাচনের জন্ম হয়েছে। নির্বাচন একটি জনপ্রিয়তা যাচাই করার পরিমাপক। গণতন্ত্রের জন্য এটি অনিবার্য।'

'তাই আমরা ১৯৭২ সাল থেকে নির্বাচনের একটি প্রক্রিয়ার অন্বেষণ করে আসছি। আমরা রাজনীতি করি না। এবারের নির্বাচন যে খুব একটা অংশহণমূলক হয়েছে, তা নয়। মোটাদাগে সার্বিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে যদি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা না থাকে, তবে একটা রাজনৈতিক সংকট থেকে যায়। এবারের নির্বাচনেও একটি পক্ষ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। বরং তারা নির্বাচন প্রতিরোধ করার ঘোষণা দিয়েছে', যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা আমাদের জায়গা থেকে তাদের অনুরোধ জানাতে পারি, তাদের প্রতি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন রাখতে পারি। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে যদি প্রতি পাঁচ বছর পর সংকট সৃষ্টি হয়, তাহলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। সে জন্য আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের এই সংকট সমাধানের একটি পদ্ধতি অন্বেষণ করা প্রয়োজন।'

কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, নির্বাচন তুলনামূলকভাবে ভালো হয়েছে। তিনি সংবাদপত্র পড়ে তা জেনেছেন। অনেকে সুনাম করেছে, অনেকে অপবাদ দিয়েছে। দুটোই বিবেচনায় নিতে হবে।

হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, 'নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। তবে সবার সমন্বিত প্রয়াসে নির্বাচন উঠিয়ে আনা হয়েছে। সাময়িকভাবে হলেও জাতি স্বস্তিবোধ করেছে। নির্বাচন কমিশনও স্বস্তিবোধ করেছে।'

সিইসি বলেন, এখনও পত্রপত্রিকায় সমালোচনা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা হচ্ছে। তবে তারা সোশ্যাল মিডিয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। কারণ, সেখানে অবারিতভাবে বদনাম করা হচ্ছে। মূলধারার গণমাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ আলোচনা আছে। নির্বাচন অনেকটা গ্রহণযোগ্যভাবে সুসম্পন্ন হয়েছে। সেটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে স্বীকৃত হয়েছে।

সিইসি আরও বলেন, 'বাংলাদেশ শুধু আগামী পাঁচ বছর বাঁচবে তা নয়। আমরা বক্তৃতার শেষে বলি বাংলাদেশ চিরজীবী হোক। যদি বাংলাদেশ চিরজীবন বেঁচে থাকে, তাহলে দেশে আবারও নির্বাচন হবে। কিন্তু বারবার যদি একই সংকট সৃষ্টি হয়… সেজন্য নির্বাচন কীভাবে হবে তা রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রজ্ঞার মাধ্যমে কাটিয়ে উঠতে হবে। নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, আজকে আমাদের মেয়াদ শেষ হলে আরেকটি কমিশন হবে, তারা কি বিতর্কের উর্ধ্বে থাকবে? বিতর্ক প্রতিবার থাকবে। নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন থাকবে। আমরা সেটি চাই না। নাগরিক হিসেবে আমাদের চাওয়া থাকতে পারে যেন নির্বাচন ঘিরে কোনো সহিংসতা ও সংঘাত না থাকে। এ জন্য কিছু কিছু মতাদর্শিক বিষয়ে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের ঐকবদ্ধ হতে হবে।'

নাম উল্লেখ না করে সিইসি বলেন, 'একটি সংস্থা বলেছে, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার অজুহাত দিয়ে ইসি সরকারের গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু আমি জানি না সরকারের সঙ্গে আসলেই কোনো গোপন এজেন্ডা নিয়ে কারো সমঝোতা হয়েছে কি না। আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে আমার সঙ্গে হয়নি। অন্য কারো সঙ্গে হয়েছে কি না তা আমি জানি না।'

'সংস্থাটি বলেছে, সাংবিধানিক বাধ্যবাধ্যকতার অজুহাত দেখিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়েছে। ইসি কীভাবে অজুহাত দিলো? তাদের সামনে কি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছিল না? তাহলে কী করা যেত? আমরা কি বলতে পারতাম যে, যেহেতু রাজনৈতিক ঐকমত্য হচ্ছে না, নির্বাচন আমরা আগামী ৩ বছরের জন্য অথবা ১০ বছর, ৩০ বছরের জন্য পিছিয়ে দেব?' প্রশ্ন করেন তিনি।

সিইসি বলেন, 'নির্বাচন কমিশন দার্শনিক কাজ করে না। এই সংস্থা একটি পদ্ধতি অনুসরণ করে পরিচালিত হয়। আমাদের কাজটি প্রায়োগিক কাজ। সেই দিক থেকে সবার সহযোগিতা নিয়ে কাজটি সম্পন্ন হয়েছে। আমরা সরকারের সহযোগিতাও নিয়েছি। তাদের সহযোগিতা ছাড়া নির্বাচন সম্ভব হতো না। এটা সংবিধান ও আইনেই বলে দেওয়া আছে।'

তিনি বলেন, 'আমরা বিতর্কের উর্ধ্বে যেতে পারিনি। তবে সন্তুষ্ট বোধ করছি। কারণ যেটা আশঙ্কা করা হয়েছিল যে নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি ইত্যাদি হবে, তা হয়নি। এটি তুলনামূলক গ্রহণযোগ্য করে তোলা সম্ভব হয়েছে। বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা রাষ্ট্র ও সংগঠনও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে গিয়েছিল। তারা বিভিন্ন গাইডলাইন দিচ্ছিল। তাদেরও ইচ্ছা ছিল যেন সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। বিভিন্ন ত্রিমুখী চাপে নির্বাচনকে আরও সুষ্ঠু করার জন্য আমরা উদ্বুদ্ধ ও সচেষ্ট হয়েছি।'

সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তা করায় নিজেদের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরের কর্মকর্তাদেরও ধন্যবাদ জানান তিনি।

ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান বক্তব্য দেন। সভাপতিত্ব করেন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম।

Comments