জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বিদেশি বিনিয়োগ ৩৬ শতাংশ কমেছে

২০২৩ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহ ৩৬ শতাংশ কমেছে। এজন্য অস্থিতিশীল বিনিময় হার ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করছেন, এসব কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট এফডিআই এসেছে ৯১৩ মিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালের একই সময়ে ছিল ১ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া নিট বিনিয়োগ ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার থেকে ৬৭০ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এফডিআই প্রবাহ বার্ষিক ২৪ শতাংশ কমে ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

গত দুই বছরের টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের মূল্য বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। গতকাল ডলার লেনদেন হয়েছে ১১১ টাকায়, যা ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৮৬ টাকা।

এসময় রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের তুলনায় আমদানি বিল বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ফলে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টে ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি থাকলেও, তা বর্তমানে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশের আর্থিক হিসাবে যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে তার অন্যতম প্রধান কারণ এফডিআই কমে যাওয়া। আর্থিক হিসাব একটি দেশের বিদেশি লেনদেনের ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট বা বিওপি) অন্যতম উপাদান।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে আর্থিক হিসাবের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার, যা জুলাই-অক্টোবরে ছিল ৪ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলার।

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, অস্থিতিশীল বিনিময় হার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলে। গত ছয় মাস ধরে বাংলাদেশে সেই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ কারণে বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে এফডিআই প্রবাহ কমেছে।

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার অনুকূলে ছিল না বলেও জানান তিনি

তিনি বলেন, বিনিময় হারের ওঠানামা অনিশ্চয়তা ও অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করেছে। ফলে, বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।

'অস্থিতিশীল বিনিময় হার বাংলাদেশে ব্যবসায়িক খরচ বৃদ্ধি করতে পারে, যা তাদের মুনাফায় প্রভাব ফেলবে। মূলত দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য স্থিতিশীল অর্থনৈতিক অবস্থা চান,' যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। বিনিময় হার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত হয়তো তারা সিদ্ধান্ত নাও নিতে পারেন।'

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অস্থিতিশীল বিনিময় হার একটি দেশের আমদানি-রপ্তানির ওপর প্রভাব ফেলে, যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিবেশ ও বিদেশি বিনিয়োগকে প্রভাবিত করে।

তিনি বলেন, দীর্ঘস্থায়ী সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বিদেশি বিনিয়োগ অনেক কমেছে, কারণ তারা আস্থা হারিয়েছে।

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমার জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটকেও দায়ী করেছেন এই কর্মকর্তা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নতুন বিনিয়োগ ও পুনঃবিনিয়োগ কমে যাওয়ার প্রবণতা অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ নয়।

তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, অস্থিতিশীল বিনিময় হার ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহ কমিয়েছে।'

এছাড়া নির্বাচনকে ঘিরে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতিও বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ার কারণ বলে মনে করেন তিনি

তিনি সরকারকে আগামী মাসগুলোতে বিশেষ করে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে কার্যকর ওয়ান-স্টপ পরিষেবার মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন।

প্রকৌশল ও বৈচিত্র্যময় খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী জাপানের মতো এশিয়ার দেশগুলোর দিকে বাংলাদেশকে মনোনিবেশ করার পরামর্শ দেন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি রূপালী চৌধুরী।

এজন্য কর ও শুল্ক সংক্রান্ত নীতিমালায় ঘন ঘন পরিবর্তনের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি নীতি নিশ্চিত করার পরামর্শ দেন তিনি।

তিনি মনে করেন, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে আইনি কাঠামো সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার আছে।

Comments

The Daily Star  | English

Child rape cases rise nearly 75% in 7 months

Child rape cases in Bangladesh have surged by nearly 75 percent in the first seven months of 2025 compared to the same period last year, according to data from Ain o Salish Kendra (ASK).

1h ago