পাকা কলা ও পাকা পেঁপে খাওয়ার সঙ্গে ঠান্ডা লাগার সম্পর্ক আছে কি?

পাকা কলা ও পাকা পেঁপে খাওয়ার সঙ্গে ঠান্ডা লাগার সম্পর্ক
ছবি: সংগৃহীত

প্রায়ই আমরা শুনে থাকি ঠান্ডা লাগলে বা সর্দি-কাশি হলে পাকা কলা ও পাকা পেঁপে খাওয়া উচিত নয়। এতে সমস্যা বেড়ে যায়। আবার অনেকে বলেন, পাকা কলা ও পাকা পেঁপে খেলে নাকি ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা থাকে।  

এই বিষয়ে জেনে নিন পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ নিশাত শারমিন নিশির কাছ থেকে।

পাকা কলা ও পাকা পেঁপে খাওয়ার সঙ্গে ঠান্ডা লাগা বা সর্দি-কাশির সম্পর্ক

ডা. নিশাত শারমিন বলেন, ঠান্ডার সঙ্গে পাকা কলা বা পাকা পেঁপের সরাসরি তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। অনেকে ঠান্ডা লাগবে ভেবে পাকা কলা ও পাকা পেঁপে খাওয়া একেবারে বন্ধ করে দেন। এই ধরনের ফল খেলে ঠান্ডা লাগবে এটি ভ্রান্ত ধারণা। তবে ঠান্ডা যদি লেগে যায় এরপর এই ধরনের ঠান্ডা ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন ডা. নিশাত শারমিন।

পাকা কলা অনেক সময় মিউকাস তৈরি করতে সাহায্য করে। তাছাড়া কারো যদি হাঁচি-কাশি বা ঠান্ডা লেগে যায় সেক্ষেত্রে ঠান্ডা খাবার খাওয়ার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আর কলা ও পেঁপে দুটো ফলই বেশ ঠান্ডা প্রকৃতির ফল। শীতকালে পাকা কলা ও পাকা পেঁপে শরীরের তাপমাত্রাকে কিছুটা ঠান্ডা অনুভব করায়। তাই যাদের ইতোমধ্যে ঠান্ডা বা সর্দি-কাশি লেগে গেছে তাদের ক্ষেত্রে পাকা কলা ও পাকা পেঁপে খাওয়া ওই সময়টা বন্ধ রাখাই ভালো।

পাকা কলার পুষ্টিগুণ

ডা. নিশাত শারমিন বলেন, পাকা কলা পুষ্টিগুণে ভরপুর। পাকা কলায় কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি রয়েছে। এছাড়া পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ফাইবারের যথেষ্ট ভালো উৎস হচ্ছে কলা। এ ছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিজেন।

পাকা কলা হৃদপিণ্ডের সুস্থতা রক্ষা করতে সাহায্য করে। ডাইজেস্টিভ সিস্টেম ভালো রাখে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়াও পাকা কলা ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে। যাদের বিএমআই কম অর্থাৎ অনেক কম ওজন, তারা অনেকেই ওজন বাড়ানোর জন্য দুঃশ্চিন্তা করেন। তারা প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় একটি পাকা কলা রাখতে পারেন। এটি দ্রুত ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।

পাকা কলা কারা খাবেন না

  • ডা. নিশাত শারমিন বলেন, পাকা কলা যেহেতু বেশ মিষ্টি ফল সেহেতু যাদের অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে পাকা কলা খাওয়া বেশ ক্ষতির কারণ হতে পারে। কারণ পাকা কলা রক্তে শর্করা দ্রুত বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
  • যাদের সিকেডি রয়েছে অর্থাৎ ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা দীর্ঘদিন কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছেন তারা পাকা কলা খাবেন না।
  • যাদের রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ অনেক বেশি তাদের পাকা কলা না খাওয়াই ভালো। কারণ এতে থাকা কার্বোহাইড্রেট রক্তের ট্রাইগ্লিসারিনের মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত করতে সাহায্য করে।

পাকা পেঁপের পুষ্টিগুণ

ডা. নিশাত শারমিন বলেন, পাকা পেঁপের মধ্যে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, কিছু প্রোটিন ও ডায়েটারি ফাইবার। পটাশিয়াম, ফসফরাস, ফোলেট এবং কপার পাওয়া যায় পাকা পেঁপেতে। এ ছাড়াও ক্যালসিয়াম, আয়রনসহ প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড রয়েছে।

পাকা পেঁপেতে রয়েছে ইনফ্লামেশন কমানোর এনজাইম অর্থাৎ পেঁপেতে যে ব্যাপন থাকে তা শরীরের ব্যথা কমাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। পাকা পেঁপে আর্থাইটিস ও অ্যাজমার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। ইমিউন সিস্টেম বৃদ্ধি পায় পাকা পেঁপে খেলে। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকলে যখন তখন অসুস্থ হওয়ার প্রবণতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। পাকা পেঁপের মধ্যে টমেটোর মতই লাইকোপ্যান থাকে, যা প্রস্ট্রেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।

পাকা পেঁপে কারা খাবেন না

পাকা পেঁপে খাওয়া যে সবসময় ভালো তা নয়। বারে বারে বা প্রতিদিন পাকা পেঁপে খেলে নানা ধরনের শারীরিক সমস্যাও হতে পারে। যেমন-

  • যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তাদের খেয়াল করতে হবে পাকা পেঁপে খেলে অ্যালার্জি হয় কি না।
  • পাকা পেঁপে অনেক সময় স্টমাক আপসেট করতে সাহায্য করে। পাকস্থলীর যত্ন নিতে গিয়ে অনেক সময় অতিরিক্ত পাকা পেঁপে খেয়ে উল্টো পাকস্থলীর সমস্যা হতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় পেঁপে খাওয়ার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
  • ডা. নিশাত শারমিন বলেন, শিশুদের জন্য পাকা কলা ও পাকা পেঁপে বেশ ভালো। এ দুটোই যেহেতু মিষ্টি ফল সেহেতু বাচ্চাদের ছয় মাস বয়সের পর থেকে ম্যাশ করে দেওেয়া যেতে পারে।
  • অনেক সময় সাগর কলা হজম হতে বা অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়াতে সাহায্য করে। সেক্ষেত্রে ছোট কলা বাছাই করা ভালো। যেমন- চাঁপা কলা, সবরি কলা সাধারণত অ্যাসিডিটি তৈরি করে না।
  • পাকা কলা বা পাকা পেঁপে কোনোকিছুই অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত নয়। সবসময় খেয়াল রাখতে হবে যেন নির্দিষ্ট মাত্রার বাইরে না যায়।

     

Comments

The Daily Star  | English
Govt employees protest at Secretariat May 2025

The right way to reform the public administration

Bangladesh needs a bureaucracy that serves its citizens with professionalism and integrity, not one driven by blind obedience.

10h ago