রায় সন্তোষজনক, চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি: সুবর্ণচরে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার বাদী

মামলার আসামিদের এজলাসকক্ষে নেওয়া হচ্ছে। ছবি: স্টার

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগের মামলার বাদী জানিয়েছেন, তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

আজ সোমবার মামলার রায় ঘোষণার পর তিনি এ কথা জানান।

মামলার বাদী বলেন, রায় সন্তোষজনক হয়েছে। এখন আমাদের দাবি, দ্রুত যাতে এই রায় কার্যকর হয়। আর আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমরা চাই, সরকারপক্ষ যাতে আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে।

রায় ঘোষণার পরে ভুক্তভোগী গণমাধ্যমকে বলেন, আদালতকে আমি বিশ্বাস করেছি। আজকে ন্যায়বিচার পেয়েছি। বিচারে খুশি হয়েছি। যে রায় দিয়েছে, সেই রায় যেন তাড়াতাড়ি কার্যকর করা হয়। আমার ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমি নিরাপত্তাহীন বোধ করি, আমার নিরাপত্তা চাই।

রায় ঘোষণার সময় মামলার মূল অভিযুক্ত সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন মেম্বারের স্ত্রী রুপালি বেগম এবং দুই বোন শাহিনুর বেগম ও মরিয়ম বেগম আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

রায় ঘোষণার পর রুপালি বলেন, এটা অবিচার হয়েছে। এটা কী বিচার হলো? এই বিচার আমরা মানি না।

এই রায় ঘোষণা করায় জজের পদত্যাগ দাবির কথাও জানান রুপালি।

দ্য ডেইলি স্টারের সংবাদদাতা জানিয়েছেন, রায় ঘোষণার সময় ১৬ জন আসামির ১৫ জনই এজলাসকক্ষে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তারা সবাই একসঙ্গে চিৎকার করতে শুরু করেন এবং বলতে থাকেন যে, এই রায় তারা মানেন না। একইসঙ্গে তারা বিচারককে বিষোদগার করে নানা কথা বলেন। এজলাসকক্ষের বাইরে ছিলেন আসামিদের স্বজনরা। রায় ঘোষণার পর তাদের সবাইকে চিৎকার ও কান্নাকাটি করতে দেখা যায়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১০ জন আগামী সাত দিনের মধ্যে উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ পাবেন।

গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে করা এই মামলায় ১০ জনের ফাঁসি ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ দুপুরে এই রায় ঘোষণা করেন নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ) ফাতেমা ফেরদৌস।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন-সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক মো. রুহুল আমিন, মো. হাসান আলী দুলু, মো. সোহেল, স্বপন, ইব্রাহীম খলিল, আবুল হোসেন প্রকাশ আবু, মো. ছালা উদ্দিন, মো. জসিম উদ্দিন, মো. মুরাদ, ও মো. জামাল প্রকাশ হেঞ্চু। 

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন-মো. হানিফ, মো. চৌধুরী, মো. বাদশা আলম ওরফে বাসু ওরফে কুড়াউল্লা বাসু, মোশারফ, মো. মিন্টু ওরফে হেলাল ও মো. সোহেল। 

এর আগে গত ২৯ নভেম্বর অধিকতর যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের জন্য ১৬ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন বিচারক। তবে, রায় লেখা শেষ না হওয়ায় আদালত রায় ঘোষণার জন্য ৫ ফেব্রুয়ারি তারিখ পুনর্নির্ধারণ করেন।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতে স্থানীয় রুহুল আমিনের নেতৃত্বে স্বামী ও সন্তানদের বেঁধে রেখে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ভোটকেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিদের পছন্দের প্রতীকে ভোট না দেওয়ার জেরে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী বাদী হয়ে চরজব্বর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক রুহুল আমিন মেম্বারসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ অভিযোগপত্র দেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক জাকির হোসেন।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus meets Chinese ambassador to review China visit, outline next steps

Both sides expressed a shared commitment to transforming discussions into actionable projects across a range of sectors

5h ago