সুবাস ছড়াচ্ছে হেমায়েতের সুগন্ধি বোম্বাই মরিচ

বোম্বাই মরিচ
গাজী হেমায়েত উদ্দিনের খেতে সুগন্ধি বোম্বাই মরিচ। ছবি: স্টার

গত বছর পটুয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন গাজী হেমায়েত উদ্দিন (৩০)। চাকরির সোনার হরিণের পেছনে না ছুটে নিজেকে কৃষিকাজে যুক্ত করে পেয়েছেন সাফল্য।

চলতি বছর শুধু বোম্বাই মরিচ চাষ করে উপার্জন করেছেন প্রায় তিন লাখ টাকা। মাত্র ৩৫ শতাংশ জমিতে সারাবছর মরিচ চাষ করে এ সাফল্য পেয়েছেন তিনি।

এ ছাড়াও, মৌসুমি সবজি চাষ করে তার আয় কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা।

পটুয়াখালীর জেলা শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামে হেমায়েতের বাড়ি। বাড়ির পাশেই পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া জমিতে তিনি গড়ে তুলেছেন কৃষি খামার।

সম্প্রতি ওই খামারে গিয়ে দেখা গেল, ৩৫ শতাংশ জমিতে বোম্বাই মরিচ চাষ করেছেন হেমায়েত। পুরো খেতজুড়ে পলিথিনের ছাউনি, যেন অতিবর্ষণ বা অধিক তাপে মরিচ গাছের ক্ষতি না হয়। খেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত তিনি।

গাজী হেমায়েত উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশে এমনিতেই কাজের অভাব। পড়ালেখার পর আমি চাকরির পেছনে ছুটিনি। আত্ম-কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা করি।'

তিনি জানান—ধনিয়াপাতা, লালশাক, পালংশাক, মুলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, মিষ্টি আলু, তরমুজসহ বছরব্যাপী মৌসুমি ফসলের চাষ করেন তিনি।

বোম্বাই মরিচ
কৃষিকাজে সফল গাজী হেমায়েত উদ্দিন। ছবি: স্টার

জমিতে মাটি দিয়ে উঁচু করে এসব কৃষি পণ্য উৎপাদন করেন, যেন বর্ষায় খেত তলিয়ে না যায়।

হেমায়েত আরও বলেন, 'ফসল উৎপাদন করে আমি বছরে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা আয় করি। এটা চাকরির বেতনের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। বেশি লাভজনক হওয়ায় আমি দুই বছর ধরে ৩৫ শতাংশ জমিতে বোম্বাই মরিচ চাষ করছি। বাজারে প্রচুর চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় শুধু মরিচ চাষ করেই এ বছর কমপক্ষে তিন লাখ টাকা আয় করেছি।'

তিনি জানান, তার এ সাফল্য দেখে এলাকার আরও ১৪-১৫ কৃষক বোম্বাই মরিচ চাষ করছেন।

শুধু হেমায়েত নয়, তার কলেজ পড়ুয়া অপর দুই ভাই মাহফুজ গাজী ও আবদুল্লাহ গাজীও সবজি খেতে কাজ করে আর্থিকভাবে সফল হয়েছেন।

একই গ্রামের চাষি জাকির হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি তরমুজসহ মৌসুমভিত্তিক সবজি চাষ করি। তবে বোম্বাই মরিচ চাষ করে বেশি লাভবান হয়েছি। আমাদের গ্রামের বোম্বাই মরিচ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে ঢাকাসহ অন্যান্য জায়গায় পাঠান।'

'সুগন্ধযুক্ত হওয়ায় আমাদের উৎপাদিত বোম্বাই মরিচের চাহিদা বেশি। প্রতি পিস মরিচ দুই থেকে তিন টাকা ও প্রতি কেজি মরিচ ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করি।'

তিনি জানান—পাখিমারা, কুমিরমারাসহ আশপাশের ১৫ গ্রামে প্রচুর পরিমাণে মৌসুমি শাকসবজি চাষ হয়। সেগুলো কলাপাড়া উপজেলা শহরের চাহিদা মিটিয়ে পটুয়াখালী, বরিশাল, ঢাকাসহ অন্যান্য জায়গায় পাঠানো হয়।

এসব গ্রামের কৃষকরা শাকসবজি চাষ করে সবাই এখন স্বাবলম্বী বলেও জানান তিনি।

কৃষক আবুল হোসেন বলেন, 'এক সময় মাটির উচ্চ লবণাক্ততার কারণে কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের ১৫ গ্রামে শুধু আমন ধান চাষ হতো।'

ধান ঘরে তোলার পর কৃষকরা মাছ ধরা বা দিনমজুর হিসেবে কাজ করে সংসার চালাতেন। এখন এই এলাকায় সারাবছরই রাসায়নিকমুক্ত সবজির চাষ হয়।

নীলগঞ্জ দিয়ে প্রবাহিত আন্ধারমানিক নদীর শাখানদী 'পাখিমারা' ও 'কুমিরমারা'র পানির লবণাক্ততার কারণে সেই এলাকায় একসময় শুধু একটি ফসল হতো।

২০০৫ সালে স্থানীয় কৃষকরা সারাবছর ফসল চাষের জন্য খালের মিঠা পানি সংরক্ষণের জন্য একত্রিত হন। তারা খালের ওপর চারটি অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে মিঠা পানি সংরক্ষণ করেন।

এতে ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার কৃষক আমন ধানসহ সবজি চাষে ব্যাপক সাফল্য পেতে শুরু করেন।

এক সময়ের বর্গাচাষি সফিউদ্দিন সবজি চাষ করে প্রায় তিন একর জমির মালিক হয়েছেন। তিনি তার সাত ছেলেকে জমি ভাগ করে দিয়েছেন। তারাও সবজি চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী।

সফিউদ্দিন ডেইলি স্টারকে জানান, আগে এসব গ্রামের অনেক চাষি অভাবে পড়ে ঢাকায় গিয়ে শ্রমিকের কাজ করতেন। এখন তারা গ্রামে ফিরে কৃষি পণ্য উৎপাদন করছেন।

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আর এম সাইফুল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নীলগঞ্জের কয়েকটি গ্রামে সারাবছর সুগন্ধি বোম্বাই মরিচ চাষ হয়। এর চাহিদা ও দাম ভালো।'

'এছাড়াও ওইসব গ্রামের কৃষকরা বছরব্যাপী মৌসুমভিত্তিক শাকসবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। আমরা কৃষকদের প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকি,' বলেন তিনি।

তিনি জানান, এখানে প্রতি বছর ১০-১৫ টন সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। এর অর্থনৈতিক মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

8h ago