'ইসরায়েলকে চাপ দিয়ে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র মেনে নিতে বাধ্য করা যাবে না'

বাইডেন-নেতানিয়াহু ফোনকল
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: এএফপি
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: এএফপি

ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে টানা ১৩৩ দিন ধরে গাজায় নিরবচ্ছিন্ন হামলা ও সর্বাত্মক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। এই অভিযানের মাত্রা ও কৌশল নিয়ে ইসরায়েল ও তার সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মতভেদ প্রকট আকার ধারণ করছে।

আজ শুক্রবার এ বিষয়টি জানিয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল।

গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ৪০ মিনিট ফোনে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা টাইমস অব ইসরায়েলকে জানান, দুই নেতা ৭ অক্টোবর হামাসের হাতে জিম্মি হওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এ ছাড়া, হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পরবর্তী ধাপ হিসবে রাফাহ অঞ্চলে সর্বাত্মক হামলার ইসরায়েলি পরিকল্পনা ও গাজা উপত্যকার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

হোয়াইট হাউজের বিবৃতিতেও উল্লেখ করা হয়েছে, দুই নেতা জিম্মি মুক্তি, গাজার পরিস্থিতি ও রাফাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সম্ভাব্য অভিযান নিয়ে কথা বলেছেন। ইসরায়েলের দাবি, রাফাহর ভেতরেই হামাসের সর্বশেষ ও সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক ঘাঁটির অবস্থান।

যুদ্ধের শুরু থেকে 'নিরাপদ অঞ্চল' হিসেবে রাফাহর নাম উল্লেখ করে ইসরায়েল। যার ফলে, গাজার বাকি অংশ থেকে পালিয়ে আসা ফিলিস্তিনিসহ সেখানে এ মুহূর্তে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ অবস্থান করছেন।

রাফাহ প্রসঙ্গে বাইডেন আবারও জানান, 'বেসামরিক মানুষদের সুরক্ষা ও সহযোগিতা নিশ্চিত করার গ্রহণযোগ্য ও বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা ছাড়া রাফাহর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করা উচিত হবে না।'

জো বাইডেন ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: রয়টার্স
জো বাইডেন ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফাইল ছবি: রয়টার্স

গতকাল রাতে নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইএ প্রধান উইলিয়াম বার্নস, দেশটির যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা ও জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার সঙ্গে বৈঠকের মাঝে জো বাইডেন তাকে ফোন করেন। তিনি বৈঠক থেকে বের হয়ে ফোন রিসিভ করেন।

এই কলের পর নেতানিয়াহু মধ্যরাতে এক বিবৃতি প্রকাশ করে জানান, ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র মেনে নিতে বাধ্য করা যাবে না।

নেতানিয়াহু বলেন, 'আমার অবস্থান বোঝাতে দুইটি বাক্য যথেষ্ট। ইসরায়েল, ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে স্থায়ী বন্দোবস্তের ব্যাপারে কোনো আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ মেনে নেবে না। এ ধরনের কোনো প্রক্রিয়া চালু হতে হলে তা সংশ্লিষ্ট দুই পক্ষের মধ্যে সরাসরি দরকষাকষির মাধ্যমে হবে এবং এতে কোনো পূর্বশর্ত থাকবে না।'

তিনি আরও জানান, 'ইসরায়েল ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিরোধিতা অব্যাহত রাখবে। ৭ অক্টোবর (হামাসের) গণহত্যার প্রেক্ষাপটে এ ধরনের স্বীকৃতি (এই) নজিরবিহীন জঙ্গি তৎপরতাকে বড় আকারে পুরস্কৃত করার সমতুল্য এবং এমন হলে ভবিষ্যতে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।'

গতকাল ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও বেশ কয়েক আরব দেশ মিলে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শান্তি চুক্তির কাঠামো নিয়ে কাজ করছে, যার মধ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বাস্তবসম্মত সময়সীমা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

এই সংবাদে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার একাধিক জ্যেষ্ঠ সদস্য নিন্দা জানান। এই প্রতিবেদনের জেরে এমন মন্তব্য করলেন নেতানিয়াহু।

আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এই কাঠামো খসড়া আকারে প্রকাশ পেতে পারে। তবে ইসরায়েল-হামাসের যুদ্ধবিরতি চুক্তির ওপর এই উদ্যোগটি নির্ভরশীল।

রাফাহর বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা নিয়ে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশ হুশিয়ারি দিয়েছে। এই হামলায় অসংখ্য বেসামরিক মানুষ হতাহত হতে পারেন বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।

ঝুঁকি ও মিত্রদের সতর্কবাণী সত্ত্বেও আজ শুক্রবার নেতানিয়াহু ঘোষণা দেন, তিনি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার কাছে রাফাহর বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে নিরাপদে বের করে আনার ও হামাসকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা উপস্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন।

ইসরায়েলের বিশ্বাস, গাজার সঙ্গে মিশরের সীমান্তে অবস্থিত রাফাহ দখল না করে হামাসকে দুর্বল করা যাবে না। হামাসের হাতে বন্দি ১৩৪ জিম্মির কয়েকজন সেখানে অবস্থান করছেন বলেও তাদের ধারণা।

সোমবার রাফাহর এক অ্যাপার্টমেন্ট থেকে দুই জিম্মিকে উদ্ধারের দবাই জানায় ইসরায়েলি স্পেশাল ফোর্স।

হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এই অভিযানের সময় বোমা হামলায় অসংখ্য ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

7h ago