ওএমএসের চাল-আটা কিনতে ভিড়, অনেকে ফিরছেন খালি হাতে

কম দামে চাল-আটা কিনতে ওএমএসের দোকানগুলোতে মানুষের ভিড়। ছবি: স্টার

লালমনিরহাটে ওএমএসের দোকানগুলো খোলে সকাল ৯টায়। কিন্তু ব্যাগ হাতে নিয়ে ভোরবেলা থেকেই লাইনে দাঁড়ান মানুষজন। এখানে প্রতিকেজি চাল বিক্রি হয় ৩০ টাকা দরে আর প্রতি কেজি আটা বিক্রি হয় ২৪ টাকা দরে। বাজারে প্রতি কেজি চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা দরে আর আটা বিক্রি হচ্ছে ৫২-৬০ টাকায়।

প্রত্যেকে পাঁচ কেজি চাল অথবা সমপরিমাণ আটা কিনতে পারেন। তবে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরও অনেককে ফিরে যেতে হয় খালি হাতে।

ওএমএসের পণ্য কিনতে আসা নিম্ন আয়ের মানুষেরা ডেইলি স্টারকে বলেন, এখন লাইনে মানুষের ভিড় হচ্ছে অনেক কিন্তু পাঁচ-ছয় মাস আগেও এরকম ভিড় ছিল না। আগে গরিব মানুষ ওএমএসের দোকানে ভিড় করতেন। এখন অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনকে দেখা যাচ্ছে। তিন-চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় পাঁচ কেজি চাল-আটার জন্য। চাল কিনলে আটা পাওয়া যায় না আবার আটা কিনলে চাল পাওয়া যায় না। বাজারে দাম বেশি তাই বাধ্য হয়েই লাইনে দাঁড়িয়ে এখান থেকে কিনছি। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হলে খুব খারাপ লাগে।

লালমনিরহাট শহরের কালীবাড়ী পুরান বাজার এলাকায় ৫০ বছর বয়সী এক নারী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তিনি কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। গত দুই মাস ধরে ওএমএসের চাল-আটা কিনছেন। আগে কখনো ভাবেননি তাকে চাল-আটার জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় তার স্বামীর আয়ে সংসার চলছে না। কমদামে ওএমএসের চাল-আটা কেনা ছাড়া তাদের কোনো উপায় নেই।

'খুব অভাবে আছি। নিরুপায় হয়ে পড়েছি,' বলেন তিনি।

একই এলাকার আকলিমা বেগম (৪০) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তার স্বামী দিনমজুর। তার আয়ে সংসার চলে না। বাজার থেকে চাল-আটা কিনলে তরি-তরকারি কেনা কষ্টকর হয়ে পড়ে। লাইনে দাঁড়িয়ে ওএমএস ডিলারের দোকান থেকে চাল-আটা কিনতে হচ্ছে। এখান থেকে কমদামে চাল-আটা কেনার সুযোগ না পেলে তাদেরকে আরও বেশি কষ্টে থাকতে হতো। তবে মাঝে মাঝেই তাকে এখান থেকে খালি হাতে ফিরতে হয়।

কুড়িগ্রাম শহরের কলেজ রোড এলাকার দিনমজুর সহিদুল ইসলাম (৫০) ডেইলি স্টারকে বলেন, ওএমএসের দোকানের সামনে মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন দরিদ্র পরিবারের লোকজনের সঙ্গে মিশে যান। আগে তাদের দেখা যেত না। পাঁচ কেজি চাল আর আটার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কয়েক ঘণ্টা।

'এত কষ্ট করি লাইনোত খাড়া হয়া থাকি। তাং মাঝে মধ্যে হামরাগুলা চাইল-আটা পাই না। হামাকগুলাক খালি হাতে বাড়ি ফিরোত যাওয়া নাগে,' তিনি বলেন।

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, লালমনিরহাটে ১৩টি ও কুড়িগ্রামে ১৯টি ওএমএস ডিলারের মাধ্যমে প্রতিদিন ১৪ মেট্রিক টন চাল ও ১৪ মেট্রিক টন আটা বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহে পাঁচ দিন ওএমএস দোকান খোলা রাখা হয়। প্রত্যেক ডিলার প্রতিদিন ৪৩৭ দশমিক ৫ কেজি চাল ও সমপরিমাণ আটা বরাদ্দ পান। বরাদ্দ অনুযায়ী তারা প্রতিদিন ১৭৫ জনের কাছে চাল-আটা বিক্রি করতে পারেন।

লালমনিরহাট শহরের কালীবাড়ী পুরান বাজার এলাকার ওএমএস ডিলার সেকেন্দার আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ওএমএস দোকানে মানুষের ভিড় বেড়েছে কয়েকগুণ। বরাদ্দ অনুযায়ী ১৭৫ জনের কাছে চাল-আটা বিক্রি করতে পারছেন কিন্তু লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন চার-পাঁচ গুণ বেশি মানুষ। এ কারণে অধিকাংশ মানুষ খালি হাতে ফিরে যান। আমরা বরাদ্দ বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু খাদ্য বিভাগ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

লালমনিরহাট জেলা খাদ্য কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ওএমএস দোকানগুলোতে মানুষের ভিড় অনেক বেড়েছে। বরাদ্দ অনুপাতে নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের কাছে চাল-আটা বিক্রি করতে পারছেন ডিলাররা। ওএমএস দোকানে চাল-আটা বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা পাওয়া গেলে ডিলারদের বরাদ্দ বাড়ানো হবে।

Comments

The Daily Star  | English

How Trump’s reciprocal tariff challenged WTO’s multilateral trading system

Bangladesh is in an advantageous position compared with other competing countries in the US market

36m ago