৩০ টাকা কেজি দামে চাল পাবেন ১ কোটি মানুষ

ছবি: সংগৃহীত

ভর্তুকি মূল্যে আজ বৃহস্পতিবার থেকে চাল বিক্রি শুরু করেছে সরকার। দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ও চালের বাজারের অস্থিতিশীলতা নিরসনে সরকারের এই উদ্যোগ।

৩ মাসের মধ্যে দেড় কোটি মানুষের কাছে ৭ লাখ ৬৫ হাজার টন চাল বিক্রির পরিকল্পনা করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

সুবিধাভোগীদের মধ্যে ১ কোটি মানুষ ওএমএসের মাধ্যমে খোলা বাজারে ৩০ টাকা কেজি দামে চাল কিনতে পারবেন। এ ছাড়াও, ফুড ফ্রেন্ডলি প্রোগ্রামের (এফএফপি) আওতায় বিশেষ কার্ডধারী ৫০ লাখ মানুষ ১৫ টাকা কেজি দামে চাল কিনতে পারবেন।

গতকাল সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটি রাশিয়া থেকে ৫ লাখ টন গম এবং ভিয়েতনাম ও ভারত থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। জিটুজি সমঝোতার আওতায় এই উদ্যোগে মোট খরচ হবে ৩৭৮ মিলিয়ন ডলার (৩ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা)।

এ ছাড়াও, মিয়ানমার থেকে আরও ২ লাখ টন চাল আমদানির জন্য একটি স্মারক চুক্তি (এমওইউ) সই করেছে বাংলাদেশ।

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাখাওয়াত হোসেন গতকাল বলেন, 'আমাদের এখন চালের পর্যাপ্ত মজুত আছে। তবে এর বড় একটি অংশ আগামী ৩ মাস ওএমএস ও ফুড ফ্রেন্ডলি প্রোগ্রামের আওতায় বিক্রি করা হবে। সরকার এখন চালের মজুদ পুনরায় পূরণ করতে কাজ করছে।'

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৩০ আগস্ট পর্যন্ত সরকারের কাছে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টন চাল ও ১ লাখ ৪০ হাজার টন গম ছিল।

ভর্তুকি দামে চাল বিক্রির এই ঘোষণা এমন সময় এলো, যখন দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষ নিত্যপণ্যের বর্ধিত মূল্যের সঙ্গে তাল মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

গত মাসের মাঝামাঝি সময় সব ধরনের চালের দাম প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা করে বেড়েছে। ২৮ আগস্ট সরকার আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ করার পর চালের দাম কিছুটা কমতে শুরু করে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল চিকন চালের কেজি ৭৫ টাকা ও মোটা চালের কেজি ৫৬ টাকা ছিল।

এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি চিকন চালের দাম ছিল ৮০ টাকা ও মোটা চালের দাম ছিল ৫৮ টাকা।

গম ও চাল আমদানি

গতকাল মন্ত্রিসভা কমিটি রাশিয়া থেকে ২১৪ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে ৫ লাখ টন গম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। প্রতি কেজি গম আমদানিতে খরচ হবে ৪০ টাকা ৮৫ পয়সা।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আগামী বছরের সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতি মাসে ১ লাখ টন গম দেশে আসবে।

সরকার ১৬২ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন ডলারে ৩ দশমিক ৩ লাখ টন চাল আমদানি করছে। এর মধ্যে ভিয়েতনাম থেকে ২ দশমিক ৩ লাখ টন এবং ভারত থেকে ১ লাখ টন চাল আমদানি করবে।

প্রতি কেজি চালের গড় আমদানি খরচ হবে ৪২ টাকা ১৩ পয়সা।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারত থেকে আরও ১ থেকে ২ লাখ টন চাল আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

ওএমএস ও এফএফপির অধীনে চাল-গম বিক্রি

সাখাওয়াত হোসেন জানান, সরকার দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ব্ধগতি থেকে রক্ষা করতে ও চালের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে ওএমএস এবং এফএফপির আওতায় চাল বিক্রি করবে।

কার্ডধারীরা ৩০ টাকা কেজি দরে একবারে ৫ কেজি পর্যন্ত চাল কেনার অনুমতি পাবেন জানিয়ে তিনি বলেন, 'টিসিবি কার্ডধারী ও সাধারণ গ্রাহকদের জন্য ২টি আলাদা সারি থাকবে। টিসিবি কার্ডধারীরা অগ্রাধিকার পাবেন।'

তিনি উল্লেখ করেন, একজন কার্ডধারী মাসে সর্বোচ্চ ১০ কেজি চাল কিনতে পারবেন।

২ হাজার ৩৬৩টি ওএমএস কেন্দ্রের মাধ্যমে ৩ মাসে ৩ লাখ ১৫ হাজার টন চাল বিক্রি করা হবে। তবে সপ্তাহান্তে এই বিক্রি বন্ধ থাকবে।

টিসিবি কার্ড নেই, এমন দরিদ্র মানুষরা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন কী না, এ প্রশ্নের জবাবে শাখাওয়াত জানান, যেকোনো ব্যক্তি ওএমএস কেন্দ্র থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেখিয়ে চাল কিনতে পারবেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফুল হাসান জানান, দেশে ১ কোটির চেয়েও বেশি মানুষের কাছে টিসিবির কার্ড আছে।

তিনি বলেন, 'তারা ওএমএস কেন্দ্র থেকে ভর্তুকিসহ ৩০ টাকা কেজি মূল্যে চাল কিনতে পারবেন। পাশাপাশি টিসিবির মাধ্যমে তেল, চিনি, পেঁয়াজ ও ডালের বিক্রি অব্যাহত থাকবে।'

এফএফপির আওতায় ৫০ লাখ বিশেষ কার্ডধারী ব্যক্তি প্রতি মাসে সারা দেশের ১০ হাজার ১১০ জন পাইকারি বিক্রেতার কাছ থেকে ১৫ টাকা কেজি মূল্যে ৩০ কেজি চাল কিনতে পারবেন।

খাদ্য মন্ত্রণালয় এফএফপির জন্য ৩ মাসে সাড়ে ৪ লাখ টন চাল দেবে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
Khaleda Zia calls for unity

‘Seize the moment to anchor democracy’

Urging people to remain united, BNP Chairperson Khaleda Zia has said the country must quickly seize the opportunity to institutionalise the democratic system.

7h ago