অস্ট্রেলিয়ায় পুলিশের অস্ত্র দিয়ে জোড়া খুন : গণমাধ্যমের মুখোমুখি পুলিশ কমিশনার

অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার ল্যামারে কন্ডন এবং নিহত জেসি বেয়ার্ড ও লুক ডেভিস। ছবি: সংগৃহীত
অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার ল্যামারে কন্ডন এবং নিহত জেসি বেয়ার্ড ও লুক ডেভিস। ছবি: সংগৃহীত

গত সপ্তাহে সিডনিতে একজন পুলিশ অফিসার তার সার্ভিস ওয়েপন দিয়ে জোড়া খুন করেছেন। মূলত পুলিশে যোগ দিলে যে অস্ত্র পান কর্মকর্তারা, সেটাকেই সার্ভিস অস্ত্র বা ওয়েপন বলা হয়।

এই ঘটনার জেরে নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের পুলিশ কমিশনার ক্যারেন ওয়েব আগ্নেয়াস্ত্র পরিচালনার প্রোটোকল নিয়ে গণমাধ্যমের প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন। পুলিশের ইস্যু করা এই অস্ত্র হত্যাকাণ্ডের আগে এবং পরের দিনগুলোতে কিভাবে ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া হল সেটাই এখন গণমাধ্যমের আগ্রহের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

গতকাল বুধবার রাতে এবিসি নিউজের সঙ্গে কথা বলার সময় কমিশনারকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তিনি বর্তমানে পুলিশের ইস্যু করা সব আগ্নেয়াস্ত্র কোথায় আছে, সে বিষয়ে কোনো হিসাব দিতে পারবেন কি না।

'এই রাজ্যে ১৮ হাজারের বেশি পুলিশ অফিসার রয়েছেন। আপনি কি জানেন তাদের সব অস্ত্র কোথায়? উপস্থাপক সারাহ ফার্গুসন কমিশনারের কাছে জানতে চান।

ওয়েব এ প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকার করেন। পরিবর্তে বলেন, বর্তমানে নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশের প্রতিটি কমান্ডে অস্ত্র সংরক্ষণের অডিট চলছে। এই অডিট শেষ হতে ছয় সপ্তাহ সময় লাগবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কনস্টেবল ল্যামারে কন্ডন কেন এত দিন কাজের সময়ের বাইরে অস্ত্র রাখতে পেরেছিলেন সেই দাবির বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেননি।  

তিনি জানান, এটি আদালতের কার্যক্রমের অংশ হবে।

অভিযুক্তের বাড়িতে অনুমোদিত আগ্নেয়াস্ত্র ছিল কি না এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কমিশনার জবাব দেন, 'আমি আসলে জানিনা।'

 'স্পষ্টভাবে, কিছু ভুল হয়েছে', যোগ করেন তিনি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার জানান, কর্মকর্তারা তাদের বাড়িতে একটি আগ্নেয়াস্ত্র আনতে পারেন। তবে শর্ত হল, প্রয়োজনীয় অনুমতি থাকতে হবে এবং সেটাকে নিরাপদ রাখতে হবে।

কমিশনার ওয়েব বলেন, 'বাড়িতে বা অফিসারের হোম কমান্ডের বাইরে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার একটি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া রয়েছে।'

তিনি জানান, 'পদ্ধতিটি হল অস্ত্রটি একটি পুলিশ স্টেশনে, হোম পুলিশ স্টেশনে একজন সুপারভাইজারের অ্যাক্সেসের মাধ্যমে সাইন আউট করা হয় এবং অন্য থানায় বা একই থানায় একজন সুপারভাইজারের মাধ্যমে সাইন ইন করা হয়।'

অভিযোগ আছে যে কনস্টেবল ল্যামারে কনডন হত্যাকান্ডের দুই সপ্তাহ আগে তার অস্ত্রটি রিফিল করার জন্য ফায়ারিং রেঞ্জ থেকে চুরি করা গুলি ব্যবহার করেছিলেন, যাতে অস্ত্র ফেরত দেওয়ার সময় উর্ধ্বতনদের সন্দেহ না হয়।

চ্যানেল টেন উপস্থাপক জেসি বেয়ার্ড এবং কান্টাসের ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট লুক ডেভিসের বাড়িতে ভক্তদের শ্রদ্ধাঞ্জলী। ছবিছ এএফপি

অস্ত্রটি শুক্রবার রাতে মিরান্ডা থানা থেকে নেওয়া হয়েছিল এবং খুনের পর সোমবার রাতে বালমাইন থানায় জমা দেয়া হয়েছিল।

অভিযোগ মতে, মঙ্গলবার পিস্তলটি মিরান্ডা থানায় একটি পূর্ণাঙ্গ ম্যাগাজিনসহ ফেরত পাঠানো হয়।  

পুলিশ কমিশনার ক্যারেন ওয়েব আরও জানান, 'অভিযুক্ত হত্যাকারী পুলিশ অফিসার বিউ ল্যামারে কন্ডনকে বরখাস্তের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।'

কমিশনার ওয়েব জানিয়েছেন যে পুলিশে ল্যামারে কন্ডনের ইতিহাস, তার নিয়োগসহ অন্যান্য বিষয়গুলোও তদন্ত করা হচ্ছে।

কমিশনার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আমি আজ তার ফাইলের একটি অংশ পড়েছি।

কনস্টেবল বিউ ল্যামারে কন্ডনকে কারাগারে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে, যা তাকে রাজ্যের পুলিশ বাহিনী থেকে অপসারণের প্রথম পদক্ষেপ।

কমিশনার ওয়েব নিশ্চিত করেছেন যে ডেভিস এবং বেয়ার্ডের মৃত্যুতে তার অভিযুক্ত হবার আগে তাকে 'উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অফিসার' হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল কি না তা তদন্ত করবে পুলিশ।

২০১৯ সালে পুলিশ অফিসার পদে যোগ দেওয়ার আগে ল্যামারে কন্ডন ছিলেন একজন সেলিব্রিটি ব্লগার। তিনি প্রায়ই হলিউডের তারকাদের সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গর্ব করতেন।

কমিশনার ওয়েবকে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে লামারে কন্ডনের পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগে তার সোশ্যাল মিডিয়া কার্যকলাপের বিষয়ে কোনো তদন্ত পরিচালনা করা হয়েছিল কিনা।

জবাবে তিনি বলেছেন যে পুলিশ সাধারণত কিছু কিছু বিষয়ে তাদের মনোভাব দেখতে সোশ্যাল মিডিয়া পরীক্ষা করে।

'তবে ল্যামারে কন্ডনের সামাজিক প্রোফাইল যাভাই করা হয়েছে কি না তা আমি নিশ্চিত করতে পারছি না। এটি তদন্তের অংশ হবে', যোগ করেন তিনি।

পুলিশ অফিসার ল্যামারে কন্ডন গত সপ্তাহে  তার সার্ভিস অস্ত্র দিয়ে চ্যানেল টেন উপস্থাপক জেসি বেয়ার্ড এবং কান্টাসের ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট লুক ডেভিসকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন।

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

2h ago