‘দুঃখের গান’ গেয়ে সবার খুব কাছাকাছি খালিদ

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

শ্রোতাপ্রিয় অনেক কালজয়ী গানের দর্শকনন্দিত কণ্ঠশিল্পী খালিদ। চাইম ব্যান্ডের কণ্ঠশিল্পী হিসেবে প্রথম পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন আশির দশকে। 

পরে তার গাওয়া অন্য গানগুলো অগণিত দর্শকের প্রিয় হয়ে উঠেছিল। সংগীতাঙ্গনে বিষাদ ছড়িয়ে গতকাল সন্ধ্যায় ৫৯ বছর বয়সে বিদায় নিলেন এই শিল্পী। 

খালিদের জন্ম ১৯৬৫ সালের ১ আগস্ট গোপালগঞ্জে। মত্যুর পর সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন তিনি। 

আশির দশকে ৮৩ সালে 'চাইম' ব্যান্ডের সাথে পথচলা শুরু খালিদের। প্রথম আ্যলবাম ব্যান্ডের নামে 'চাইম'। সেখানে তার গান ছিল-নাতি খাতি বেলা গেল, তুমি জানো নারে প্রিয়, কীর্তনখোলা নদীরে আমার, এক ঘরেতে বসত কইরা, ওই চোখ, সাতখানি মন বেজেছি আমরা, আমার জন্য রেখো সহ আরও দুটি ইংরেজি গান। 

অ্যালবামের 'নাতি খাতি' গানটি আশির দশকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। খালিদ উঠে আসেন তরুণদের প্রিয় শিল্পীর তালিকায়। 

চাইম ব্যান্ডের গান শুধু নয় খালিদের একক গানগুলোও দর্শকনন্দিত হয়েছে। সেই গানগুলো পাড়া-মহল্লার শ্রোতাদের মুখে মুখে থাকত, বাজত বিপণি বিতানসহ দোকানে-দোকানে । 

তার গাওয়া গানের বেশিরভাগ লিখেছেন ও সুর করেছেন প্রিন্স মাহমুদ। এই জুটির সৃষ্টি অনবদ্য গানগুলো শ্রোতাদের মোহিত করে রাখতো। 

ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু, জেমস, মাকসুদ, শাফিন আহমদের পাশাপাশি মিক্সড অ্যালবামে খালিদের গান আলাদা একটা ভূমিকা রাখত। শ্রোতারা তার মায়াময় গানের কারণে অ্যালবাম সংগ্রহ করত। 

খালিদ ও প্রিন্স মাহমুদের অনবদ্য জুটির আবার দেখা হবে এখনই শেষ দেখা নয়, যদি হিমালয় হয়ে কিংবা লতিফুল ইসলাম শিবলীর লেখা প্রিন্স মাহমুদের সুরে যতোটা মেঘ হলে বৃষ্টি নামে, হয়নি যাবার বেলা, ঘুমাও গানগুলো শ্রোতারা দীর্ঘকাল মনে রাখবেন। 

অন্যদের গানের মধ্যে তরুণ মুন্সীর লেখা জুয়েল বাবুর সুরে খালিদের কণ্ঠে  'সরলতার প্রতিমা' কিংবা তানভীর তারেকের সুরে 'আকাশটাকে' বা 'ওগো বৃষ্টি' গানগুলো শ্রোতাদের মধ্যে বেঁচে থাকবে যুগযুগ ধরে। 

খালিদের চলে যাওয়া প্রসঙ্গে কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তার চলে যাওয়া বিশ্বাসই করতে পারছিনা। প্রিয় মুখ ভেসে উঠলেই কষ্ট হচ্ছে খুব। আমার সঙ্গে দেখা হলেই অনেক কথা বলত। আমাদের কলাবাগান বাসার পাশেই ছিল তার বাসা। গান নিয়ে আড্ডা হতো। নতুন গানের বিষয়ে মতামত চাইত।'

ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, 'বড়দের অনেক সম্মান করতেন খালিদ। দারুণ দারুণ গান গেয়েছে। মায়াভরা গানের গলা। তার সবকটি গানই শ্রোতারা পছন্দ করেছে। গানের মধ্য দিয়েই বেঁচে থাকবেন তিনি।'

খালিদের সহপাঠী ও কণ্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি আর খালিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগে একসঙ্গে পড়তাম। গানেও আমাদের পথচলা একইসময়ে। দুজনের বেশ কয়েকটা দ্বৈত গান রয়েছে। গানগুলো শ্রোতারা পছন্দ করেছে। তার মধ্যে প্রিন্স মাহমুদের কথা ও সুরে 'ঘুমাও তুমি ঘুমাও রে জান', তানভীর তারেকের সুরে 'আকাশটাকে' 'ওগো বৃষ্টি' গান।'

তিনি আরও বলেন, 'খালিদ খুব প্রাণবন্ত একজন মানুষ ছিল, কিন্তু গাইত দুঃখের গান। দুঃখের গান দিয়ে খুব সহজেই মানুষের কাছাকাছি যাওয়া যায়। সে কারণে মানুষের খুব কাছাকাছি ছিল খালিদ।'

'খালিদের মৃত্যু আমাদের সংগীতের জন্য বড় ক্ষতি' মন্তব্য করে ফাহমিদা নবী বলেন, 'এটা আমরা পরে বুঝতে পারবে। আমাদের শিল্পীদের বলতে চাই, নিজের যত্ন নিতে হবে, ভালোবাসা লাগবে। সাদি ভাই, খালিদের মৃত্যু আমাকে এটাই বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে। তাই ভালো থাকতে, আনন্দে বাঁচতে হবে।' 

কণ্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরী বলেন, 'এখন খালিদের গানগুলো বেশি বেশি প্রচার করতে হবে। তা না হলে আগামী প্রজন্মের শ্রোতারা ভুলে যাবে। এটা হতে দেওয়া উচিত না। এসব প্রচারে গণমাধ্যমের একটা ভালো ভূমিকা রাখতে হবে। এমন হলে কিছুদিন পর আবার আমরা এমন একজন শিল্পীকে ভুলে যাব। এটা হতে দেওয়া উচিত না। অগণিত গানের মধ্য দিয়ে খালিদ বেঁচে থাকবেন আশা করি।' 

অবসকিওর ব্যান্ডের টিপু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খালিদ ভাইয়ের সঙ্গে আমার অনেক অনেক স্মৃতি। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি। ১৯৮৪ সালে চাইম ব্যান্ডে আমরা গান করতাম। খালিদ ভাই বাংলা গান গাইতেন, আমি গাইতাম ইংরেজি গান। সেই উত্তাল দিনের কথা বারবার মনে হচ্ছে। আমার যে কজন পছন্দের শিল্পী তাদের মধ্যে প্রথমদিকে থাকবেন তিনি। খুব পছন্দ করতাম তাকে। কিছুদিন আগে বিটিভির একটা গানের অনুষ্ঠানের শুটিংয়ে দেখা, বলেছিলাম খালিদ ভাই আপনার সঙ্গে আমার কোনো ছবি নাই। সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেলেন। প্রিয় মানুষের বিদায় মেনে নিতে কষ্ট হয়।' 

Comments

The Daily Star  | English
remittance earning of Bangladesh

Bangladesh’s forex reserves cross $25b again

However, as per BB’s calculation, the figure stands at $30.07 billion

3h ago