অসহনীয় গরম

এসির উৎপাদন বাড়াচ্ছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান

প্রতীকী ছবি | সংগৃহীত

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অসহনীয় গরম থেকে গ্রাহকরা স্বস্তি চাচ্ছেন। তাদের চাহিদা মেটাতে দেশে এসির উত্পাদন ও সংযোজন বেড়েছে।

ফলে এসির দাম অনেক কমেছে। এটি আরও বেশি গ্রাহকের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনার চেষ্টা চলছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এসি বিক্রি তাত্পর্যপূর্ণভাবে বেড়েছে। তাদের দাবি, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এখন দেশে এসির চাহিদার ৮৫ শতাংশেরও বেশি পূরণ করছে।

এসি বিক্রির সঠিক তথ্য নেই। নির্মাতা ও খুচরা বিক্রেতাদের ধারণা, ২০২৩ সালে পাঁচ লাখ ৩০ হাজার এসি বিক্রি হয়েছিল। ২০২২ সালে তা ছিল তিন লাখ ৩০ হাজার।

তারা বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, এসির কম দাম ও দক্ষ শ্রম-প্রযুক্তিকে এই প্রবৃদ্ধির পেছনের কারণ বলে মনে করছেন।

চলতি গ্রীষ্মেও গরম ক্রমশ অসহনীয় হয়ে উঠছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, এসির দাম এখন তুলনামূলক কম হওয়ার কারণ বেশিরভাগ যন্ত্রাংশ স্থানীয়ভাবে তৈরি হচ্ছে।

প্রধান সার্কিট ও কম্প্রেসর বাদ দিয়ে প্লাস্টিকের ফ্রেম ও কপার ক্যাবলের মতো উপাদান দেশে তৈরি হয়। এসির ভেতরের তার স্থানীয় নির্মাতারা সরবরাহ করেন।

তবে কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশে প্রায় ২০টি স্থানীয় ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এসি উৎপাদন ও সংযোজন করে।

সিঙ্গার বাংলাদেশের হেড অব প্রোডাক্ট সৈয়দ সাব্বির জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০১৫ সালের আগে বাংলাদেশে এসিকে বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হতো। এরপর মধ্যম আয়ের মানুষরা এটি কিনতে শুরু করেন।'

২০১৫ সালের আগে এসি আমদানি করা হলেও দেশে সীমিত আকারে সংযোজন করা হতো।

রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা রিফাত জাহান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর এই সময়ে তাপমাত্রা অসহনীয় মনে হওয়ায় এসি কিনি।'

জামালপুরে তার আত্মীয়রাও এসি কিনেছেন বলে জানান এই গৃহবধূ।

দেশীয় উৎপাদন উৎসাহিত করতে আমদানি শুল্ক ও কর অবকাশ উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোয় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো যন্ত্রাংশ আমদানি ও এসি সংযোজন শুরু করে। ফলে বাজার দ্রুত বাড়তে থাকে।

২০২০ সালের পর ওয়ালটন, মিনিস্টার, যমুনা ও ভিশনের মতো দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এসি সংযোজন ও উৎপাদনে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে।

সৈয়দ সাব্বির জামান বলেন, 'সরকার দেশীয় এসি প্রস্তুতকারকদের কর সুবিধা দেওয়ায় তারা বড় পরিসরে বাজারে এসেছে।'

২০০৪ সালে প্রথম দেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেড চীনের হোম অ্যাপ্লায়েন্স প্রস্তুতকারক গ্রি'র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আমদানি করা প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ দিয়ে এসি সংযোজন শুরু করে।

'সে সময় এসির সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ৩০ হাজার' উল্লেখ করে ইলেক্ট্রো মার্টের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আফসার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাজারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আমরা সংযোজক থেকে প্রস্তুতকারক হিসেবে বিকশিত হয়েছি।'

আরও পরিবেশবান্ধব ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এসি তৈরির লক্ষ্যে ২০২০ সালে পূর্ণাঙ্গ উৎপাদন কারখানা স্থাপন করে ইলেক্ট্রো মার্ট। বর্তমানে, এটি আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য ৮০টি মডেল তৈরি করছে।

প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি বছর তিন লাখ ইউনিটে দাঁড়িয়েছে।

চীনা প্রতিষ্ঠান মাইডিয়ার পণ্য প্রস্তুত ও বিক্রয়কারী এলিট এসির ব্র্যান্ড ম্যানেজার মোজতবা নাদিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি ও দ্রুত নগরায়ণের ফলে এসির চাহিদা বেড়েছে।'

'ক্রমবর্ধমান চাহিদা এসির উত্পাদন ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগকারীদের উত্সাহিত করেছে।'

তার মতে, এসির প্রযুক্তি, গুণগত মান ও দক্ষতায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। এটি দেশে-বিদেশে আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠেছে।

দেশের অন্যতম বৃহৎ এসি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের বার্ষিক উৎপাদন দুই লাখ।

যমুনা ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড অটোমোবাইলস লিমিটেডের পরিচালক (বিপণন) সেলিম উল্লাহ সেলিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও বিকাশের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো গবেষণা ও উন্নয়নে ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ করছে। এ ধরনের উদ্যোগের ফলে এমন এসি উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে যা বিদ্যুৎ খরচ ও দূষণ কমায়।'

তিনি প্রণোদনা ও ভর্তুকি এবং উৎপাদন ও প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে এই খাত বিকাশে সরকারকে কৃতিত্ব দেন।

তিনি জানান, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক মান মেনে চলছে। এটি ক্রেতাদের আস্থা বাড়াচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Central bank at odds with BPO over Nagad’s future

The discord became apparent after Faiz Ahmed Taiyeb, special assistant to the chief adviser with authority over the Ministry of Posts, Telecommunications and IT, sent a letter to the BB governor on May 12 and posted the letter to his Facebook account recently

5h ago