মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন

‘২০২৩ সালে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নেই’

department of state logo

২০২৩ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রম ব্যুরো আজ মঙ্গলবার দিনের শুরুতে 'কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাক্টিসেস ফর ২০২৩' শীর্ষক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাব ও এই বাহিনীর বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছরের মে মাসে দেশটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে যারা অবমাননা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রম ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রবার্ট এস গিলক্রিস্ট ব্রিফিংয়ে জানান, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বিদ্যমান মৌলিক মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ অব্যাহত রাখবে, যার মধ্যে আছে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সংগঠনের স্বাধীনতা। একইসঙ্গে সরকারকে এই অধিকারগুলোকে সমুন্নত রাখতে হবে বলেও জানান তিনি। 

প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোর মধ্যে আছে নির্বিচার, বেআইনি ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতন অথবা সরকারের পক্ষ থেকে নির্মম, অমানবিক ও অবমাননাকর আচরণ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, কারাগারে কঠোর ও জীবনের ওপর হুমকি আসতে পারে এমন পরিস্থিতি।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে আরও আছে নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক, বিচারবিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে গুরুতর সমস্যা, রাজনৈতিক কারণে বন্দি, অন্য দেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিপীড়ন, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ওপর নির্বিচার ও বেআইনি হস্তক্ষেপ এবং কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আসলে তার আত্মীয়দের শাস্তি দেওয়ার প্রবণতা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, 'এমন তথ্য পাওয়া গেছে যে, সরকার অথবা সরকারের প্রতিনিধিরা নির্বিচারে ও বেআইনিভাবে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন, যার মধ্যে আছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে। পেশাদারী মানদণ্ড মেনে তৈরি করা ইউনিটের বিরুদ্ধেই মূলত এ ধরনের অভিযোগ। কিছু পদক্ষেপে মানুষ গুরুতর শারীরিক আঘাতের শিকার হয়েছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা মারাও গেছেন। পুলিশের নীতিমালা অনুযায়ী এ ধরনের সব ঘটনার অভ্যন্তরীণ তদন্ত হওয়া আবশ্যক ছিল।'

তবে সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হাতে নিহত মানুষের সংখ্যার কোনো আনুষ্ঠানিক হিসাব প্রকাশ করেনি বা এসব অভিযোগের তদন্ত করার কোনো স্বচ্ছ উদ্যোগও হাতে নেয়নি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মানবাধিকার সংস্থাগুলো এসব ঘটনা নিরীক্ষার কাজে নিয়োজিত ইউনিটগুলোর স্বাধীনতা ও পেশাদারী মান সম্পর্কে সন্দিহান। অল্প কয়েকটি ঘটনার ক্ষেত্রে সরকার অভিযোগ এনেছে, কিন্তু সেসব ক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণ হলেও তারা শুধু প্রশাসনিক শাস্তি পেয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা আগের বছরের চেয়ে কমেছে। স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে হেফাজতে থাকা অবস্থায় ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন আট ব্যক্তি, যার মধ্যে দুজন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে গোলাগুলির সময় এবং তিনজন হেফাজতে থাকাকালে বা তার আগে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন।

অপর এক স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থার মতে, জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১২টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। চারজন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার ক্রসফায়ারে, চারজন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের গুলিতে ও অপর চারজন হেফাজতে থাকার সময় নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অনেক মানুষকে গুম করেছে সরকার অথবা সরকারি কর্তৃপক্ষ। মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যম জানিয়েছে, গুম ও অপহরণ অব্যাহত রয়েছে এবং এর জন্য দায়ী নিরাপত্তা সেবাদাতারা। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে মোট ৩২ জন মানুষ গুম হয়েছেন বলে জানিয়েছে একটি স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা।

মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় গুরুতর আকারে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অথবা সহিংসতার হুমকি, অন্যায্য কারণে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন, সেন্সরশিপ ও মতপ্রকাশকে সীমিত রাখতে ফৌজদারি মামলা দায়ের অথবা দায়ের করার হুমকি।

ইন্টারনেটে স্বাধীন মতপ্রকাশে রয়েছে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা। শান্তিপূর্ণ গণজমায়েত ও দল গঠনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে আছে বেসরকারি ও সামাজিক সংগঠন তৈরি, অর্থায়ন ও পরিচালনা সীমিত করার জন্য আইন, চলাচলের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় সরকার পরিবর্তনে নাগরিকদের বাধা দেওয়া।

এ ছাড়া, রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণে গুরুতর ও অযৌক্তিক বিধিনিষেধ, সরকারে গুরুতর দুর্নীতির প্রবণতা, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার কার্যক্রম পরিচালনায় গুরুতর সরকারি বিধিনিষেধ ও এদের হেনস্তা করার প্রবণতা।

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জবাবদিহি না থাকার অসংখ্য ঘটনার কথা জানা গেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কর্মকর্তা অথবা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের চিহ্নিত করতে ও শাস্তি দিতে বিশ্বাসযোগ্য উদ্যোগ নেয়নি।

Comments

The Daily Star  | English
Prof Yunus in Time magazine's 100 list 2025

Prof Yunus named among Time’s 100 Most Influential People of 2025

A tribute article on Prof Yunus was written by Hillary Clinton for the magazine

3h ago