চোখের নীরব ঘাতক গ্লুকোমার লক্ষণ ও কারণ, প্রতিরোধে কী করবেন

গ্লুকোমা
ছবি: সংগৃহীত

গ্লুকোমা চোখের এমন একটি রোগ, যার কারণে চিরতরে দৃষ্টি হারাতে পারেন। গ্লুকোমা সম্পর্কে জেনে নিন ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. সাউদ আল ফয়সাল ইমনের কাছ থেকে।

গ্লুকোমা কী ও কেন হয়

ডা. ফয়সাল ইমন বলেন, মানুষের শরীরে যেমন ব্লাড প্রেশার বা রক্তচাপ থাকে, ঠিক তেমনি চোখেরও প্রেশার আছে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের ব্লাড প্রেশার যেমন থাকে ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি, তেমনি সাধারণত চোখের ভেতরের প্রেশার ১০ থেকে ২১ মিলিমিটার অব মার্কারি। এই প্রেশার যখন ২১ মিলিমিটারের উপরে চলে যায় তখন চোখের ভেতরে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত চাপ যখন চোখের ভেতরের অপটিক নার্ভে চাপ দেয় তখন তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে আস্তে আস্তে।

এর ফলে চোখে কম দেখা শুরু হয় এবং প্রেশারের কারণে অপটিক নার্ভ যত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তত ধীরে ধীরে অন্ধত্বের দিকে চলে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে। এই সমস্যাটিই হচ্ছে গ্লুকোমা।

৪০ বছর বয়সের পর থেকেই গ্লুকোমা হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এ ছাড়া যাদের ডায়াবেটিস আছে এবং পরিবারে কারো গ্লুকোমা আছে তাদের গ্লুকোমা হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

গ্লুকোমার ধরন

ডা. ফয়সাল ইমন বলেন, গ্লুকোমা কয়েক ধরনের হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো প্রাইমারি ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা ও অ্যাঙ্গেল ক্লোজার গ্লুকোমা। এ ছাড়া সেকেন্ডারি গ্লুকোমা আছে এবং বাচ্চাদের এক ধরনের গ্লুকোমা হয় জন্মের সময় থেকে।

প্রাইমারি ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা

ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোম বেশি ক্ষতিকর। কারণ এর লক্ষণ খুব একটা পাওয়া যায় না। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছে চোখ দেখাতে গেলে চোখের প্রেশার মাপার পর হয়তো এটি ধরা পড়ে। বেশিরভাগ সময় দেখা যায় নার্ভগুলো যখন অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে, তখন ওপেন অ্যাঙ্গেল গ্লুকোমা ধরা পড়ে। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। চোখে ছানি পড়লে অপারেশনের মাধ্যমে অনেকাংশেই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব, কিন্তু গ্লুকোমায় যে ক্ষতি হয় সেটা ঠিক করা যায় না। তবে তখন চিকিৎসার মাধ্যমে ক্ষতির অগ্রগতি বন্ধ করা হয়, যাতে চোখ আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

অ্যাঙ্গেল ক্লোজার গ্লুকোমা

অ্যাঙ্গেল ক্লোজার গ্লুকোমা ধীরে ধীরে বা হঠাৎ করে হতে পারে। অ্যাঙ্গেল ক্লোজার গ্লুকোমা হলে চোখে ব্যথা হতে পারে, চোখ লাল হয়ে যায়, বমি হয়।

সেকেন্ডারি গ্লুকোমা

সেকেন্ডারি গ্লুকোমা সাধারণত চোখের কোনো রোগ থেকে হয়। যেমন- চোখে চুলকানি বা বিভিন্ন সমস্যায় অতি মাত্রায় স্টেরয়েড ওষুধ ব্যবহারে সেকেন্ডারি গ্লুকোমা হতে পারে। অতিরিক্ত ট্রমা থেকেও হতে পারে, ছানি অপারেশন বা চিকিৎসা না করলে সেখান থেকে গ্লুকোমা হতে পারে।

শিশুদের গ্লুকোমা

জন্মের পর অনেক বাচ্চার গ্লুকোমা হয়। মায়ের কোনো ইনফেকশন থাকলে জন্মের পর শিশুর গ্লুকোমা হতে পারে। তাদের কর্নিয়ার আকার একটু বড় থাকে, কর্নিয়ার রং ঘোলা হয়ে যায়, শব্দ করলে যেদিকে তাকানোর কথা সেদিকে তাকায় না বা মনোযোগ দিতে পারে না ।

গ্লুকোমার লক্ষণ ও চিকিৎসা

ডা. ফয়সাল ইমন বলেন, হঠাৎ করেই গ্লুকোমার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন-

১. চোখে কম দেখা।

২. চোখ হঠাৎ করে লাল হয়ে যাওয়া।

৩. প্রচণ্ড মাথা ব্যথা।

৪. চোখ ব্যথা।

৫. চোখে পানি পড়া।

৬. ঝাপসা দেখা।

৭. বমি বমি ভাব ও বমি।

এসব লক্ষণ থাকলে এবং চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ (আইওপি) মাপার পর যদি দেখা যায় চোখের প্রেশার বেশি, তাহলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে গ্লুকোমা শনাক্ত করতে হবে।

গ্লুকোমা হলে তিন ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়। যেমন- চোখের ড্রপ, লেজার সার্জারি, সার্জারি।

প্রথমে চোখের ড্রপ দিয়ে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা শুরু করা হয়। একটা ড্রপ দেওয়ার পরও যদি চোখের প্রেশার না কমে তাহলে দুই বা তিনটি ড্রপ দেওয়া হয়। তাতেও যদি না কমে তাহলে লেজার সার্জারি প্রয়োজনে সার্জারি করতে হবে।

এই চিকিৎসার মাধ্যমে গ্লুকোমা প্রতিরোধ করা যায় না। তবে অপটিক স্নায়ু যাতে আরও খারাপ না হয় সেটি নিশ্চিত করা যায়। অন্ধত্ব ঠেকানো সম্ভব যদি সঠিক সময়ে গ্লুকোমা শনাক্ত করে চিকিৎসা দেওয়া যায়।

গ্লুকোমা প্রতিরোধ

ডা. ফয়সাল ইমন বলেন, গ্লুকোমা নীরব ঘাতক। গ্লুকোমা প্রতিরোধে ৪০ বছর বয়সের পর সবাইকে বছরে একবার করে চোখের পরীক্ষা করাতে হবে। যত দ্রুত গ্লুকোমা শনাক্ত হবে তত ভালো। দেরিতে শনাক্ত হলে অপটিক নার্ভের ক্ষতির পরিমাণ বেশি হবে এবং দৃষ্টি হারানোর ঝুঁকি বাড়বে।

বই পড়া, অতিরিক্ত টেলিভিশন, মোবাইল, ল্যাপটপ দেখার সঙ্গে চোখের প্রেশার বাড়ার কোনো সম্পর্ক নেই। চোখের ভেতরে তরল পদার্থ আছে, সেটার সার্কুলেশনের কারণে চোখের প্রেশার বাড়ে। সার্কুলেশন যখন শরীরের ভেতরে যেতে না পেরে চোখের ভেতর জমে যায় বা জমতে থাকে, তখন চোখের ভেতরে চাপ বাড়ে। গ্লুকোমা প্রতিরোধে গ্লুকোমা সম্পর্কে জানতে হবে এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

6h ago