তীব্র গরমে সুস্থ থাকতে করণীয়

গরমে সুস্থ থাকতে করণীয়
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের একটি পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে গরমে অতিষ্ঠ দুরন্ত শিশুর দল। ছবি: স্টার

এপ্রিল মাসজুড়ে সারাদেশে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এই তীব্র গরমে সুস্থ থাকার উপায় সম্পর্কে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবেদ হোসেন খান

 

তীব্র গরমে যেসব শারীরিক সমস্যা হতে পারে

ডা. আবেদ হোসেন বলেন, অসহনীয় গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এ সময় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি হচ্ছে হিট স্ট্রোকের। পরিবারের বয়স্ক, অসুস্থ সদস্য এবং শিশুরা থাকেন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। হিট স্ট্রোকের মূল কারণ পানিশূন্যতা। বয়স্ক, অসুস্থ এবং শিশুরা অনেক সময়ই এটা অনুধাবন করতে পারে না। তাই তাদের দিকে বাড়তি নজর রাখতে হবে।

পাশাপাশি, গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। এ ছাড়াও প্রচণ্ড গরমে জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টের রোগ, নিউমোনিয়া, পানিবাহিত টাইফয়েড ও জন্ডিস এবং চর্ম রোগ বা ফুসকুাড়র প্রকোপ অনেক বেড়ে যায়।

হিট স্ট্রোকের লক্ষণ ও চিকিৎসা

ডা. আবেদ হোসেন বলেন, অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেলে তাকে হিট স্ট্রোক বলা হয়। এর ফলে ঘাম বন্ধ হয়ে গিয়ে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়তে শুরু করে।

হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে মাথা ব্যথা ও মাথা ঘোরা এবং চোখে ঝাপসা দেখতে পারেন ব্যক্তি । অস্বাভাবিক দুর্বলতা, মাংসে টান ও বমি অনুভব হয়। শেষ পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং খিঁচুনি হতে পারে।

প্রাথমিকভাবে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে গিয়ে শরীর থেকে যতটুকু সম্ভব কাপড় খুলে ফেলতে হবে। ফ্যান বা এসির ব্যবস্থা থাকলে দ্রুত তা চালু করতে হবে। না হলে হাত পাখা দিয়ে রোগীর শরীরে বাতাস করতে হবে। ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীর মুছতে হবে। অতি দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে রোগীকে।

তীব্র গরমে সুস্থ থাকার উপায়

ডা. আবেদ হোসেন বলেন, তীব্র গরমে বিশেষত শিশু ও কিশোর, বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষ এবং খেটে খাওয়া শ্রমিক ও মজুরদের কষ্ট ও ঝুঁকি বেশি। কর্মজীবী, শিক্ষার্থীসহ যাদের বাইরে যেতে হয় এবং যারা ঘরে থাকেন তাদের কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। যেমন-

১. বাইরে বের হওয়ার সময় ছাতা বা ক্যাপ ব্যবহার করতে হবে।

২. শরীরে পানিশূন্যতা এড়াতে অতিরিক্ত পানি ও শরবত পান করতে হবে এবং বাইরে বের হওয়ার সময় পানি, শরবত বা স্যালাইনের বোতল বহন করতে হবে।

৩. সরাসরি রোদ এড়িয়ে ছায়াযুক্ত স্থান দিয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।

৪. ভারি ও কালো কাপড় বাদ দিয়ে হালকা রং ও পাতলা কাপড় পরতে হবে।

৫. ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সানস্ক্রিন এবং প্রয়োজনে সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে।

৬. খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া যাবে না। বিশেষত যারা হৃদরোগ, লিভার ও কিডনির স্থায়ী রোগে ভুগছেন তাদের।

৭. সকাল ১১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত সময় তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে। তাই এই সময়ে বাইরের কাজ কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে।

৮. শ্রমিক ও রিকশাচালকদের মাথায় ক্যাপ কিংবা কাপড় ব্যবহার করতে হবে।

৯. একটানা কেউ রোদে কাজ করবেন না। কাজের মধ্যে কিছু সময় পরপর ছায়াযুক্ত জায়গায় বিশ্রাম নিতে হবে।

১০. বারবার মুখ ও শরীরে পানির ঝাপটা দিতে হবে, বারে বারে পানি পান করতে হবে। হালকা লবণ মিশ্রিত পানি কিংবা স্যালাইন এক্ষেত্রে সবচেয়ে উপকারী।

১১. রাস্তা ও ফুটপাতের অপরিষ্কার ও নোংরা পরিবেশে তৈরি শরবত, চা বা অন্যান্য খাবার খাওয়া পরিহার করতে হবে।

১২. যাদের দিনে আউটডোর ব্যায়ামের অভ্যাস আছে তারা সময় পরিবর্তন করে সন্ধ্যা বা রাতে করতে পারেন।

১৩. শরীরের তাপমাত্রা কমাতে প্রতিদিন গোসলের অভ্যাস করতে হবে।

১৫. প্রচুর পানি ও লবণ আছে এমন খাবার বিশেষত তরমুজ, ডাব, পাকা কলা, শসা, স্ট্রবেরি এসব ফল খেতে হবে। যথেষ্ট বিশ্রাম নিতে হবে।

তীব্র গরমে কী ধরনের খাবার খাবেন

  • গরমের সময় ঘামের কারণে শরীর থেকে যে লবণ-পানি বের হয়ে যায় তার ঘাটতি পূরণের জন্য অতিরিক্ত তরল পান করতে হবে। তাই গ্রীষ্মকালীন ফল দিয়ে তৈরি তাজা জুস, ডাবের পানি, লবণ- চিনির শরবত, স্যালাইনের পানি বারে বারে খেতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে প্রস্রাবের গাঢ় রং পানি স্বল্পতার লক্ষণ।
  • ঝিঙে, চালকুমড়া, লাউ, চিচিঙ্গা, শজনেডাঁটা পাতলা ঝোল রান্না করে খেলে শরীরে গরম কম অনুভূত হবে ও পেট ভালো থাকবে।
  • কাঁচা আমের শরবত খেতে পারেন। এতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। পাকস্থলী সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন টক দইয়ের শরবত বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া শিশু ও রোগীরা পাতলা করে সবজি স্যুপ খেলে তা শরীরের জন্য উপকারী।

তীব্র গরমে কী ধরনের খাবার খাবেন না

ডা. আবেদ হোসেন বলেন, কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গরম অনুভূত হতে পারে। যেমন-

১. মশলাজাতীয় খাবার, ফুচকা, চটপটি, ফাস্টফুড, ডুবো তেলে ভাজা খাবার, তেল-চর্বি জাতীয় খাবার, পোলাও, বিরিয়ানি, তেহারি, স্টেক এসব খাবার শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে বদহজম করতে পারে।

২. চা বা কফির ক্যাফেইন দেহকে পানিশূন্য করে ফেলে এবং শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে।

৩. গরমের সময় দুগ্ধ জাতীয় খাবার দ্রুত নষ্ট হয় এবং ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বৃদ্ধি হয়।

৪. আইসক্রিম ও কোমল পানীয় খেলে শরীরে ঠান্ডা অনুভূত হয় সত্যি, কিন্তু এসব খাবারে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই এসব পরিহার করাই ভালো।

৫. অতিরিক্ত চিনি ও লবণ এ দুটি জিনিস এমনিতেই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই এসব খাওয়া সীমিত রাখতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English
road accidents death in Bangladesh April

Road accidents killed 583 in April: Jatri Kalyan Samity

Bangladesh Jatri Kalyan Samity (BJKS), a passenger welfare platform, said that a total of 583 people were killed and 1,202 injured in 567 road accidents across the country in the month of April, citing media reports

1h ago