সুন্দরবনের আগুন পুরোপুরি নেভাতে আরও ২-৩ দিন লাগবে: প্রধান বন সংরক্ষক

সংবাদ সম্মেলন। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

আগুনে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিরূপণে উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী।

রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, সাত সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটির প্রধান থাকবেন খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে। এ ছাড়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট অ্যান্ড উড ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃত সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তাসহ অন্যান্যরা থাকবেন। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তারা ওই প্রতিবেদন সুপারিশসহ জমা দিবেন। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তীতে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে প্রাথমিকভাবে অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে বনভূমির পাঁচ একর জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।

কী কারণে আগুন লেগেছে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান বন সংরক্ষক বলেন, আমরা কোনো সন্দেহ উড়িয়ে দিচ্ছি না। মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে মৌয়ালদের মাধ্যমে আগুন ছড়াতে পারে। মাছ ধরতে গিয়ে ইচ্ছা করে কেউ আগুন দিয়েছে কি না, সেটাও উড়িয়ে দিচ্ছি না। এমনকি বনের মধ্যে গিয়ে কেউ সিগারেট খাওয়ার ফলে আগুন লেগেছে কি না, সেটাকেও উড়িয়ে দিচ্ছি না। অথবা এক্সিডেন্টলি কারো হাত থেকে আগুন পড়ে, আগুন লেগেছে কি না তাও উড়িয়ে দিচ্ছি না। সবগুলো মাথায় নিয়েই কাজ করা হচ্ছে। এর আগে সর্বশেষ ২০২১ সালে সেখানে আগুন লেগেছিল। ওই ঘটনার ফলে আমরা স্থানীয় মোড়লগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলাম। অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল সেই মামলায় তাদের শাস্তি হয়েছে।

আগুন পরিপূর্ণভাবে নির্বাপণ করতে আরও দুই থেকে তিন দিন সময় লাগবে জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আমি প্রায় এক ঘণ্টা বনের মধ্যে আগুন লাগার স্থান পরিদর্শন করেছি। তবে কোথাও মাটির উপরে আগুন দেখতে পাইনি। ওই এলাকায় যেহেতু প্রচুর পরিমাণে শুকনাপাতা ও পাতার নিচে হিউমাস রয়েছে। হিউমাসের মধ্যে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে আগুনের কুণ্ডলি থাকতে পারে এবং যেকোনো সময় সেখান থেকে আগুনের শিখা বেরিয়ে শুকনো পাতার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই রাতের বেলায় হিউমাসের মধ্যে পানির ছিটানোর জন্য দুই স্টেশনের ২০ জন বনকর্মীকে নিযুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে রাত ৯টা থেকে তারা কাজ শুরু করেছে।

বনের আগুন নেভাতে সরকারের একাধিক সংস্থা কাজ করছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আজকে বন বিভাগের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ, ইউনিয়ন পরিষদ, ভিটিআরটির প্রশিক্ষণরত সদস্য ও স্থানীয় জনসাধারণ একত্রে বনের আগুন নেভাতে কাজ করেছে। আগামীকালকেও তারা একইভাবে আগুন নিভাতে কাজ শুরু করবে।

ওই এলাকায় বারবার আগুন লাগার কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, ৪০ থেকে ৫০ বছর আগ থেকে ওই এলাকাটা বেশি উঁচু হয়ে গেছে। সেখানের নদী-খালগুলো মরে যাওয়ায় কোনো জোয়ার-ভাটা হয় না। যার ফলে ম্যানগ্রোভ বনভূমিতে যে বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার, ওই এলাকার বনভূমিতে তা নেই। শুধুমাত্র বর্ষা মৌসুমে ওই এলাকার ভূমি কিছু পানি পায়। আর সারা বছর গাছের পাতা পড়ে প্রচুর হিউমাস তৈরি হয়। ফলে চৈত্র-বৈশাখ মাসে শুষ্ক মৌসুমে সেখানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।

ভবিষ্যতে সেখানে অগ্নিঝুঁকি কমাতে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে আমীর হোসাইন বলেন, বনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ওই এলাকায় ভবিষ্যতে একটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। টাওয়ার নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত ড্রোনের মাধ্যমে এলাকাটি মনিটরিংয়ে রাখা হবে। সেখানে বেশ কিছু বলা গাছ রয়েছে, যার ফলে বন কর্মীরা সহজে চলাচল করতে পারে না। তবে ড্রোনের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে সহজে বিস্তীর্ণ এলাকার মনিটরিং করা যাবে।

Comments

The Daily Star  | English

MPO teachers take to the streets, demanding a 45% house rent allowance

By 10:00am, thousands of teachers had packed the press club area, blocking one side of the busy road

35m ago